বিল্লাল হোসেন,যশোর প্রতিনিধি
যশোরে এক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে স্ত্রীকে নির্যাতনের পর আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার তিন দিন পর রোববার পিতা পক্ষের লোকজন তাকে উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। আহতের নাম নাজিয়া ইসলাম (৩২)। তিনি খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কর্মরত ম্যাজিস্ট্রেট ও যশোরের কুয়াদা গ্রামের একেএম তারিকুজ্জামানের স্ত্রী। নাজিয়া ইসলাম ও তার ভাইয়ের অভিযোগ, মাদক সেবন ও পরকীয়ার প্রতিবাদ করার জেরে নির্যাতন করা হয়। এই ঘটনায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তারিকুজ্জমানসহ ৫ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে বলে গৃহবধূর ভাই মৃদুল ইসলাম জানিয়েছেন।
নাজিয়া ইসলাম জানান, গত ২১ জানুয়ারি স্বামীর গ্রামের বাড়ি যশোরের মণিরামপুর উপজেলার কুয়াদায় থাকা অবস্থায় আমাকে মারপিট ও নির্যাতন করে স্বামী একেএম তারিকুজ্জামান। তার অন্য নারীর সাথে পরকীয়া সম্পর্ক রয়েছে। আবার নিয়মিত মাদক সেবনও করেন। এসবের প্রতিবাদ করার কারণে দীর্ঘদিন ধরে তিনি আমার ওপর ক্ষুব্ধ। ঘটনার রাতেও আমার স্বামী মোবাইলে অন্য নারীর সাথে কথা বলছিলেন। কার সাথে কথা বলছিলো সেটা জিজ্ঞেস করার সাথেই আমার ওপর হামলে পড়ে। কাঠ দিয়ে মারপিট করাসহ নানাভাবে নির্যাতন করা হয়। এরপর মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে ঘরে আটকে রাখে। পরের দিন শুক্রবার সকালে আমাকে নিয়ে যাওয়া হয় ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা এলাকায় বসবাসকারী আমার ভাসুর রাসেলের বাড়িতে। শারীরিক যন্ত্রনায় ছটফট করলেও চিকিৎসাসেবাও দেয়া হয়নি। একপ্রকার আমাকে ঘরের মধ্যে আটকে রাখা হয়েছিলো।
নাজিয়া ইসলাম আরও জানান, এর আগে স্বামীর বিরুদ্ধে তিনি যৌতুক ও নির্যাতনের দুটি মামলা করেছেন। যা বিচারাধীন রয়েছে। ৬ বছর আগে তার স্বামীর বিরুদ্ধে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় অভিযোগ করেন মাদক গ্রহণ ও অসাদাচরণের। এর জন্যে তাকে ভৎসনার পাশাপাশি ওএসডি করা হয়। গত ৬ মাস আগে পারিবারিকভাবে মীমাংসা হওয়ার পরে একসাথে থাকা শুরু করার সময় তার বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করলে কাজে যোগদানের সুযোগ পায়। এরপর থেকে আমাকে নিয়মিত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। বিভিন্ন নারীর সাথে মোবাইল ফোনে কথপকথন হয়। নাজিয়া ইসলাম জানান, দাম্পত্য জীবনে তিনি ১ ছেলে ও ১ মেয়ে সন্তানের জননী। পরকীয়ায় আসক্ত ও মাদক সেবনকারী স্বামীর বিচার দাবি করেন নাজিয়া। আহতের ভাই মৃদুল ইসলাম জানান, আমার ভগ্নিপতি পরনারী আসক্ত। কারণে অকারণে আমার বোন নাজিয়াকে তিনি নির্যাতন করেন। সর্বশেষ তাকে নির্যাতনের পর আটকে রাখা হয়। খবর পেয়ে রোববার সকালে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। এই ঘটনায় ভগ্নিপতি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট একেএম তারিকুজ্জামানসস ৫ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। জরুরি বিভাগের ইনচার্জ ডা. আব্দুর রশিদ জানিয়েছেন, মারপিটের রোগী হিসেবে নাজিয়া ইসলামকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সার্জারী ওয়ার্ডে তার চিকিৎসাসেবা চলছে। যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ তাসমীম আলম জানান, অভিযোগ এখনো হাতে পায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই বিষয়ে নির্বাহী ম্যজিস্ট্রেট একেএম তারিকুজ্জামান জানান, আমার পিতা-মাতার সাথে দুর্ব্যবহার করায় নাজিয়াকে একটু শাসন করা হয়েছে। কিন্তু অতিরঞ্জিত করে বলা হচ্ছে।