পীরগঞ্জে প্রায় গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ আর উজান থেকে আসা পানির কারনে সৃষ্ট বন্যায় ২০ কোটি টাকা মুল্যের মাছ ভেসে গেছে। এতে প্রায় সাড়ে ৩ সহস্রাধিক মৎস্য চাষীর স্বাবলম্বি হবার স্বপ্ন বানের পানিতে ভেসে গেছে। যারা ঋণ নিয়ে মাছ চাষ করে স্বামলম্বি হবার স্বপ্ন দেখছিলেন তাঁরা এখন চোখে সরষে ফুল দেখছেন।
গত কয়েক দিনের বন্যায় উপজেলার চৈত্রকোল, কুমেদপুর, মদনখালী, টুকুরিয়া, বড়আলমপুর, চতরা ও কাবিলপুর ইউনিয়নের মৎস্য চাষীরা সর্বাধিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে বলে প্রাথমিক জরিপে জানাগেছে।
উপজেলা মৎস্য বিভাগের তথ্য মতে, উপজেলায় এবারে মৎস্য চাষকৃত পুকুরের মোট আয়তন ছিল ৬৭৯ হেক্টর আয়তনের জমিতে উপজেলার ৪ হাজার ৫’২৭ জন মৎস্য চাষী মৎস্য চাষ করেন। তন্মধ্যে ৩ হাজার ১’শ ৬৮ জন মৎস্য চাষীর পুকুরের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে যাওয়ায় তাঁরা সম্পুর্ণ বা আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
চৈত্রকোল ইউপির মৎস্য চাষী আব্দুস সালাম মিয়া জানান- ১ একর করে পৃথক ২টি পুকুরে তিনি মাছ চাষ করেছেন। বন্যার পানি আর পুকুরের পানি সমান্তরাল হওয়ায় দেড় থেকে ২ কেজি ওজনের ৪ লক্ষাধিক টাকার মাছ বন্যার পানির কারনে বেরিয়ে গেছে। ফলে এবারে তাকে মোটা অংকের টাকা লোকসান গুনতে হবে।
সিআইজি দলের সদস্য টুকুরিয়া ইউপির ছাতুয়া গ্রামের মানিক মিয়াা বলেন- পরিবারের অভাব ঘোচানোর আশায় সিআইজি দলের সদস্য হয়ে উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে মাছ চাষের প্রশিক্ষণ গ্রহন করেন। তিনি প্রশিক্ষণকে কাজে লাগিয়ে নিজের ৪০ শতাংশ পুকুরে মৎস্য অফিসের পরামর্শ অনুয়ায়ী প্রদর্শনী মাছের চাষ মাছ করেন। মাছও বেশ ভাল উৎপাদন হয়েছিল। কিন্তু পুকুরের সব মাছ বন্যার পানিতে ভেসে যাওয়ায় তার আশায় গুড়ে বালি হয়েছে।
চতরা ইউপির মৎস্য চাষী কায়কোবাদ মন্ডল ছাবু জানান- তাঁর ১ একর পুকুরে রুই কাতলাসহ কার্প জাতীয় অন্যন্য মাছচাষ করেছিলেন। মাছ গুলো প্রায় দেড় থেকে ২ কেজি ওজনের হয়েছেলি । কিন্তু ঘন বর্ষা আর উজান থেকে আসা পানির কারনে হঠাৎ বন্যা হওয়ায় পুকুরের মাছগুলো বন্যায় গাভাসিয়েছে। ফলে এবারে মাছ চাষ করে ২ লক্ষাধিক টাকা লোকসান গুনতে হবে তাকেও।
উপজেলার কুমেদপুর ইউনিয়নের মাহমুদপুর গ্রামের ৩ ভাইয়ের ৯ সদস্যের যৌথ পরিবার দেখভালকারী মকবুল হোসেনের ছেলে মৎস্য চাষী মনজুর হোসেন জানান- তিনি উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে প্রায় ২ বছর আগে উন্নত পদ্ধতিতে মাছ চাষের প্রশিক্ষন নিয়ে নিজেদের ১ একর জমিতে মাছ চাষ শুরু করেন। এবারও ওই পুকুরে রুই-কাতলা অর্থাৎ কার্প জাতীয় মাছ চাষ করে ছিলেন।
মাছগুলো বেশ বড়ও হয়েছিল । কিন্তু হটাৎ করে ১ দিনের বৃষ্টিতে তাঁর পুকুরের পাড়ের ওপর হাটু পরিমানের বেশী পানি ওঠায় পুকুর আর মাঠ পানিতে একাকার হয়ে যাওয়ায় পুকুর থেকে কম পক্ষে ৪ লাখ টাকা মুল্যের ৫৫/৬০ মন মাছ বেরিয়ে যাওয়ায় তিনি অর্থনৈতিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন।
খয়েরবাড়ী (আনন্দ নগর)এ প্রায় ৭০ একর আয়তনের ৭টি পুকুর লীজ নিয়ে মাছ চাষ করেছিলেন মৎস্য চাষী হাজী পলাশ ওই সব পুকুরে মাছ চাষ দেখভালকারী কেয়ার টেকার আতোয়ার রহমান জানান, চলতি বছর পুকুর গুলোতে উন্নত জাতের পাবদা, গুলসা ট্যাংরা, রুই-কাতলাসহ কার্প জাতীয় অন্যান্য মাছ চাষ করা হয়। মাছের উৎপান হয়েছিল মনে ধরার মতো।
এখানকার মাছ বাংলা হিলিসহ দেশের ভিভিন্ন এলাকার আড়তে সরবরাহ দেয়া হয়ে থাকে। কিন্তু হঠাৎ করে বন্যার পানি পুকুরের পাড়ের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় প্রায় সব মাছ পানিতে ভেসে যাওয়ায় এ বছরে ২৫/৩০ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হবে।
সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসার আমিনুল ইসলাম বলেন- তিনি ইতোমধ্যে বন্যায় উপজেলার সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্থ কুমেদপুর, মদনখালী, টুকুরিয়া, শানেরহাট, পাঁচগাছী, চতরা ও কাবিলপুর সরেজমিন পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্থ মৎস্য চাষীদের তালিকা প্রনয়ন ও ক্ষয়ক্ষতির আনুমানিক মুল্য নির্ধারণ করে উর্ধ্বতণ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।
অন্যান্য ইউনিয়নে তালিকা প্রনয়নের কাজ দ্রুত চলছে। এবারের হঠাৎ ঘন বর্ষণ আর উজানের পানিতে হাঠাৎ সৃষ্ট বন্যায় ১টি পৌরসভাসহ ১৫টি ইউনিয়নের ৮০ শতাংশ পুকুরের কমপক্ষে ২০ কোটি টাকা মুল্যের প্রায় সাড়ে ১৬ মেঃটন মাছ পুকুর ওভার ফ্লো হয়ে বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। ক্ষতিগ্রস্থ মৎস্যচাষীরা তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে যাতে করে রুপালী ফসল মাছ পুনঃরায় চাষ করতে পারেন এজন্য স্পীকারের মাধ্যমে মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের সচিব বরাবর আবেদন করা হচ্ছে।