বিল্লাল হোসেন,যশোর প্রতিনিধি:
যশোরে আরও ৮ রোগীর শরীরে করোনাভাইরাসের শরীরে ভারতীয় ধরন মিলেছে। ৩৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় এই ফলাফল পাওয়া যায়।
তাদের মধ্যে ৭ জন পুরুষ ও ১ জন নারী রয়েছেন। আক্রান্তদের কেউ ভারত ফেরত না। তারা সকলেই স্থানীয়ভাবে করোনায় আক্রান্ত।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের(যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে সোমবার জিনোমসেন্টারের সহযোগী পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. ইকবাল কবীর জাহিদের নেতৃত্বে একদলগবেষক সিকুয়েন্সির মাধ্যমে করোনাভাইরাসের ভারতীয় এ ধরণ শনাক্ত করেন।ইতিমধ্যে ভারতীয় ধরণ শনাক্তের বিষয়টিস্বাস্থ্য অধিদপ্তর, আইইডিসিআর, যশোরেরস্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে।
জিনোম সেন্টার থেকে জানানো হয়েছে, গত ২৯মে ৪ জনের নমুনা অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স, ৩ জনের নমুনা ২৫০ শয্যা বিশিষ্টজেনারেল হাসপাতাল এবং অপরজনের নমুনাঝিকারগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকেযবিপ্রবির ল্যাবে পাঠানো হয়। সম্প্রতি ভারতফেরত কোয়ারিন্টিনে থাকা পরবর্তী সময়েপজিটিভ হওয়ার হার যশোর জেলায় গড়ে ১০শতাংশ থেকে ১৯ শতাংশে উন্নীত হওয়ায়স্থানীয় সংক্রমন হয়েছে কি না সেটি জানারজন্য স্থানীয় ৩৬ জনের নমুনা সিকোয়েন্সিংকরে ভারতীয় ধরণ শনাক্ত করা হয়।
যবিপ্রবির গবেষক দলটি জানান, ই১.৬১৭.২নামের ধরণটি জিনোম সেন্টারে শনাক্ত করাহয়েছে। গত ৮ মে যবিপ্রবির ল্যাবে সর্বপ্রথম ২জন করোনা রোগীর নমুনায় ভারতীয় এ ধরণশনাক্ত করা হয়। যাশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিশ্ববিদ্যালয় এখন পর্যন্ত ভারত ফেরত ৫৫০জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১২ জনের শরীরেকরোনা পজিটিভ পায়। ভারত ফেরতরোগীদের মধ্যে ৭ জনের শরীরে ভারতীয়ভ্যারিয়ান্ট ই.১.৬১৭.২ পাওয়া যায়। এদেরমধ্যে দুইজন করোনা পজিটিভ হয়েই দেশেআসেন। কেউ কেউ উপসর্গহীন অবস্থায়ওপজিটিভ হন। যবিপ্রবির ল্যাবে এ পর্যন্ত ভারতফেরত ও স্থানীয়সহ ১৫ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরণ শনাক্ত করা হলো।
গবেষক দলটি জানিয়েছে, গত ২০ ডিসেম্বর এধরণটি সর্বপ্রথম ভারতে ছড়িয়ে পড়ে। এ পর্যন্তএ ধরণটি ইতোমধ্যে বিশে^র ৬০টি দেশেছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ ধরণটিসহসকল ভারতীয় ধরণকে উদ্বেগের ধরণ বলেআখ্যা দিয়েছে। ইতোমধ্যে ভারতীয় এ ধরনটি যুক্তরাজ্যে সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে গেছে। তাঁরাজানিয়েছেন, ফাইজারের ভ্যাকসিন অন্যন্যটিকার তুলনায় ৩ থেকে ৬ গুণ অকার্যকর।ভারতের একটি হাসপাতালে এটি ৪৮ ভাগপর্যন্ত এটি শনাক্ত হয়েছে। অ্যাস্ট্রোজেনেকাটিকার ক্ষেত্রে এটি ৬০ ভাগ কার্যকর। তাঁদেরমতে, ভারতীয় এ ধরণটি ৫০ শতাংশের বেশিসংক্রমনের সক্ষমতা রাখে। ভ্যাকসিন পরবর্তী‘সেরাম এবং মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি’ এধরণকে কম শনাক্ত ও নিষ্ক্রিয় করতে পারে।সুতরাং মাস্ক ব্যবহারসহ কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধিমেনে চলতে হবে। সীমান্তবর্তী জেলাগুলোরঅধিবাসীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকারআওতায় আনার সুপারিশ করছে গবেষকদলটি।
গবেষক দলটি ভারত থেকে আগত সবাইকেকরোনা নেগেটিভ না হওয়া পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিককোয়ারেন্টিনে রেখে পরীক্ষা করার আহ্বানজানিয়েছে। এ ছাড়া ভারতীয় ধরণ শনাক্তহওয়ায় সীমানা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ, বাণিজ্যিক বা অন্য কোনো কারণে চালক ওসহকারীদের কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনও পরীক্ষা করার প্রয়োজন। যশোর বিজ্ঞান ওপ্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গত বছর এপ্রিল হতেকরোনা পরীক্ষা করছে। তার পাশাপাশিকরোনার ভ্যারিয়ান্ট নিয়েও কাজ করছে।ভারতীয় নমুনায় পজিটিভ হওয়া মাত্র তারপ্রথমে স্যাংগার সিকুয়েন্সিং করা হয়। সেখানেপ্রাথমিক ধারনা পেলেই সিভিল সার্জনসহসংশ্লিষ্ট সকলকে জানানো হয়। তারপর হোলজিনোম সিকোয়েন্সিং করে করোনার ধরণশনাক্ত করা হয়।
জিনোম সেন্টারে ভারতীয় ধরণ শনাক্তকরণেরগবেষক দলের অন্যান্য সদস্যরা হলেন- ড. তানভীর ইসলাম, ড. হাসান মোহাম্মদ আল-ইমরান, অভিনু কিবরিয়া ইসলাম, শোভনলাল সরকার, এ. এস. এম. রুবাইয়াত-উল-আলম, মো: সাজিদ হাসান, আলী আহসানসেতু প্রমুখ।