গাজীপুরের টঙ্গীতে গৃহকর্মী নুরুন্নাহার বেগমের (১৮) আত্মহত্যার প্রায় ১০ মাস পর ময়নাতদন্তে বেরিয়ে এলো ধর্ষণের ঘটনা। বিয়ের প্রলোভনে তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করে হাবিবুর রহমান হাবিব (২২) নামে এক হোটেল বাবুর্চি। গত সোমবার ধর্ষক হাবিবকে হবিগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করে টঙ্গী পূর্ব থানা পুলিশ।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের সত্যতা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন তিনি।
আজ মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে টঙ্গী পূর্ব থানায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এঘটনা তুলে ধরেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার অপরাধ (দক্ষিণ) ইলতুৎ মিশ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার শাহাদাত হোসেন, টঙ্গী পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম প্রমূখ।
পুলিশ জানায়, নূরুন্নাহার মধ্য আরিচপুর শেরে বাংলা রোডের মোশারফ হোসেনের বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করতেন। ওই বাসার পাশেই একটি হোটেলে বাবুর্চি হিসেবে কাজ করতো হাবিব।
তাদের উভয়েরই গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর থানায়। টঙ্গীতে পাশাপাশি বাসায় বসবাস করার সুবাদে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। একপর্যায় নূরুন্নাহারকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার তার সাথে অবৈধ মেলামেশা করেন হাবিব। নূরুন্নাহার পরে হাবিবকে বিয়ের জন্য চাপ দিলে বিয়ে করবে বলে কালক্ষেপণ করতে থাকে।
এসময় হাবিবের পরিবার নূরুন্নাহারের অভিভাবকদের কাছে দুই লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। যৌতুকের টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় তাদের বিয়ে থেমে যায়। এরপর গত ৪ জানুয়ারি হাবিবের সাথে মোবাইল ফোনে নূরুন্নাহারের কথা কাটাকাটি হয়। এসময় হাবিব নূরুন্নাহারকে গালিগালাজ করেন। এর কিছুক্ষণ পর নূরুন্নাহার তার বাসায় সিলিং ফ্যানের সাথে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন।
এঘটনায় ওইদিন টঙ্গী পূর্ব থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়। পরে প্রায় ১০ মাস পর ময়নাতদন্তে ভিকটিম নূরুন্নাহার যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মর্মে ময়না তদন্ত রিপোর্ট আসে পুলিশের হাতে।
পরে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার অপরাধ (দক্ষিণ) ইলতুৎ মিশের নির্দেশে একদল পুলিশ ওইদিনই তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর থানার পুড়াইখলা গ্রাম থেকে হাবিবুর রহমান হাবিবকে গ্রেফতার করে টঙ্গী পূর্ব থানায় নিয়ে আসে। পরে সে থানায় নূরুন্নাহারকে ধর্ষণের কথা স্বীকার করে ১৬১ ধারায় জবানবন্দি দেয়। পরে আজ মঙ্গলবার দুপুরে হাবিবুর রহমান হাবিবকে আসামী করে টঙ্গী পূর্ব থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা শেষে গাজীপুর আদালতে প্রেরণ করা হয়।
এ ব্যাপারে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার অপরাধ (দক্ষিণ) ইলতুৎ মিশ বলেন, তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে মামলার আসামি ধর্ষক হাবিবুর রহমান হাবিবকে হবিগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৪ জানুয়ারি মধ্য আরিচপুর শেরে বাংলা রোডের নিজ বাসায় গৃহকর্মী নূরুন্নাহার সিলিং ফ্যানের সাথে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে।