এরফান হোছাইন, কক্সবাজারঃ
ভূয়া জন্ম নিবন্ধন কপি সৃজন করে বিজ্ঞ আদালতে হাজতি আসামীকে শিশু অপরাধী হিসেবে উপস্থাপন করে জামিন জালিয়াতি করেন এডভোকেট মাইন উদ্দিন, এবং পরবর্তী উক্ত অপরাধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলার অন্যতম আসামী হলেন চকরিয়া আইনজীবি সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন।
গত ১৭ই, ২০২০ তারিখে ফেব্রুয়ারী চকরিয়া থানার এস.আই মোঃ আবদুল্লাহ আল মাসুদ বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে চকরিয়া থানায় এই মামলা দায়ের করেন।
উক্ত মামলায় চকরিয়ার চিরিঙ্গা উত্তর বুড়ি পুকুর এলাকার মোঃ জালাল উদ্দীনের পুত্র রহিম উদ্দিন কে ১ নং আসামী, চকরিয়া পৌরসভার ইমাম উদ্দিন পাড়ার বাসিন্দা মৃত আহম্মদ হোসাইনের পুত্র মোঃ জালাল উদ্দীনকে ২ নাম্বার আসামী ও চকরিয়া পৌরসভার বিনামারা এলাকার বাসিন্দা মৃত মোজাফফর আহাম্মদের পুত্র চকরিয়া আইনজীবি সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মোঃ মঈন উদ্দিন কে ৩নং আসামী করা হয়।
যার চকরিয়া থানা মামলা নং ২৮,২০/০২/২০২০, জি আর মামলা নং ৬২/২০২০। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ ধারা- ৩৫(২),২২(২)।
সূত্রে জানা যায়, বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দকৃত আসামী মোঃ জিসান ( ১৯) নামের এক যুবককে ১৩ বছরের শিশু অপরাধী দাবী করে বিজ্ঞ আদালতে জন্ম নিবন্ধন দাখিল করেন জিসানের আইনজীবি এডভোকেট মোঃ মঈন উদ্দিন। জামিনও লাভ করেন ভূয়া/জাল নিবন্ধন বিজ্ঞ আদালতে উপস্থাপন করে।
এই মামলার বাদী পক্ষ জন্ম নিবন্ধনটির সত্যতা যাচাই করার জন্য চকরিয়ার বড় ভেওলা ইউনিয়ন পরিষদের গেলে এটা ভূয়া/জাল জন্ম নিবন্ধন সেটা তারা প্রাথমিকভাবে জানতে পারে।
এই ভূয়া/জাল জন্ম নিবন্ধনটি চকরিয়া আদালত চত্বরে অবস্থিত জনৈক রহিমের কম্পিউটার ম্যানের মাধ্যমে তৈরি করেন।
এই বিষয়ে চকরিয়া থানায় তারা একটি অভিযোগ দিলে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসির) নির্দেশে চকরিয়া আদালত চত্বরে অবস্থিত মুক্তা কম্পিউটার্স নামের একটি কম্পিউটারের দোকান থেকে দোকানের মালিক রহিম উদ্দিনকে আটক করে কম্পিউটারের সারমজম সহ মোঃ জিসান নামের একটি ভূয়া জন্ম নিবন্ধন জব্দ করেন যার জন্ম নিবন্ধন নং- ২০০৪২২-১১৬৩৯৫৬৪৭৯১,ইস্যুকৃত তারিখ – ০২/১১/২০১৬।
এই ঘটনায় আটককৃত মোঃ রহিম উদ্দিন (৩৬) পুলিশকে জানান, গত বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারিতে জনৈক জালাল সহ অজ্ঞাত ২/৩ জন্য ব্যক্তি তার দোকানে এসে মোঃ জিসান এর জন্ম নিবন্ধন কম্পিউটারের মাধ্যমে এডিটিং করে বয়স কমিয়ে ও জন্ম নিবন্ধন নাম্বার পরিবর্তন করে জাল সনদ সরবরাহ করার জন্য বলে। পরে এডভোকেট মাইন উদ্দিনের কথায় ভূয়া একটি জন্ম নিবন্ধন সৃজন করেন।
তাকে হেফাজতে নিয়ে আরো জিজ্ঞেসবাদ করা হলে এই মামলার এজাহার নামীয় গ্রেফতারকৃত আসামী রহিম উদ্দিন এর ফৌজদারী কার্যবিধি ১৬৪ ধারা স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দিতে ভূয়া/ জাল জন্ম নিবন্ধন এর ঘটনার মূল কারিগর এডভোকেট মঈন উদ্দিন বলে উল্লেখ করেন।এডভোকেট মাইন উদ্দিন, কম্পিউটার ম্যান রহিম উদ্দিনকে এই জাল জন্ম নিবন্ধন বানাতে বলেন যাতে জামিনে সুবিধা নিতে পারেন। সেই মোতাবেক রহিম উদ্দিন জন্ম নিবন্ধন তৈরি করেন। বিষয়টি বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এর নজরে আসলে তিনি চকরিয়া থানাকে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে চকরিয়া থানা কর্তৃপক্ষ জালিয়াতি এবং ডিজিটাল নিরপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা এই জাল জালিয়াতিকে কেন্দ্র করে তদন্ত নামেন এবং তিনি মামলার কাগজপত্র পর্যালোচনা করেন, ১ নং আসামীকে থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করেন, ১ নং আসামীর স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দিতে উঠে আসে এই জালিয়াতির মূল হোতা এডভোকেট মাইন উদ্দিনের নাম। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এর ২২(২)/৩৫(২) ধারায় চকরিয়া থানায় এই বছরের ৯ জুন অভিযোগপত্র সাবমিট করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা যার অঅভিযোগ পত্র নং- ১৪৭।
একাধিক সূত্রে জানা যায়, চকরিয়া আইনজীবি সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন বিভিন্ন বিচার-প্রার্থী থেকে জজ সাহেবের নামে টাকা দাবি করে আত্মসাৎ করে আসতেছে এবং লভিং এর মাধ্যমে দ্রুত সময়ে জামিন করবে বলে আশ্বাস প্রদান করে টাকা নিয়ে থাকেন । কিন্তু জামিন তো দূরের কথা টাকা আত্মসাৎ করে নানা ভাবে হয়রানি করেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট জালিয়াতির মামলার অভিযোগপত্র পর্যালোচনা করে জানা যায়, চকরিয়া আইনজীবি সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মঈন উদ্দিন এর স্বভাব চরিত্র ভালো নয়, বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডে সাথে জড়িত হয়ে পড়েছেন।
মামলার বাদী এস আই বলেন বিষয় টি আমাদের থানার কতৃপক্ষের নজরে আসলে আমি বাদী হয়ে অত্র মামলা দায়ের করি।আমি রাষ্ট্র এর পক্ষে বাদী হয়ে সংবাদ দাতা হিসেবে মামলা করি,
উক্ত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেছেন আইন অনুসারে সব কাগজপত্র পর্যালোচনা করে তদন্ত করেছি , ইতিমধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন বিজ্ঞ আদালতে দাখিল করেছি।তবে অপরাধীদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে
এই বিষয়ে অভিযুক্ত এডভোকেট মোহাম্মদ মঈন উদ্দিনকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি সুকৌশলে এড়িয়ে যান এবং আদালতের বিষয় বলে উল্লেখ করেন।