1. tanvirinternational2727@gmail.com : NewsDesk :
  2. hrbangladeshbulletin@gmail.com : News Room : News Room
  3. 25.sanowar@gmail.com : Sanowar Hossain : Sanowar Hossain
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০২:০৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম :

নওগাঁর মহাদেবপুরে অবৈধ ঝালের হাট :প্রতিদিন লক্ষ টাকা হরিলুট, রাজস্ব বঞ্চিত সরকার

  • সময় : শনিবার, ২৮ আগস্ট, ২০২১
  • ৯৩

কাজী সামছুজ্জোহা মিলন মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধিঃ
২৮ আগস্ট ২০২১

নওগাঁর মহাদেবপুরে অবৈধ ঝালের হাট বসিয়ে সিন্ডিকেট করে প্রতিদিন লক্ষ টাকা ভাগ বাটোয়ারা করে নিচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
প্রতিদিন এই হাটে কোটি টাকার ঝাল বেচাকেনা হলেও সরকার এখান থেকে রাজস্ব পায়না। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে চলছে এই কারবার। কিন্তু প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি এখনও। হাটের আয়োজকরা বলছেন বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করে চালানো হচ্ছে এটি। আর প্রশাসন বলছে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।উপজেলার সফাপুর ইউনিয়নের পাহাড়পুর বাজার থেকে পশ্চিমে দক্ষিণ লক্ষিপুর গ্রাম। এই প্রত্যন্ত এলাকায় লাগানো হয়েছে ঝালের পাইকারি হাট। প্রতিদিন ট্রাকে ট্রাকে ঝাল ঢাকা, চট্রগ্রাম যাচ্ছে এখান থেকে।
হাটের মূল হোতা স্থানীয় হাজী নজরুল ইসলাম। ২০০৫ সালে বিএনপি আমলে তার নিজের ১০ শতক জমির উপর এই হাট বসান। এখন বসে অন্যের কয়েক বিঘা জমির উপর। তখন সপ্তাহে একদিন বসতো। ৪ বছর থেকে বসছে প্রতিদিন। তবে ঝালের সিজন বছরে তিন মাস। আষাঢ়, শ্রাবন আর ভাদ্র। ভরা মওসুমে এখানে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ টন ঝাল বিক্রি হয়। ঝালের বাজার দর নিয়ন্ত্রণ করে এখানকার ২৭ আড়ৎ সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের কারসাজিতে গতমাসে এখানে ঝালের দাম ওঠে কেজি প্রতি ১৬০ টাকা। খুচরা বাজারে বিক্রি হয় ২০০ টাকা। এখন এই হাটে পাইকারী বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে। আর উপজেলার বিভিন্ন বাজারে খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজিতে। প্রতিদিন সকালে তারা দিনের ঝালের দাম ঘোষণা করে। সেই অনুযায়ী একই দামে ঝাল কেনে তারা। সাধারণ চাষীরা এই হাটে ঝাল বিক্রি করতে আসলে আড়ৎদারদের বেঁধে দেয়া দামেই বিক্রি করতে হয়।
গত শুক্রবার ২৭ আগস্ট বিকেলে ভাঙ্গাচুড়া পাকা সড়ক আর কাদা পানিতে সয়লাব কাঁচা রাস্তা পেরিয়ে হাটে গিয়ে দেখা যায় জমজমাট চলছে বেচাকেনা।ঝাল বিক্রি করতে আসা উপজেলার উত্তরগ্রাম ইউনিয়নের ভালাইন গ্রামের ঝালচাষী মৃত কফিল উদ্দিন সরদারের ছেলে মোকলেছার রহমান জানালেন, তিনি নিজের ১০ কাঠা জমিতে ঝালের আবাদ করেন। বৈশাখ মাসে জমি তৈরী করে ঝালের চারা লাগান। সার ও সেঁচ প্রয়োগ করেন। আড়াই থেকে তিন মাস পর গাছে ঝাল আসা শুরু হয়। ১০ থেকে ১২ দিন পর পর ঝাল ওঠান। আষাঢ় মাসের শুরু থেকে এপর্যন্ত দুই মণ ঝাল পেয়েছেন। কার্তিক মাস পর্যন্ত ঝাল পাবেন বলে আশা করছেন। এপর্যন্ত তার খরচ হয়েছে প্রায় ৫ হাজার টাকা। আর ঝাল বিক্রি করে পেয়েছেন ৮ হাজার টাকা। আরও কমপক্ষে ২০ হাজার টাকার ঝাল পাবেন। তিনি আরো জানালেন, ১৯ কেজি ঝাল হাটে এনেছেন। বিক্রি করেছেন প্রতিকেজি ৫৭ টাকা দরে। আড়ৎদার ধলতা হিসেবে ১ কেজি ঝাল বিনা পয়সায় নিয়েছেন। তার প্রতিবেশী কবেজ আলীর ছেলে জাহিদ হাসানও জানালেন একই কথা। তিনি এনেছেন ২০ কেজি। ১ কেজি দিতে হয়েছে ধলতা।
হাটে টিনের ছাউনি দেয়া শেডে ঝাল কিনছিলেন দক্ষিণ লক্ষিপুর গ্রামের মৃত ওমর আলীর ছেলে আড়ৎদার আলমগীর হোসেন। এদিন তিনি ২ হাজার ৯৬৪ কেজি ঝাল কিনেছেন বলে জানান। তারা রয়েছেন মোট ২৭ জন। নওগাঁ আড়তের পাইকারদের কাছ থেকে শুনে তারা ঝালের দিনের দাম নির্ধারণ করেন। আলমগীর ঝাল দেন নওগাঁ আড়তের পাইকার সোহেল রানার কাছে। তার বেধে দেয়া দামে ঝাল কিনেন তিনি।
সোহেল ঝাল বিক্রি করেন কিশোরগঞ্জ আড়তের পাইকার নবীন চন্দ্রের কাছে। নবীন চন্দ্রের বেধে দেয়া দাম বলেন সোহেল। এছাড়া অন্যরা ঢাকা, চট্রগ্রামের আড়ৎদারদের বেধে দেয়া দামে ঝাল কিনেন। এক্ষেত্রে সাধারণ চাষীরা কত দাম চাইলো না চাইলো তাতে কিছু আসে যায়না। ঝাল পরিবহণে দেরি হলে ওজনে কমে যায় জন্য তারা ধলতা নিয়ে থাকেন।
এছাড়া আড়তদারী হিসেবে পাইকারদের কাছ থেকে কেজি প্রতি ১ টাকা করে নেন। হাটের উন্নয়নের জন্যও টনপ্রতি নেয়া হয় ১০০ টাকা। এভাবে প্রতিদিন কেটে রাখা হয় লক্ষ টাকা। কথা হলো আড়ৎদার আবুল কালাম আজাদ, কুতুবুল আলম, দুলাল হোসেন, সেফাতুল ইসলাম ও আরও অনেকের সাথে। একই কথা জানালেন সকলে।হাটের অফিসে দেখা হলো হাট কমিটির সেক্রেটারী আবুল কালাম আজাদের সাথে। তিনি জানালেন এদিন হাটে কেনা হয়েছে ৩০ টন ঝাল। এখন সিজন শেষের পথে। তাই আমদানী একটু কম। হাট উন্নয়নের জন্য নেয়া টাকায় হাটের টয়লেট পরিস্কার করা হয়। হাট থেকে সরকারী ঘরে কোন টাকা জমা হয়না বলেও তিনি জানান। সাংবাদিক দেখে তিনি ফোন করে ডেকে আনলেন হাট কমিটির সভাপতি ও প্রতিষ্ঠাতা হাজী নজরুল ইসলামকে। তিনি শোনালেন দীর্ঘ কাহিনী। নিজের জমির ঝাল বিক্রির জন্য লাগানো এই হাটে এখন নওগাঁ সদর, মহাদেবপুর, মান্দা, নিয়ামতপুর, পত্নীতলাসহ আশেপাশের ৫ হাজার চাষী ঝাল বিক্রি করতে আসেন। এসব এলাকার উঁচু জমিগুলো আগে এই সময়ে ফেলে রাখা হতো। এখন সেখানে ঝালের আবাদ করে চাষীরা স্বাবলম্বী হয়েছেন। সাধারণ ধানের জমি প্রতি বিঘা কট রেখে যেখানে বছরে মাত্র ১০ মণ ধান পাওয়া যেত, সেখানে ঝালের জমি মাত্র তিন মাসের সিজনে ২৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে।
হাটের আশেপাশের চকশিয়ালী, প্রসাদপুর, দক্ষিণ লক্ষিপুর, ঈশ্বর লক্ষিপুর, দক্ষিণ বাখরাবাজ প্রভৃতি গ্রামের মাঠ জুড়ে এখন শুধু চোখ জুড়ানো ঝালের ক্ষেত। প্রতিদিন ক্ষেতে ঝাল তুলছেন, পরিচর্যা করছেন গ্রামের কুলবধূরা।
এত সম্ভাবনাময় একটি হাট থেকে সরকারকে কেন বঞ্চিত করছেন এমন প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি তিনি। তবে তিনি জানান, সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে কথা বলেই হাটটি পরিচালনা করা হচ্ছে। ২০১৮ সালে এই হাট বিষয়ে একটি মহল অভিযোগ দায়ের করলে তদানিন্তন উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাকে ডেকে নেন। তখন তিনি তার ১০ শতক জমি হাটের নামে লিখে দিতে চান। কিন্তু পরবর্তীতে তা আর করেননি।জানতে চাইলে সফাপুর ইউপি চেয়ারম্যান সামসুল আলম বাচ্চু জানান, হাটটি পরিচালনা করছেন প্রভাবশালীরা। ইউনিয়ন পরিষদ কোন রাজস্ব পায়না।উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ অরুন চন্দ্র রায় জানান, এলাকায় ঝালের আবাদ ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ঝালের হাটটি চাষীদের জন্য আশীর্বাদ।উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানুর রহমান মিলন বলেন,অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের অন্যান্য খবর
©বাংলাদেশবুলেটিন২৪