সড়ক দুর্ঘটনায় যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমুল ইসলাম কাজলসহ চারজন নিহত হয়েছেন। সোমবার বিকেলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার নয়াপাড়া নামক স্থানে ট্রাক ও পাজেরোর মুখোমুখি সংঘর্ষে এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, বাঘারপাড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও করিমপুর গ্রামের ইউছুপ আলীর ছেলে নাজমুল ইসলাম (কাজল),
একই গ্রামের আরিফুল ইসলাম ও ঢাকার তালতলা এলাকার সুমন মিয়ার মেয়ে আঁখি (২০)। তাৎক্ষণিকভাবে নিহত অপর একজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। পাজেরো গাড়িতে থাকা আহত মাগরিফাত মিম ওরফে নওরিন তিনিও ঢাকার তালতলা এলাকার বাসিন্দা।
নাজমুল ইসলাম কাজলের মৃত্যুতে যশোরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার মৃত্যুতে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ রুহের মাগফেরাত ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।
শায়েস্তাগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশের ওসি তৌফিকুল আলম জানান, সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সিলেট থেকে ঢাকাগামী একটি পাজেরো (ঢাকা মেট্রো ঘ-১১-২০১৫) নয়াপাড়া এলাকায় পৌঁছুলে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই পজেরো গাড়িতে থাকা দুজন পুরুষ মারা যান। মাধবপুর ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা আহত ৩ জনকে উদ্ধার করে মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত চারজনের মধ্যে তিনজনের পরিচয় পাওয়া গেছে।
দুর্ঘটনার পর ঢাকা সিলেট মহাসড়কের দু’পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। ঘটনার খবর পেয়ে মাধবপুর ফায়ার সার্ভিসের একদল কর্মী ট্রাকের নিচে ঢুকে পড়া পাজেরো গাড়ি কেটে হতাহতদের উদ্ধার করেন। শায়েস্তাগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে পাঠিয়েছে।
এদিকে, যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা নাজমুল ইসলাম কাজলের অকালমৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
সোমবার সন্ধ্যায় তার মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ ও গণমাধ্যমে শোক প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগ, সংসদসহ দলীয় নেতার্মীরা।
বাঘারপাড়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আবদুর রউফ বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য নাজমুল ইসলাম কাজলের পাথর ও ঠিকাদারি ব্যবসা ছিল। তিনি ব্যবসায়িক কাজে হবিগঞ্জে গিয়েছিলেন।
সেখান থেকে ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। পরিবারের সদস্যরা তার মরদেহ আনতে গিয়েছেন। মঙ্গলবার মরদেহ আসবে। এরপর কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, নাজমুল ইসলাম কাজল জামদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন ২০০৩-২০১১ সাল পর্যন্ত। সে সময় তিনি স্বর্ণপদকও অর্জন করেছিলেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জনপ্রিয় নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ২০১৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হন।
ওই বছর ৩১ মার্চ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিপুল ভোটে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তার ভাই কামরুল ইসলাম টুটুল জামদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান। নাজমুল ইসলাম কাজলের শ^শুর খুলনা-৪ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য মোল্লা জালাল উদ্দীন। নাজমুল ইসলাম কাজলের দুই ছেলেমেয়ে রয়েছে। কাজল ছাত্রজীবনে নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। এরপর তিনি বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন।
বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের গত নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। একইসাথে কাজল যশোর জেলা আওয়ামী লীগেরও বিগত কমিটির সদস্য ছিলেন।
অপরদিকে, নাজমুল ইসলাম কাজলের অকালমৃত্যুতে বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর) আসনের সংসদ সদস্য রণজিৎ কুমার রায়, যশোর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি অ্যাড. মনিরুল ইসলাম মনির, চৌগাছা পৌরসভার মেয়র নূর উদ্দীন আল মামুন হিমেল, বাঘারপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানিয়া আফরোজ, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বিথীকা বিশ্বাস,
ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ প্রমুখ।
অনুরূপ এক পৃথক বিবৃতিতে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী) যশোর জেলা কমিটির সভাপতি নাজিম উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক বামনেতা জিল্লুর রহমান ভিটু শোক ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।