বিল্লাল হোসেন,যশোর প্রতিনিধি
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালকে ঘিরে অর্থবাণিজ্য ও অনিয়ম চলছে। অভিযোগ উঠেছে, হাসপাতালে সরকারিভাবে গজ,ব্যান্ডেজ,তুলা, গ্লোবস ও ক্যাথেটার, ইউরিন ব্যাগ সরবরাহ থাকলেও রোগীরা পাচ্ছে না। ওষুধ বিতরণেও করা হচ্ছে অনিয়ম। আবার বখশিসের নামে হাতানো হচ্ছে টাকা। চাহিদামতো টাকা না পেলে রোগীর কাছে যাননা কর্মচারীরা। টাকা হাতানোর ক্ষেত্রে রাজস্ব কর্মচারীরা একটু কৌশল ও বহিরাগতরা রোগী ও স্বজনদের জিম্মি করে অর্থ আদায় করছেন বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন।
জানা গেছে, হাসপাতালের জরুরি বিভাগ,অস্ত্রোপচার কক্ষ,পুরুষ ও মহিলা সার্জারী ওয়ার্ড,পুরুষ ও মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ড, পুরুষ ও মহিলা পেয়িং ওয়ার্ড, মডেল ওয়ার্ড, লেবার ওয়ার্ড, গাইনী ওয়ার্ড,সংক্রামক ওয়ার্ড এবং শিশু ওয়ার্ডে রাজস্ব কর্মচারিদের পাশাপাশি বহিরাগতরাও দায়িত্ব পালন করেন। কর্মচারিরা দায়িত্বের চেয়ে অর্থকে বড় করে দেখছেন। সূত্র জানায়, কর্মচারিরা টাকা ছাড়া রোগীদের কোন কাজ করেননা এমন রেওয়াজ অনেক দিন ধরে। কিন্তু করোনার শুরু থেকে বিষয়টি আরো জোরদার করা হয়েছে। টাকার পরিমাণও বাড়ানো হয়েছে। বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রোগীর স্বজন আব্দুল মান্নান, শফিয়ার রহমান, জাহিদুল ইসলামসহ অনেকেই জানান, দায়িত্বরত কর্মচারিকে কোন কাজের কথা বললেই তারা টাকার প্রশ্ন তোলে। অসহায় মুহুর্তে তারাও কর্মচারিদের টাকা দিতে বাধ্য হয়। কেননা চাহিদামতো টাকা না দিলেই পরবর্তীতে আর কোন কাজ করেনা তারা। ডাকলেও রোগীর কাছে আসতে চাইনা। কয়েকবার ডাকলেই মারমুখি আচরণ করা হয়। প্রসূতি ওয়ার্ড থেকে ছাড়পত্র নিয়ে ফেরার পথে রোগীর স্বজন দেলোয়ার হোসেন জানান, তাকে দুই দফায় টাকা গুণতে হয়েছে। একবার অস্ত্রোপচার কক্ষে। আরেকবার ছাড়পত্র নিয়ে ওয়ার্ড থেকে বের হওয়ার সময়। বখশিসের নামে এভাবে টাকা আদায় করা হয়েছে। ভুক্তভোগী আরো দুইজন জানান, প্রসূতি ওয়ার্ডে ছেলে সন্তান হলে দাবি করা হয় দেড় হাজার টাকা। আর মেয়ে সন্তান হলে পাঁচ থেকে এক হাজার। একই পরিমাণে টাকা দাবি করা হয় অস্ত্রোপচার কক্ষে। সিজারের পর স্বজনদের কাছে নবজাতক তুলে দেয়ার সময় টাকা দাবি করা হয়। চাহিদার তুলনায় কম টাকা টাকা না দিলে রোগীর খারাপ আচরণ করে ওয়ার্ডবয় ও আয়া। হাসপাতালের একটি সূত্র জানিয়েছে, বহিরাহত কর্মচারিদের কারণে এই বখশিস বানিজ্যে টাকার পরিমান বেড়েছে। তারা রোগীদের জিম্মি করে প্রকাশ্যে টাকা আদায় করে। বর্তমানে সরকারি এই হাসপাতালে ৫২ জন বহিরাগতরা বিনা বিতনে কাজ করছে। অর্থবাণিজ্যে বহিরাগতদের চেয়ে পিছিয়ে নেই রাজস্ব কর্মচারিরাও। তবে তারা কৌশলে চাঁদাবাজি করে। বিভিন্ন অজুহাতে হাতিয়ে নেয়টাকা। এদিকে, সরকারি এই হাসপাতালে গজ ব্যান্ডেজ, তুলা ,গ্লোবস ও ক্যাথেটার, ইউরিন ব্যাগ সরবরাহ থাকলেও রোগীরা পাচ্ছেনা। প্লাস্টারের নামেও অর্থ হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে।
রোগীর স্বজন বরিউল ইসলাম জানান নামে একজন জানান, সম্প্রতি তার এক রোগীকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়া যাওয়া হয়। সেখানে রোগীর প্লাস্টার ও ক্ষতস্থান সেলাই করা বাবদ ৭শ ৫০ টাকা নেন দায়িত্বরত কর্মচারি। এছাড়া ওয়ার্ড ও বর্হিবিভাগে প্লাস্টারের নামে আগের চেয়ে দ্বিগুনেরও বেশি পরিমাণ টাকা আদায় করা হচ্ছে। প্লাস্টারের পাশাপাশি কেনানো হচ্ছে গজ ব্যান্ডেজ তুলা। আশাদুল ইসলামসহ আরো কয়েকজন জানান, রোগীর রাইস টিউব এবং ক্যাথেটার জেলিকা, গ্লাাভস কিনেছেন বাইরে থেকে। ক্যাথেটার ও রাইস টিউব লাগাতে দুই দফায় ৬শ’ টাকা দিয়েছেন কর্মচারিকে। তিনি আরো জানান, বাইরে থেকে কিনে আনা অধিকাংশ সামগ্রী সরকারিভাবে সরবরাহ থাকলেও রোগীকে দেয়া হচ্ছে না। তাহলে এসব সামগ্রী যাচ্ছে কোথায়। বিনামূল্যের মালামাল না পেয়ে ক্ষুব্ধ রোগীর স্বজনরা। কিন্তু অনিয়মের প্রতিবাদ করার সাহস দেখায় না তারা। তাদের অভিযোগ, অনিয়ম ও চাঁদাবাজির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ কঠোর না হওয়ার কারণে তারা দিনে দিনে বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। সার্জারী ওয়ার্ড ও মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন তিনজন রোগী জানান, সরকারি ওষুধও ঠিকমেতা ভাগ্যে জোটছেনা। এমনকি গ্যাসের ইনজেকশনও বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়েছে। এই বিষয়ে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আরিফ আহমেদ জানান, রোগীর স্বজনদের জিম্মি করে অর্থবাণিজ্য বন্ধ করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। রাজস্ব কর্মচারিদের কড়াকড়িভাবে সতর্ক করা হয়েছে। আর বহিরাগতদেরও নিয়মের মধ্যে আনার প্রক্রিয়া চলছে। আরএমও আরো জানান, গজ,ব্যান্ডেজ, গ্লোবস ও ক্যাথেটার, ইউরিন ব্যাগ পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ রয়েছে। চাহিদাপত্র অনুযায়ী ইনচার্জদের বুঝিয়ে দেয়া হয়। গত ১ সপ্তাহ ধরে তুলার একটু সংকট চলছে। কয়েকদিনের মধ্যে তুলা সংকটও কেটে যাবে। চিকিৎসাসামগ্রী না পাওয়ার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।