পার্থ হাসান,পাবনা:
পাবনায় চতুর্থ ধাপের ইউপি নির্বাচনে গয়েশপুর ইউনিয়নে সতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন দ্রæত বিচার ট্রাইব্যুনালের হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মুতাহার হোসেন মুতাই। অভিযোগ রয়েছে ১৯৯৮ সালের ওই এলাকার মোঃ সাইদুর রহমানের বড় ছেলে মোঃ মোফাজ্জল হোসেন ঝন্টু হত্যা মামলার এজাহাভুক্ত ও সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী তিনি। এই ঘটনায় গয়েশপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মোঃ মোজাহার মন্ডলের ছেলে মোঃ সুজ্জাতুল ইসলাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বরাবর সতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর প্রার্থীতা বাতিলের জন্য জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে আপীল মোকাদ্দমা করেছেন বলে জানা গেছে।
মামলা ও অভিযোগের তথ্য সূত্রে জানাযায়, উক্ত চেয়ারম্যান মুতাহার হোসেন মুতাই দ্রæত বিচার ট্রাইবুনাল মামলা নং ২/২০০৬ যাহা দায়রা মামলা নং ৭৪/২০০৫ জিআর মামলা নং ৩৩৯/৯৮। ১৯৯৮ সালে ২১ জুল ভিকটিমের পিতা নিজে বাদী হয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পাবনা থানার মামলা নং-৪০। এই মামলায় ধারা ৩০২/৩৪ দঃ বিঃ মোকাদম্মায় যাবৎ জীবন সশ্রম কারাদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামী বর্তমান চেয়ারম্যান মুতাই। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, একজন যাবৎ জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দি হতে পারে না। যাহা নির্বাচনী আইন অনুযায়ী সুযোগ না থাকলেও উক্ত পলাতক আসামী মুতাহার হোসেন মুতাই আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে গয়েশপুর ইউনিয়ন থেকে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে সতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন বলে অভিযোগ করেন।
মামলা সূত্রে জানাযায়, ১৯৯৮ সালের জুন মাসের ২১ তারিখে দিবাগত রাতে পাবনা জেলার গয়েশপুর রথখোলা পাড়ায় মোঃ আসকর আলী মোল্লার বাড়ির দক্ষিণ দুয়ারী ছাপড়া ঘরের দরজার খিল ভেঙ্গে প্রবেশ করে মোঃ সাইদুর রহমানের বড় ছেলে ভিকটিম মোঃ মোফাজ্জল হোসেন ঝন্টুকে তুলে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। ঘটনার পরেদিন সকালে পাশবর্তী শালাইপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ভিকটিম ঝন্টুর মৃতদেহ পাওয়া যায়। এই হত্যা কান্ডের ঘটনার পরে নিহত ঝন্টুর বাবা মোঃ সাইদুর রহমান বাদী হয়ে পাবনা সদর থানাতে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে একটি অভিযোগ দাখিল করেন। এই হত্যা মামলার পুলিশের তিনজন তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত কাজ শেষ করতে না পারায় পরবর্তীতে পুলিশ সুপারের নির্দেশে তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল মামলার অবশিষ্ঠ তদন্তভার গ্রহণ করেন। অতঃপর মামলাটি সিআইডির উপরে ন্যান্ত হয়।
২০০৬ সালে ২৫ মে রাজশাহী দ্রæত বিচার ট্রাইব্যুনাল এর বিচারক এ এফ এম আমিনুল ইসলামের আদালত দীর্ঘ শুনানী ও সাক্ষ গ্রহণ শেষে এই মামলার ৬ জনকে খালাস ও ৬ জনকে সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন। মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামীরা হলেন মোঃ শহিদুর রহমান শহিদ, মোঃ মোতাহার হোসেন মুতাই (পলাতক), আমিরুল ইসলাম, রঞ্জু, মোঃ আলাইদ্দিন ও শামসুল। দন্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায়া উক্ত আসামীদের প্রত্যেককে যাব্বজীবন সশ্রম কারাদন্ড এবং প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা আর্থিক জরিমানা অনাদায়ে আরো ১ বছরের সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন বিচারক। এই মামলার আসামী মোঃ মোতাহার হোসেন মুতাই (পলাতক) থাকায় তার গ্রেপ্তার কাল হতে অথবা আত্মসমর্পনের কাল হতে তার উপর অর্পিত দন্ডাদেশ কার্যকর হবে বলে আদালত রায় প্রদান করেন।
প্রার্থীতা বাতিলের আপীলকারী গয়েশপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মোঃ সুজ্জাতুল ইসলাম বলেন, একদিকে তিনি দলের দায়িত্বে থেকেও দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করেই সতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে এর মধ্যে তিনি এলাকার চাঞ্চল্যকর ঝন্টু হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত (পলাতক) আসামী। নির্বাচনের আইন অনুযায়ী তিনি প্রার্থী হতে পারেননা। দলের নীতি নির্ধারকেরা খুব দ্রæত তার বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নিবেন। তাকে দল থেকে বহিস্কার করবেন। এই অবৈধ প্রার্থীর বিষয়ে অবশ্যই নির্বাচন সংশ্লিষ্ঠরা খুব দ্রæত সিদ্ধান্ত নিবেন।
মামলার বিষয়ে গয়েশপুর ইউনিয়নের সতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ মোতাহার হোসেন মুতাই বলেন, এটা আমার বিরুদ্ধে নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমি বিগত ৫ বছর চেয়ারম্যান ছিলাম আমার নামে হত্যা মামলার ওয়ারেন্ট থাকলে আমাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যেতো। এই মামলায় আমি হাইকোর্ট থেকে জামিনে নিয়ে আছি। আমি এখনো গয়েশপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি। এই নির্বাচনে আমার জয় বুঝছে পেরে তারা নানাভাবে আমাকে হয়রানী করার চেষ্টা করছে। আপনারা একটু খোঁজ নিয়ে দেখেন কার কি অবস্থান।
অভিযোগের বিষয়ের জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, অভিযোগতো অনেক গুলো পরেছে। তবে গয়েশপুর ইউনিয়নের কোন অভিযোগ আমি হাতে পাইনি। নির্বাচনের আইন অনুযায়ী ২ ডিসেম্বর (বৃহঃবার) বিকেল ৫টা পর্যন্ত ছিলো প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ দিন। তবে কোন মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামী নির্বাচনের নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে পারবে না। অভিযোগের আলোকে বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখবো। অভিযোগ প্রমানিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।