1. tanvirinternational2727@gmail.com : NewsDesk :
  2. hrbangladeshbulletin@gmail.com : News Room : News Room
  3. 25.sanowar@gmail.com : Sanowar Hossain : Sanowar Hossain
সোমবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৩০ পূর্বাহ্ন

রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলায় হাইব্রিড নেতার দৌরাত্ম্য

  • সময় : মঙ্গলবার, ১৮ আগস্ট, ২০২০
  • ৩৭৩

৫ বছর আগে ছিলেন উপজেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক। এখন তিনি ক্ষমতাসীন দলের নেতা। একইসঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-প্রচার সম্পাদক এবং ইউনিয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক। আর স্থানীয় এমপির হাত ধরে আওয়ামী লীগে যোগদান করে তাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। হয়ে ওঠেন বেপরোয়া।এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে বেছে বেছে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের ওপর চলে হামলা এবং নির্যাতন।

পাঁচ বছরে শতাধিক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর ওপর চলে তার অমানবিক নির্যাতন। হাত-পা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়ায় নেতাকর্মীরা এখন পঙ্গু জীবনযাপন করছেন।মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, জমি দখলসহ একের পর এক ভয়ংকর অপরাধ করেই যাচ্ছেন তিনি। যার কারণে উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীরাই এখন কোণঠাসা। দিন কাটাচ্ছেন উদ্বেগ আর আতঙ্কে।

সেই ভয়ংকর মানুষটির নাম ইউসুফ হোসেন ওরফে ইউসুফ মেম্বার। রাজবাড়ির কালুখালি উপজেলার মাঝবাড়ি ইউনিয়ের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বার। রাজবাড়ি সদর ও কালুখালী থানায় দুই পুত্রসহ তার নামে রয়েছে পাঁচটি মামলা। সেই ইউসুফ মেম্বারের বিরুদ্ধে এবার খুনের অভিযোগ উঠল।

অভিযোগ রয়েছে, তার নির্দেশে সর্বশেষ খুনের শিকার হয়েছেন একই ইউনিয়নের বেতবাড়িয়ার গ্রামের ভাতাপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা আছির উদ্দিনের ছেলে ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা রবিউল ইসলাম। গত ১৫ আগষ্ট ইউসুফ মেম্বারের ছেলে সোহেল মোল্লা ও রাসেল মোল্লাসহ স্থানীয় ক্যাডাররা যুবলীগ নেতা রবিউলকে বাড়ি থেকে ধরে পানিতে চুবিয়ে নির্মমভাবে খুন করে।ওই ঘটনার পর গ্রামবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে অভিযুক্ত ইউসুফ মেম্বারের ছেলে সোহেল মোল্লা ও রাসেল মোল্লাকে গ্রেপ্তার করেছে রাজবাড়ি গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল।

গ্রেপ্তারের পর যুবলীগ নেতার খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি পুলিশের কাছে স্বীকার করেন বলে সূত্রে জানা গেছে। অভিযোগ উঠেছে, রাজবাড়ি জেলার একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেটে ইউসুফ মেম্বার ও তার দুই ছেলেকে বাঁচানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে।অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কালুখালি উপজেলার ভয়ংকর ত্রাস ইউসুফ হোসেন ওরফে ইউসুফ মেম্বার। ১৯৯৭ সালে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন অনেক দিন। জেল থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেন।

সময়ে বিএনপির দুর্ধষ ক্যাডার হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। ২০১৪ সাল পর্যন্ত উপজেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক ও উপজেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু স্থানীয় এমপি জিল্লুল হাকিমের মাধ্যমে ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েই উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-প্রচার সম্পাদক ও মাঝবাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদটিও বাগিয়ে নেয়।স্থানীয়রা জানান, দলীয় পদপদবি বাগিয়ে ইউসুফ হোসেন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেন

বেছে বেছে এলাকার ত্যাগী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর একের পর এক হামলা এবং নির্যাতন করতে থাকেন। ইউসুফ মেম্বারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে মুখ খুললেই নেমে আসে অমানবিক নির্যাতন। ইউসুফ হোসেনের দুই পুত্র সোহেল মোল্লা ও রাসেল মোল্লাসহ উপজেলার ওই ক্যাডার বাহিনী ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। হত্যা ধর্ষণ, পিটিয়ে হত্যার চেষ্টা, চাঁদাবাজি, জমি দখলসহ ৬টির বেশি মামলা আছে। প্রভাবশালীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা থাকায় ভয়ংকর ইউসুফ মেম্বারকে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন সব সময়ই নিরব ভূমিকায় থেকেছেন।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম খান। আওয়ামী লীগর কঠিন সময়ে ১৯৮৫ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পাশপাশি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্যও ছিলেন। পুরো পরিবারটিই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে হামলা-মামলার শিকার হয়েছিলেন।

মিথ্যা মামলায় বেশ কয়েক বার জেলও খেটেছিলেন। অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় ২০১৯ সালের অক্টোবরের ২ তারিখে সোনাপুর মোড়ে সন্ত্রাসী ইউসুফ মেম্বারের ছেলে সোহেল মোল্লা ও রাসেল মোল্লার নেতৃত্বে নজরুল ইসলাম খানকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে দুই পা ভেঙে দেয় সন্ত্রাসীরা। ওই সময় ইউসুফ হোসেন মেম্বারসহ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেয়া হলেও ইউসুফ মেম্বারকে আসামী না করেই মামলা নেয় পুলিশ।ওই ঘটনায় তার বড় ভাই আব্দুল হাকিম খান বাদী হয়ে কালুখালি থানায় একটি মামলা করেন।

ওই মামলায় ইউসুফের ছেলে সোহেল মোল্লা ও রাসেল মোল্লাকে আসামী করা হয়। দুই মাস ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে এখন কোনমতে বেঁচে আছেন নজরুল ইসলাম খান। তিনি ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘ বিএনপির আমলে হামলা আর নির্যাতনের শিকার হয়েছি, একাধিকবার জেলও খেটেছি।

কিন্তু আওয়ামী লীগ আমলে মেরেই ফেলতে চেয়েছিল হাইব্রিড আওয়ামী লীগ নেতা ইউসুফ মেম্বার ও তাঁর ছেলেরা। বিএনপির সময় ওরা আমাদের নির্যাতন করেছে এবং আওয়ামী লীগের যোগ দিয়েই পদপদবি নিয়ে আমাদের উপর নির্যাতন করছেন। কালুখালি উপজেলার মানুষ এখন জিম্মি হয়ে আছেন।

একইভাবে গত বছরের মে মাসে বোয়ালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম মোল্লাকে পিটিয়ে হাত পা ভেঙে দেয় ইউসুফ মেম্বারের সন্ত্রাসীরা, ওই ঘটনায় থানায় ইউসুফ মেম্বারের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হয়।আর ২০১৯ সালে ১৬ জুন উপজেলার মোহনপুর গ্রামের ভ্যানচালক আব্দুর রহিমকে নির্মমভাবে খুন করে ইউসুফ মেম্বারের ক্যাডার মো. আনোয়ার হোসেন।

ভ্যানচালক আব্দুর রহিম খুনের পর পরই পলাতক আছেন ঘাতক আনোয়ার। আর কালুখালি মদাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যানআবুল কালাম মৃধাকে প্রকাশ্যে নির্মমভাবে হাতুরি এবং রড দিয়ে পিটিয়ে হাত পা ভেঙ্গে দেয়া হয়।ওই ঘটনায় রাজবাড়ি সদর থানায় ইউসুফসহ ক্যাডারদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়। আবুল কালাম মৃধা বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত থেকে আওয়ামী লীগে আসা ক্যাডাররাই এখন এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে।

তারা হামলা করে হাত এবং পা ভেঙে দিয়েছিল। নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছি। উল্টো তারাই গরু চুরির মামলায় জেলও খাটায়।’কালুখালি উপজেলা সাওরাইল ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা নাদের হোসেন খানের ছেলে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম আকমল। তিনি এলাকায় জনপ্রিয় ইউপি মেম্বার হিসেবেও পরিচিত।

গত বছরের মে মাসে তাড়াবি নামাজ পড়ে বাড়িতে ফেরার পথে পাংশার কুড়াপাড়ার বিদ্যুৎ অফিসের সামনে আকমল খান তাঁর শিশুপুত্র আহাত খানকে ইউসুফ মেম্বার এবং তাঁর ক্যাডাররা হামলা করে কুপিয়ে নির্মমভাবে আহত করে। দীর্ঘদিন রাজবাড়ির সদর হাসপাতালে চিকিৎসার পর কিছুটা সুস্থ্য হলেও মৃত্যুও আতংক নিয়ে জীবন পার করছেন।সেই হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে আকমল খান বলেন, ‘ভাগ্য ভালো এখনও আমি বেঁচে আছি। নইলে এখন পিতাপুত্রের লাশ থাকতো কবরে।

এর বেশি কিছু বলতে চাননি তিনি। আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল, আবুল হাসেম আর আবুল কালাম মৃধাই নয়- বিএনপি থেকে আসা নব্য আওয়ামী লীগার ইউসুফ হোসেন ও তাঁর ক্যাডার বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন শতাধিক নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ। চুরি, ছিনতাই, মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধ সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত থাকলেও প্রতিবাদ করলেই নেমে আসে নির্মম নির্যাতন, হামলা-মামলা।’

কালুখালি উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন, কালুখালী উপজেলায় ত্রাসের রাজত্ব চালাচ্ছেন ইউসুফ হোসেন মেম্বার ও তার দুই পুত্র সোহেল মোল্লা ও রাসেল মোল্লাসহ ক্যাডার বাহিনী। স্থানীয় এমপি জিল্লুল হাকিমের পুত্র মিতুল হাকিমের আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার নির্যাতন চালাচ্ছে।

২০১৪ সালেও বিএনপির উপজেলা দপ্তর সম্পাতক ছিলেন ইউসুফ মেম্বার, কিন্তু আওয়ামী লীগের যোগ দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকে পিটিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ প্রচার সম্পাদক ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ পেয়ে যান। বিএনপির আমলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের এলাকাছাড়া করেছিল, এখন আওয়ামী লীগের আমলেও ইউসুফ মেম্বাররা নির্যাতন করেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের অন্যান্য খবর
©বাংলাদেশবুলেটিন২৪