সোহেল রানা,সাভার(ঢাকা):
সাভারে একটি সিমেন্ট কোম্পানির গাড়িতে ছিনতাই শেষে পালানোর সময় স্থানীয় এক সংবাদকর্মীর সহযোগিতায় দুই ছিনতাইকারীকে পাকড়াও করে স্থানীয় জনতা। এ সময় আরেক ছিনতাইকারী দৌঁড়ে পালিয়ে যান। পলাতক সেই ছিনতাইকারী মো: ছাব্বির কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) গভীর রাতে পুলিশি অভিযান চালিয়ে সাভারের ল্যাবজোন হাসপাতালের সামনে থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক ইমরান হোসাইন ।
আটককৃত মো: ছাব্বির মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া থানার পাচুটিয়া গ্রামের সুন্নাফ মিয়ার ছেলে।
মামলার এজাহার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৪ জানুয়ারি রাতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ম্যাস্ট্রো ক্রাউন কলেজের সামনে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। জনতার সহযোগিতায় আটক ছিনতাইকারীদের কাছ থেকে দুইটি ছুড়ি ও ছিনতাই করা ২৪ হাজার টাকা জব্দ করে পুলিশ।
পরের দিন ৫ জানুয়ারি দুপুরে সাভার মডেল থানায় দায়ের করা মামলায় (মামলা নং: ১০ ) গ্রেফতার দেখিয়ে ছিনতাই এর ঘটনায় হাতেনাতে আটক হওয়া সাভার পৌর ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাড্ডা এলাকার রবিউল ইসলাম রুবেল (২৬) ও ধামরাই উপজেলার শাকিল হোসেন (২০) কে আদালতে প্রেরণ করা হয়। আদালতের নির্দেশে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়। এখনো তারা হাজতবাস করছেন। এ ঘটনায় জড়িত পলাতক মো: ছাব্বিরকে নিয়ে ছায়া তদন্ত শুরু করে সাভার মডেল থানা পুলিশ। অবশেষে ৭ মাস ২৮ দিন পর মো: ছাব্বিরকে গ্রেফতার করা হলো।
আলোচিত এই ছিনতাইয়ের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সংবাদকর্মী সোহেল রানা গণমাধ্যমে বলেছিলেন, চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি সোমবার রাতে আমি রেডিও কলোলি থেকে হেঁটে শিমুলতলা যাচ্ছিলাম। পথে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে ম্যাস্ট্রো ক্রাউন কলেজের সামনে এলে শাহ সিমেন্ট কোম্পানির একটি গাড়িকে গতিরোধ করা হয়েছে দেখতে পাই। এ সময় তিন ছিনতাইকারী ওই গাড়ির চালক ও তার সহযোগীকে জিম্মি করে কাছে থাকা ৪২ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেন।
সোহেল বলেছিলেন, ঘটনাটি আমি দেখে ফেলায় ছিনতাইকারীরা আমার গলায় ছুড়ি ধরে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে দ্রুত দৌঁড়ে পালাতে বলে। আমার সঙ্গে ল্যাপটপ ও ক্যামেরা থাকায় তাদের কথায় কিছুটা পিছু সরে আসি। এ সময় তারা অন্য একটি বাসে উঠলে আমি জিম্মি করা ট্রাকের চালককে গাড়ি সাইড করে ৯৯৯ এ কল করে পুলিশের সেবা নিতে বলি এবং ছিনতাইকারীদেরকে ধাওয়া করি।
তিনি আরও বলেছিলেন, একপর্যায়ে ছিনতাইকারীরা বাস থেকে নেমে রিকশাযোগে পালানোর চেষ্টা করলে আমি তাদেরকে জাপটে ধরি। এ সময় এক ছিনতাইকারী আমাকে চাকু দিয়ে আঘাত করলে হাত দিয়ে তা ফেরাই। তখন পেছন থেকে ভুক্তভোগী গাড়িচালকসহ স্থানীয়রা এগিয়ে আসলে এক ছিনতাইকারী পালিয়ে গেলেও দুই জনকে জাপটে ধরি। পরবর্তীতে স্থানীয়দের সহায়তায় তাদেরকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করি। এ ঘটনায় পুলিশ দুই ছিনতাইকারীর দেহ তল্লাশি করে দুইটি চাকু ও ২৪ হাজার টাকা উদ্ধার করতে পারলেও বাকি টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় ছিনতাইকারী ছাব্বির নামে আরেকজন।
মামলার অগ্রগতি ও আরেক আসামি মো: ছাব্বিরকে গ্রেফতারের বিষয়ে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী শাহ সিমেন্ট কোম্পানির গাড়িচালক রফিক জানান, আমি ও আমার সহযোগী সহ গাইবান্ধা থেকে পাথর নিয়ে এসে মানিকগঞ্জে আনলোড করি। এরপর মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুর যাওয়ার পথে সাভারে এসে ছিনতাইয়ের কবলে পরী। ৪২ হাজার টাকার মধ্যে পুলিশের সহযোগিতায় আদালতের নির্দেশে ২৪ হাজার টাকা পাই। পুলিশের মাধ্যমে জানতে পারলাম আমাকে ছুরি দিয়ে জিম্মি করে ছিনতাইয়ের ঘটনায় পলাতক মো: ছাব্বির কে গ্রেফতার করা হয়েছে। এতে আমি স্বস্তি প্রকাশ করছি। আশা করছি আদালতে আমি ন্যায় বিচার পাবো।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক ইমরান হোসাইন বলেন, চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি রাতে আরিচা মহাসড়কের রেডিও কলোনি এলাকায় শাহ সিমেন্ট কোম্পানির একটি গাড়ি ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে। এ ঘটনায় রবিউল ইসলাম রুবেল ও শাকিল হোসেনকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করা হয়।
তিনি আরও বলেন, মামলার তদন্তে এবং আটকদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী এই চক্রের সদস্য মো: ছাব্বির এর নাম উঠে আসে। তাকে গ্রেফতারে মাঠে নামে পুলিশ। বিভিন্ন এলাকায় অভিযান অব্যাহত রাখা হয়। অবশেষে সাব্বির রহমানকে সাভারের ল্যাবজোন হাসপাতাল এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।