বেড়া (পাবনা) প্রতিনিধিঃ
লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় বিপদে
পড়েছেন কাজের সন্ধানে ঘর থেকে বেরিয়ে আসা মানুষেরা। বিকল্প পরিবহন
হিসেবে এখন মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, সিএনজি মানুষের
গণপরিবহনে পরিণত হয়েছে। এতে বাসের তুলনায় দুই থেকে তিন গুণ বেশি
ভারা গুনতে হচ্ছে যাত্রীদেরকে।
গেল মাসের ২৯ এপ্রিলে তৃতীয় দফার লকডাউনের আদলে ‘কঠোর
নিষেধাজ্ঞার’ প্রথম থেকেই পাবনার সাঁথিয়া ও বেড়া উপজেলার
কাশিনাথপুর মহাসড়কে এ চিত্র দেখা যাচ্ছে।
সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ২৯ এপ্রিল থেকে তৃতীয় দফার কঠোর
নিষেধাজ্ঞা আগামী ৫ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এ সময়কালে গণপরিবহন
চলাচল ও সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। তবে দোকানপাট ও শপিংমল
সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
গত মাসের ১৪ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত সাত দিন প্রথম দফা ২২
থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত দ্বিতীয় দফা পরে আবার ২৯ এপ্রিল থেকে ৫ মে
পর্যন্ত বাড়ানো তৃতীয় দফাতেও কঠোর নিষেধাজ্ঞা সেভাবে পালন হতে দেখা
যাচ্ছে না। সবকিছুই স্বাভাবিকভাবেই চলতে দেখা যাচ্ছে।
মহামারি করোনার ক্রান্তিকালে স্বাস্থ্যবিধিকে থোড়াই কেয়ার করে
গাদাগাদি যাত্রী নিয়ে পাবনায় চলাচল করছে মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার ও
সিএনজি।
বেড়া উপজেলার কাশিনাথপুর ও বেড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে ভোর ৬টায় শুরু হয়ে
রাত পর্যন্ত চলে যাত্রী উঠা-নামা। ব্যস্ততম জায়গায় প্রশাসনের নাকের ডগায়
এমন অরাজকতা চললেও নেওয়া হচ্ছে না কোনো ব্যবস্থা। অথচ কাশিনাথপুর
ফুলবাগান নামক স্থান থেকে যাত্রী উঠা-নামা করে তার সামনেই অবস্থিত
ট্রাফিক পুলিশ বক্স।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কাশিনাথপুর ফুলবাগান মোড়ে সকাল থেকেই শুরু
হয় পাবনাসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াতের জন্য আসা যাত্রীদের
আনাগোনা। দশ সিটের মাইক্রোবাসে তোলা হয় ১৪/১৫ জন যাত্রী। ভাড়া
নেওয়া হয় বাসের তুলনায় দুই থেকে তিন গুণ। ৩০ থেকে ৪০টি মাইক্রোবাস
এভাবেই প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে গাদাগাদি করে যাত্রী
পরিবহন করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লকডাউনের কারণে গণপরিবহন চলাচল বন্ধের
সুযোগে জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ করে বেড়া- সাঁথিয়ার
বাসস্ট্যান্ডে ও কাশিনাথপুরে যাত্রী বহনে নেমে পড়েছে অসংখ্য মাইক্রোবাস।
এসব মাইক্রোবাসের অনেকগুলোই সড়কে চলাচলের অনুপযোগী। স্বাভাবিক
সময়ে এগুলোতে যাত্রী বহন না করে বসিয়ে রাখা হত। কিন্তু মাইক্রোবাসে
যাত্রী বহনের সুযোগ পেয়ে লক্কড়-ঝক্কড় এসব মাইক্রোবাসও সড়কে নামানো
হয়েছে।
সরেজমিনে কাশিনাথপুরে গিয়ে দেখা যায়,বেড়ার কাশিনাথপুর ফুলবাগান
ও সাঁথিয়ার বাসস্ট্যান্ড থেকে পাবনা শহরে মাইক্রোবাসের চালক ও এর সঙ্গে
সংশ্লিষ্ট লোকজন ডেকে ডেকে যাত্রী তুলছেন। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই
প্রতিটি মাইক্রোবাসে যাত্রী বোঝাই হয়ে যাচ্ছে। এমনিতে
মাইক্রোবাসগুলোর যাত্রী ধারণ ক্ষমতা ১০ জন হলেও গাদাগাদি করে ১৪ থেকে ১৫
জন পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। এতে করোনার সংক্রণের মারাত্মক ঝুঁকির সৃষ্টি
হচ্ছে। এ ছাড়া ভাড়াও নেওয়া হচ্ছে দুই থেকে তিন গুণ করে। এমনিতে
কাশিনাথপুর থেকে পাবনা পর্যন্ত বাসের ভাড়া যাত্রী প্রতি ৬০ টাকা হলেও
মাইক্রোতে নেওয়া হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত।
একই রকমভাবে বেড়া ও কাশিনাথপুর বাসস্ট্যান্ডে দেখা যায় সিএনজিচালিত
অটোরিকশাতেও গাদাগাদি করে যাত্রী নেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি
সিএনজিচালিত অটোরিকশায় পেছনে তিনজন ও সামনে দুজন (চালকসহ
তিনজন) করে যাত্রী নেওয়া হচ্ছে। লকডাউনের আগে বেড়া থেকে পাবনায়
সিএনজির ভাড়া জন প্রতি ৭০ টাকা করে হলেও এখন নেওয়া হচ্ছে ১৪০ থেকে
১৫০ টাকা। একইভাবে বেড়া থেকে কাজীরহাট ফেরিঘাটের ভাড়া ৩০ টাকার
জায়গায় ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বেড়া থেকে শাহজাদপুরের ভাড়া ২০ টাকার
জায়গায় ৩০ থেকে ৪০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।
কাশিনাথপুরে মাইক্রোবাসে পাবনায় যাচ্ছিলেন একজন ব্যাংক
কর্মকর্তা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা জানান, তাঁর বাসা
কাশিনাথপুরে। অফিস করার জন্য প্রতিদিন তিনি পাবনা থেকে
কাশিনাথপুর যাওয়া-আসা করেন। ব্যাংক খোলা থাকায় এই মহামারির মধ্যে
বাধ্য হয়ে তাঁকে এমন গাদাগাদি করে দ্বিগুণ ভাড়ায় যাতায়াত করতে হচ্ছে।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশে করে বলেন এর চেয়ে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে বাস চলাচল
করলে তুলনামূলক সুরক্ষিত অবস্থায় ও কম ভাড়ায় যাতায়াত করা যেত।
অপরদিকে রোববার পরিবহণকে লকডাউনের আওতামুক্ত ঘোষণা করে অবিলম্বে
যাত্রীবাহী বাস খুলে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে
বেড়া-সাঁথিয়া পরিবহন শ্রমিকেরা।
একটি ইলেকট্রনিক্স পণ্য সরবরাহকারী কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি
আইয়ুব আলী বলেন, ‘আমাদের কাজ জেলার বিভিন্ন এলাকার দোকানে
দোকানে গিয়ে মালের (পণ্য) অর্ডার নেওয়া। এ জন্য কখনও সিএনজি চালিত
অটোরিকশায় আবার কখনওবা মাইক্রোতে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে
হচ্ছে। রাস্তায় যারা বের হচ্ছেন তাঁদের সবাই একান্ত নিরুপায় হয়ে বের
হচ্ছেন। সরকারের উচিত দ্রুত গণপরিবহন খুলে দেওয়া।’
পাবনা জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি মো. রইজউদ্দিন বলেন,
‘আমাদের হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে আজ মানবেতর জীবন-যাপন
করছে। অথচ সম্পূর্ণ অবৈধভাবে মাইক্রোবাস ও সিএনজিচালিত
অটোরিকশায় যাত্রী বহন করা হলেও প্রশাসন কিছুই বলছে না। বাস চলাচল
স্বাভাবিক থাকলে সংক্রণের ঝুঁকি অনেক কম হতো বলে আমরা মনে করি।’
কাশিনাথপুর ট্রাফিক পুলিশ বক্সে কর্তব্যরত পুলিশ পরিদর্শক (শহর ও
যানবাহন) রবীন্দ্রনাথ ম-লকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান,
দুই-একটি সিএনজি চললেও কোনো মাইক্রোবাস ফুলবাগান মোড় থেকে
ছেড়ে যাচ্ছে না। বরং এগুলো যাতে সড়কে চলাচল না করে সে ব্যাপারে তাঁরা
কঠোর দৃষ্টি রেখেছেন বলে জানান।