মানবপাচার মামলায় জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত নৃত্যশিল্পী ও কোরিওগ্রাফার ইভান শাহরিয়ার সোহাগের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
সোমবার ঢাকা মহানগর হাকিম বেগম ইয়াসমিন আরা শুনানি শেষে এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি পুলিশের উপ-পরিদর্শক মানবপাচার ও আন্তর্জাতিক দালাল চক্রের সঙ্গে জড়িতদের ব্যাপারে জিজ্ঞাবাদের জন্য ইভানের বিরুদ্ধে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন।
ঢাকা মহানগর হাকিম মাহমুদা বেগম ইভানের উপস্থিতিতে রিমান্ড শুনানির জন্য এদিন ধার্য করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রিমান্ড আবেদনে উল্লেখ করেন, গত ১১ সেপ্টেম্বর ইভান শাহরিয়ার সোহাগকে গুলশান নিকেতন এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরের দিন আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আসামিরা ভুক্তভোগীদের নাচ শিখিয়ে ভালো বেতনে বিদেশে পাঠানোর প্রস্তাব করেন।
তাদের প্রস্তাবে ভুক্তভোগীরা রাজি হলে তাদের থাকা-খাওয়া নিশ্চিত করাসহ ক্লাবে নাচ-গান করার বিনিময় প্রতিমাসে ৫০ হাজার টাকা বেতন দেয়া হবে বলে মৌখিক চুক্তি হয়।
ভুক্তভোগীরা সরল বিশ্বাসে আসামিদের ওপর ভরসা করে দুবাইসহ অন্যান্য দেশে যেতে রাজি হয়। আসামি আজম খান, তার ভাই নাজিম ও এরশাদের সহায়তায় ভুক্তভোগী ময়নার পাসপোর্ট ও প্রয়োজনীয় কাজগপত্র প্রস্তুত করা হয়।
তারপর ২০১৯ সালের মে মাসে ময়নাকে দুবাইয়ের সারজা নিয়ে যায়। পরবর্তীতে আজম খান সেখানে নিয়ে ময়নাকে নিজেসহ বিভিন্ন লোক নিয়ে যৌন নির্যাতন চালায়। কিন্তু দুবাই গমনের পর আসামিরা ময়নাকে কোনো বেতন দেয়নি। এভাবে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে বিবাদি নির্মল দাস, আলমগীর, আমান ও শুভসহ অজ্ঞাতনামা এজেন্টের সহায়তায় ভুক্তভোগী আলেয়া ও মনি আক্তারদের ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় ড্যান্স ক্লাব থেকে প্রলোভনের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়।
এভাবে বহু বাংলাদেশি নারীর সরলতার সুযোগ নিয়ে আসামিরা দুবাইসহ অন্যান্য দেশে পাচার করে এবং জোরপূর্বক আটক রেখে যৌন নির্যাতন চালায়।
আসামি নির্মল চন্দ্র দাসকে গত ১৩ আগস্ট গ্রেফতার করলে তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দিতে বলেন, ইভান বিদেশে পারফর্ম করার জন্য অধরা ও বিথী নামে দু’জন আর্টিস্ট দেন। আসামি ইয়াছিনকে ২০ আগস্ট গ্রেফতার করলে তিনিও আদালতে স্বীকোরোক্তিমূলক জবানবন্দিতে একই কথা বলেন।
আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশি তরুণীদের দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করছে। তাদের বিরুদ্ধে তিনজন ভুক্তভোগী ইতোমধ্যে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। আসামিরা আন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্রের সক্রিয় সদস্য। মামলার মূল রহস্য উদঘাটন, পলাতক আসামিদের গ্রেফতার ও আসামিদের সাথে আন্তর্জাতিক দালাল চক্র সম্পর্কে জানার জন্য ইভানকে রিমান্ডে নেয়া প্রয়োজন বলে আবদনে উল্লেখ করা হয়।
বহু বাংলাদেশি নারীর সরলতার সুযোগ নিয়ে দুবাইসহ অন্যান্য দেশে পাচার এবং জোরপূর্বক আটক রেখে যৌন নির্যাতন করার অভিযোগে লালবাগ থানায় সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার মৃনাল কান্তি শাহ গত ২ জুলাই মূলহোতা আজম খানসহ নয়জনের বিরুদ্ধে মানবপাচার আইনে একটি মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরো অনেককে আসামি করা হয়েছে ।
মামলার আসামিরা হলেন- আলামিন হোসেন ওরফে ডায়মন্ড (২৬), স্বপন হোসেন (২৮), আজম খান (৪৫), নাজিম (৩৬), এজেন্ট- এরশাদ, নির্মল দাস, আলমগীর, আমান ও শুভ।