আড়াইহাজার থেকে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে জামান (৪৫) হত্যাকান্ডের ঘটনায় চার আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছেন।মঙ্গলবার (১৬ জুন) সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মিল্টন হোসেন ও ফাহমিদা খাতুনের আদালতে এ জবানবন্দি প্রদান করে আসামিরা।জবানবন্দি প্রদান করা আসামিরা হলেন- সাইফুল (৩০), বাদশা (৩০), আজগর (৭৫) ও আক্তার (২৫)।
গত ২৯ মার্চ জামান (৪৫) নামের এক ব্যক্তি নিখোঁজের ঘটনার প্রেক্ষিতে তার ছোটভাই মোঃ জাকির হোসেন নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। তখন থেকেই অনেক খোঁজাখুজির এক পর্যায়ে ৩ দিন পর ৩১ মার্চ আড়াইহাজারের মাওরাদী এলাকায় হাত-পা বাঁধা ও দুই চোখ উপড়ে ফেলা অবস্থায় জামান এর লাশ পাওয়া যায়।পরে নিহত জামানের ছোট ভাই জাকির হোসেন বাদী হয়ে আড়াইহাজার থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
দীর্ঘ প্রায় আড়াই মাস নিবিড় তদন্তের পর গত কয়েদিন যাবৎ বেশ কয়েকটি স্থানে বিশেষ অভিযান চালিয়ে অবশেষে ১৩ জুন আড়াইহাজারের নাগেরচর এলাকা থেকে মূল হত্যাকারী সাইফুল ইসলামকে (৩২) গ্রেফতার করে র্যাব। গ্রেফতারের পরবর্তীতে আসামিকে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদে সে স্বীকার করে যে, এই নৃসংশ্য হত্যাকান্ডের সাথে সাইফুল জড়িত এবং তার পরিকল্পনায় ও কয়েকজন সহযোগীদের পরস্পর যোগসাজসে জামানকে হত্যা করেছে মর্মে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে।
তার দেয়া তথ্যমতে ঘটনায় জড়িত অপর এক সহযোগী আসামি বাদশাকে (৩০) ঐদিন রাতে বগাদি বাজার হতে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদেরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও অনুসন্ধানে জানা যায়, মোঃ সাইফুল ইসলামের বাড়ি নাগেরচর এবং বাদশার বাড়ি বগাদি এলাকায়। নিহত জামান পেশায় ছিলেন একজন অটোরিক্সা চালক। গ্রেফতারকৃত সাইফুল ইসলাম ও বাদশাদের সাথে ভিকটিম নিহত জামানের অটোরিক্সা নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ ছিল। তাছাড়া ঘটনার এক মাস পূর্বে পাওনা টাকা নিয়ে নিহত জামানের ভাই জাকির হোসেন সাইফুলকে রাস্তায় অপদস্থ ও অপব্যবহার করে। তার জের ধরে প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে সাইফুল ইসলাম, আক্তার ও বাদশাহকে নিয়ে জামানকে খুন করার পরিকল্পনা করে।
ঘটনার দিন জামানকে সাথে নিয়ে সাইফুল, আক্তার ও বাদশাহ একসাথে বাজারে যায় এবং সাইফুল বাজারে গিয়ে আক্তারকে গামছা কিনার জন্য ৪৫ টাকা দেয়। আক্তার গামছা কিনে নিয়ে আসার পর তারা তিনজন জামানকে সাথে নিয়ে নাগেরচর চৌরাস্তায় চা খায়। চা খাওয়ার পর তারা সবাই চৌরাস্তা ব্রীজের কাছে যায়। ব্রীজে পৌছার পর সাইফুল ইসলাম, আক্তার ও বাদশা দুষ্টামী করে জামানকে বলে তোর গলা ধরে মেরে ফেলবো। একই সময়ে বাদশা মাফ চাওয়ার কৌশলে জামানের পা ধরে টান দিয়ে জামানকে মাটিতে ফেলে দেয়। তারপর মূলহত্যাকারী সাইফুল ইসলাম জামানের গলা চেপে ধরে। তখন আক্তার বলে গলা চেপে ধরলে শব্দ হবে তার পরিবর্তে আক্তার গামছা দিয়ে মুখে ও গলায় প্যাচিয়ে ধরার পর ছুরি দিয়ে গলায় খুচিয়ে খুচিয়ে আঘাত করে মেরে ফেলে।
তারা জামানের মৃত দেহ পাশের কলাবাগানের ভিতরে ফেলে দিয়ে নিজ নিজ বাড়িতে চলে যায়।আড়াইহাজার থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) গাজী শামীম জানান, এ ঘটনায় র্যাব প্রথমে দুজনে আসামি গ্রেফতার করে পরে পুলিশ বাকি দুজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। গ্রেফতারকৃত আসামিরা উক্ত ঘটনার লোমহষর্ক বর্ননা দিয়ে আদালতে জবানবন্দী প্রদান করেছেন। তিনি আরো জানান, গ্রেফতারকৃতরা সবাই মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত ছিল।