গাজীপুর প্রতিনিধি
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে একটি সরকারি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম পুরণের কয়েক লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই কলেজের ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদক ও দু’জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে। খবর পেয়ে কলেজে বিক্ষোভ করেছে অটোপাশ বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় ছাত্রলীগের দুই পক্ষের চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
সোমবার (০১ ফেব্রুয়ারী) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করে কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনোয়ার হোসেন চৌধুরী জানান, এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের পক্ষে কালিয়াকৈর থানায় একটি অভিযোগ হয়েছে।
এইচএসসি পরীক্ষায় অটো পাশ বঞ্চিত শিক্ষার্থী ও কলেজ কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা এলাকার ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজে’ ২০১৯-২০ শিক্ষা বর্ষের টেস্ট পরীক্ষায় শতাধিক শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হলে তাদের এইচএসসি’র ফরম পুরণ আটকে যায়। এ সুযোগে ফরম পুরণের কথা বলে ওই কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি বিল্লাল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক মামুন মন্ডল অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার করে টাকা হাতিয়ে নেয়। তারা দু’জনে অসাধু কয়েকজন শিক্ষকের যোগসাজসে প্রায় কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ওই সময় প্রায় ৬০ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে টাকা আদায় করলেও ফরম পুরণ হয় মাত্র ২৭ শিক্ষার্থীর। করোনার কারণে সরকার এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের অটো পাশের সুযোগ করে দেন। অটো পাশের ফল প্রকাশের পর ক্ষোভে ফেটে পড়ে বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় গত শনিবার (৩০ জানুয়ারী) অটো পাশ বঞ্চিত শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান খান বাদী হয়ে ওই কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি বিল্লাল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক মামুন মন্ডলের নাম উল্লেখ করে কালিয়াকৈর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। গতকাল রোববার (৩১ জানুয়ারী) দুপুরে অটো পাশ বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা ওই কলেজ প্রাঙ্গনে বিক্ষোভ শুরু করে। খবর পেয়ে ওই কলেজ শাখার ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদক তাদের বিক্ষোভ থামাতে গেলে ছাত্রলীগের দুইপক্ষের চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এক পর্যায় সভাপতি-সম্পাদককে অবরোদ্ধ করে অফিস কক্ষের সামনে বিভিন্ন শ্লোগানে বিক্ষোভ করতে থাকে। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা দুর্নীতিগ্রস্থ ওই সভাপতি-সম্পাদকের বহিষ্কারও দাবী করে। পরে তারা কলেজ অধ্যক্ষকে আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে সুষ্ঠ সমাধানের সময় বেঁধে দেয়।
অটো পাশ বঞ্চিত শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান ও রাদিল হাসান জানান, আমরা প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী টেস্ট পরীক্ষায় ফেল করি। পরে কলেজ শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের কথা বলে তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা করে নিয়েছে। বিশ্বাস করে তাদের টাকা দিয়েছি। কিন্তু শনিবার এইচএসসি পরীক্ষার অটো পাশ দেন শিক্ষা মন্ত্রনালয়। সেখানে তাদের নাম না থাকায় বুঝতে পারেন তাদের ফরমপুরণের টাকা আত্মসাত করেছে।
অভিযুক্ত ওই কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি বিল্লাল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক মামুন মন্ডল জানান, তাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ ঠিক নয়। কলেজের কয়েকজন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফরমপুরণ বাবদ টাকা নিয়েছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ মো. মেজবাহ উদ্দিন সরকার বলেন, আমি যোগদানের আগেই ওই শিক্ষার্থীদের এইচএসসি পরিক্ষার ফরম পুরণের সময় শেষ হয়েছে। এ বিষয়টি মৌখিকভাবে আমাকে জানানো হয়েছে। এখন যেটা হয়েছে, সেটা পূরণ করার সুযোগ নেই। কিন্তু ওই শিক্ষার্থীদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে বিনা খরচে এ বছর পড়ানো ব্যবস্থা করা হবে।