আব্দুল আলীম খান পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ
মহামারী করোনার ভিতরে মানুষ যখন ঘরে আটকা পড়েছিল তখন অফিস-আদালত স্কুল-কলেজ বন্ধ ছিল, বিভিন্ন সময়ে আমরা দেখতে পেয়েছি নতুন নতুন কিছু উদ্ভাবন করেছিল অযথা সময় নষ্ট না করে,তারই ধারাবাহিকতায় পটুয়াখালীতে বাংলাদেশে তৃতীয় বাগান পবিত্র কুরআন শরীফে উল্লেখিত বরকতময় ও ঔষধি গুণসম্পন্ন ত্বীন ফলের বাণিজ্যিক চাষ শুরু করেছে পটুয়াখালী জেলা শহরের উত্তর পাড় টেংরাখালী গ্রামে ৩০শতাংশ জমিতে।
উদ্যোক্তা একজন গুণী মানুষ সাংবাদিক, কবি ও সংস্কৃতিজন জাহাংগীর হোসাইন মানিক জানায়, বাগানে ত্বীন ফলের ৫টি প্রজাতির ১১৩টি উচ্চফলনশীল গাছ লাগানো হয়েছে। গাছে ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ফল আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাগানে জয়তুন, দক্ষিণ আমেরিকার বিখ্যাত ফল পেপিনো মেলনসহ , পৃথিবী বিখ্যাত ৩৫ প্রজাতির আমসহ দেশীয় বিলুপ্ত প্রায় বিভিন্ন প্রজাতির ফুল, ফলের গাছ ও সমৃদ্ধ একটি নার্সারি রয়েছে।
প্রতিদিন প্রচুর দর্শনার্থী বাগান দেখতে আসছেন এবং মরুভূমি অঞ্চলের ফল ত্বীন চাষাবাদের কৌশল ও এর উপকারিতা জেনে কেউ নতুন বাগান করতে আগ্রহী হচ্ছে তিনি আরো বলেন উপকারিতা, ফলন গুনাগুন দেখে, আর্থিকভাবে বাণিজ্যিক করলে স্বাবলম্বী হবে বেকার যুবক।
ত্বীন ফলের পরিচয়-কুরআনে যে ত্বীনের কথা উল্লেখ রয়েছে সেটির বৈজ্ঞানিক নাম Ficus carica। ফাইকাস দলভুক্ত ৮০০ প্রজাতির মধ্যে এই তীন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সবার আগে স্থান। এটি দেশীয় কাকডুমুর থেকে বড়। স্বাদে সুমিষ্ট, অত্যধিক সুস্বাদু এবং রসালো। এককথায়, স্বাদে, ঘ্রাণে এবং পুষ্টিগুণে সেরা একটি ফলের নাম তীন। তীন গাছ তিন থেকে দশ মিটার পর্যন্ত বড় হয়। ঘন এবং খসখসে পাতায় ভরপুর থাকে। উর্দুতে এর ফলকে আঞ্জির বলা হয়। পৃথিবীর অনেক দেশে এর চাষাবাদ হয়। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য এবং পশ্চিম এশিয়ায় এটি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা হয় এবং এটি হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল। আফগানিস্তান থেকে পর্তুগাল পর্যন্ত এই ফলের বাণিজ্যিক চাষ হয়ে থাকে। এর আদি নিবাস মধ্যপ্রাচ্য। সবচেয়ে বেশি চাষ হয় তুরস্কে। বৎসরে তিন লক্ষ টনের বেশি উৎপাদন হয় সেখানে। পরেই আছে মিশর, মরক্কো, আলজেরিয়া, ইরান এবং সিরিয়া।
ত্বীন ফলের গুনাগুন ও পুষ্টি ও উপকারিতা-ত্বীনে আছে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-কে, ভিটামিন-বি, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, জিংক, কপার, আইরন ইত্যাদি।
এতকিছু উপকারী উপাদান থাকলেও ক্যালরি এবং ফ্যাট নেই বললেই চলে। মোটা হয়ে যাওয়ার চিন্তা ঝেড়ে ফেলে পেটভর্তি খাওয়ার মতো একটি ফল তীন। বড় সাইজের একটি তীনে মাত্র ২ গ্রাম ফ্যাট থাকার কথা খাদ্য বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন। ডায়েটেড এবং ফিট থাকতে চাইলে তীন সবচেয়ে কার্যকর ফল। আর এন্টিঅক্সিডেন্ট-এর তীনের চেয়ে ভালো ফল আর নেই বললেই চলে।
প্রোস্টেট এবং জরায়ু ক্যান্সারের প্রতিষেধক হচ্ছে তীন। ব্লাড প্রেসার এবং স্নায়ুরোগ কমাতে দারুণ কার্যকর। মায়ের বুকে দুধ উৎপাদনে তীনের জুড়ি মেলা ভার। পাইলসে ভোগা ব্যক্তিরা অসাধারণ ঔষধ হিসাবে তীন খেতে পারেন। গরুর দুধে এলার্জি থাকলে তীন খান। ক্যালসিয়ামের ঘাটতি নিয়ে আর চিন্তা করতে হবে না।
ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণ, হাঁপানি রোগ, শ্বাসকষ্ট, ত্বক সমস্যা, চুলের রোগে তীন সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখে। গর্ভবতী মহিলাদের এসিডিটি নির্মূল করে তীন। কিডনি, লিভার, ইউরিনারি ব্লাডারের কার্যকারিতা বহুগুণে বৃদ্ধি করে। শরীরের দুর্বলতা দূর করে আনে সজীবতা আর অদম্য শক্তি। তীন ফলের উপকারিতা লেখতে চাইলে শেষ করা কষ্টকর হয়ে যাবে।
আল্লাহর রাসুল (সা.) তীন ফল অনুসারীদের মধ্যে বণ্টন করে দেয়ার সময় বলতেন, ‘এটি খাও, কারণ এতে অনেক রোগের ঔষধ রয়েছে।’
সুতরাং তীনের তরজমা শুধুমাত্র ডুমুর দিয়ে যারা করেন তারা একটা ভুল অর্থ দাঁড় করিয়ে দিচ্ছেন। এ দেশীয় মানুষদের মগজে এমন একটি ফলের চিত্র এঁকে দেয়া হচ্ছে যা মানুষের খাওয়ার একদম অনুপযোগী। পাখপাখালির খাবার শুধু। এমনকি ডুমুরের নাম শুনলে অনেকে বিরক্তিভাব প্রকাশ করেন।
তীনের ইংরেজি প্রতিশব্দ হচ্ছে Fig। আর এই তীন এদেশের মানুষের কাছে একদমই অপরিচিত এক ফল।
আমাদেরকে কুরআনিক শব্দ নিয়ে গভীরে ডুব দিতে হবে। ভাবতে হবে মনোযোগে। তারপর মুক্তা তুলে তা প্রচার করতে হবে।
আল্লাহ যে ফলের শপথ করেছেন তা যেনতেন কোনো ফল নয়। অবশ্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং উপকারী তো বটেই।