ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার গৌরনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মো. আবু কায়েছ। যিনি শিক্ষার আলো ছড়ানোর কাজে নিরন্তরভাবে কাজ করে যাচ্ছেন নদী বিস্ততি উপজেলাটিতে। নবীনগর উপজেলার রিমোট এলাকা হওয়ায় কোন শিক্ষক ওই জায়গাটিতে পোষ্টিং নিতে চায় না। সেই রিমোট এলাকার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে নিরন্তর ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মিলিত মেধা তালিকায় স্থান অধিকারী কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে হিসাব বিজ্ঞানে অনার্স-মাস্টার্স পাস করা মেধাবী ছাত্র মো. আবু কায়েছ।
গ্রাম্য রাজনীতির প্রতিহিংসায় তিনি আজ হত্যা মামলার আসামী।
উপজেলার গৌরনগর গ্রামের বাসিন্দা সোলায়মান মিয়া বলেন, ২০০৯ সাল থেকে কায়েছ মাষ্টার আমাদের স্কুলে শিক্ষকতা করে আসছেন। তিনি অত্যন্ত ভদ্র ও নমনীয় মানুষ। তাঁর পাঠদান ও আচার-আচরনে আমরা অত্যন্ত সন্তুষ্ট। তিনি কখনো কারো সাথে ধমকের সুরে কথা বলেছেন বলে শুনিনি। সেই মানুষটি হত্যা মামলার আসামী হয় কিভাবে।
গৌরনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শেণীর শিক্ষার্থী ফারিয়া আক্তারের মা জানান, আমাদের গ্রামটি দুর্গম অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় কোন শিক্ষক এখানে আসতে চায় না। সেখানে কায়েছ মাষ্টার শিক্ষক সংকটের মাঝেও নিজ উদ্যোগে প্যারা শিক্ষক দিয়ে নিয়মিতভাবে বিদ্যালয়ের পাঠদান নির্বিগ্নে চালিয়ে যাচ্ছে। উদ্দেশ্য প্রণেদিত এই মামলা থেকে কায়েছ মাষ্টারকে দ্রুত অব্যহতি দেয়ার জন্য প্রশাসনের নিকট জোর দাবী জানাই।
সরজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ১২ এপ্রিল পূর্ববিরোধের জেড়ধরে উপজেলার থানারকান্দি গ্রাম ও হাজির হাটির গ্রামের দাঙ্গায় দু’গ্রুপের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে পা হারান হাজির হাটি গ্রামের মোবারক হোসেন। গুরুত্বর আহত অবস্থায় তিনি (মোবারক) তাঁর হত্যার সাথে জড়িতদের নাম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে বিডিও ফুটেজে বলে যায় । যা দেশের স্বনামধন্য পত্রিকায় ও মিডিয়ায় ফুটে উঠে। পরদিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মোবারক মৃত্যুবরণ করলে তাঁর চাচাত ভাই চাঁন মিয়া নবীনগর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে। যেখানে প্রতিহিংসামূলকভাবে আবু কায়েছ মাষ্টারকে ১৯ নাম্বার আসামী করা হয়।
এ ব্যাপারে সাতঘর হাটির বাসিন্দা নুরুল হক বলেন, জগড়া হয়েছে থানারকান্দি-হাজির হাটি গ্রামে এবং যিনি মারা গেছেন তিনি আহত অবস্থায় তাঁর হত্যার সাথে জড়িতদের নাম স্পষ্টভাবে বলে যায়। যেখানে সাতঘর হাটি গ্রামের কারও নাম উল্লেখ করে নি। কিন্তু প্রতিহিংসামূলক ও হয়রানির উদ্দেশ্য সাতঘর হাটির বাসিন্দা নির্দোষ কায়েছ মাষ্টারসহ অনেকের নাম মামলার এজাহারে অন্তভুক্ত করে। আজ ১২ আগষ্ট বুধবার নবীনগর থানা পুলিশ নিরেহ কায়েছ মাষ্টারকে গ্রেপ্তার করে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করেন। আমরা তাঁর দ্রুত মুক্তির দাবী করছি।
গ্রেপ্তারকৃত কায়েছ মাষ্টারের পরিবারের সদস্যরা আক্ষেপ করে বলেন, একটি সাজানো মামলায় আমাদের সন্তানকে আসামী করা হয়েছে। দাঙ্গা-হাঙ্গামার দিন কায়েছ মাষ্টার তাঁর ভাইদের সাথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পৌরশহরের বাসায় অবস্থান করেছিল। এই দাঙ্গা-হাঙ্গামার সাথে কোনভাবেই আমাদের সন্তানরা জড়িত নয়। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ থাকবে সুষ্ট তদন্তের মাধ্যমে যাতে প্রকৃত সত্য তুলে ধরা হয়।
অন্যদিকে নবীনগর থানার ওসি প্রভাষ চন্দ্র ধর গ্রেপ্তারের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ‘কায়েছকে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে কাইতলা থেকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে হত্যাকাণ্ডে ৩৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।বাকিদের গ্রেপ্তারের অভিযানও অব্যাহত আছে।
উল্লেখ্য, নবীনগরে গ্রাম্য আধিপত্য বিস্তার নিয়ে উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান ও এলাকার সর্দার কাউছার মোল্লার সশস্ত্র লোকজনের মধ্যে পূর্ব বিরোধের জের ধরে গত ১২ এপ্রিল দফায় দফায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে প্রায় অর্ধশত লোক আহত হন। সংঘর্ষ চলাকালে কাউছার মোল্লার পক্ষের লোকজন পৈশাচিকভাবে প্রতিপক্ষের রিকশাচালক মোবারক মিয়ার (৪৫) একটি পা কেটে কুপিয়ে বিচ্ছিন্ন করে। পরে ওই পা হাতে নিয়ে গ্রামে ‘জয় বাংলা বলে আনন্দ মিছিল’ করে দাঙ্গাবাজরা। গুরুতর আহত মোবারক চার দিন পর গত ১৫ এপ্রিল মারা যান। এ ঘটনায় ১৫২ জনকে আসামি করে নিহতের চাচাতো ভাই চাঁন মিয়া বাদী হয়ে নবীনগর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
তবে এ হত্যা মামলায় পার্শ্ববর্তী বীরগাঁও ইউনিয়নের জনপ্রিয় চেয়ারম্যান কবির আহমেদকে ‘প্রধান আসামি’ করা হলেও আলোচিত এ মামলায় বিবাদমান দুই গ্রুপের একটি গ্রুপের দলনেতা কাউছার মোল্লাকে ২ প্রধান শিক্ষক আবু কাউছারকে ৩ ও তার আপন ছোট ভাই প্রধান শিক্ষক কায়েস মাষ্টারকে ১৯ নাম্বার আসামি করা হয়েছে। পাশাপাশি এলাকার নিরেহ মানুষদের হয়রানি করতে অজ্ঞাতনাম আরো ১৫০ জনকে এ মামলায় আসামি দেখানো হয়।যা এলাকায় সমালোচনার ঝর উঠে।