রংপুরের বদরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র উত্তম কুমার সাহার অনিয়ম-দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে প্রায় আড়াই কোটি টাকার বাণিজ্য করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ১১ কাউন্সিলর অনাস্থা এনেছেন। গতকাল রবিবার সকালে রংপুর জেলা প্রশাসক আসিব আহসানের কার্যালয়ে গিয়ে তারা ১৩টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উপস্থাপন করে মেয়রের বিরুদ্ধে ওই অনাস্থার আবেদন করেন।
মোট ছয় পৃষ্ঠার ওই অনাস্থাপত্রে মেয়র উত্তম কুমার সাহার বিরুদ্ধে সীমাহীন দুর্নীতির চিত্র, অতিগোপনীয় বেশ কিছু অজানা তথ্য তুলে ধরেন কাউন্সিলরেরা। এসময় তারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করে মেয়র উত্তমের সকল অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত সাপেক্ষে শাস্তি দাবি করেন।
অনাস্থার অনুলিপি দেওয়া হয় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়, স্থানীয় সরকার ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব, দুদক, স্থানীয় এমপিসহ মোট ১২টি দপ্তরে। অনাস্থাপত্র দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন, কাউন্সিলর একরামুল হক, ইউনুস আলী, খায়রুল আনাম কোহিনুর, নীলকান্ত পাইকাড়, খোকন কুমার দাস, মিজানুর রহমান,তহিদুল ইসলাম বাবু, মোকছেদুর রহমান, মোকছেদুল আলম, আজিমা বেগম ও মিতু রানী দাস।
অনাস্থাপত্রে ১৩টি অভিযোগে কাউন্সিলরেরা উল্লেখ করেন, মেয়র উত্তম সাহা পৌরসভার হিসাব-নিকাশ দেন না। কথায় কথায় কাউন্সিলরদের হুমকি-ধমকি লাঞ্ছিত করার ভয়ভীতি দেখান।
২০১৬ সাল থেকে চলতি বছরের ২০ জুন পর্যন্ত তিন দফায় কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে প্রায় আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। এরমধ্যে চলতি বছরের ২০ জুন নিয়োগ পরীক্ষার আগে যাদের বিরুদ্ধে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তারাই নিয়োগ পরীক্ষায় চূড়ান্ত হন। ওই নিয়োগে একই দিনে দুপুরে পরীক্ষ, সন্ধ্যায় মৌখিক ও রাতের মধ্যে তড়িঘড়ি করে নিয়োগ পরীক্ষার কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে সরকারের দেওয়া ডেঙ্গু নিধন কার্যক্রমের আট লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন মেয়র উত্তম সাহা।
এছাড়াও সাম্প্রতিক করোনাক্রান্তিকালে দুস্থ ও অসহায় মানুষের মধ্যে বিতরণের তিন লাখ ৭৫ হাজার টাকা নয়ছয় করেছেন তিনি। এ নিয়ে মেয়রের বিরুদ্ধে আরো বিস্তর অভিযোগ করেন কাউন্সিলরেরা। অর্থের বিনিময়ে মেয়র উত্তম সাহা বয়সসীমার চাকরি বিধি অমান্য করে বেশ কয়েকজন কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়।
এদিকে কোটি টাকা নিয়ে গত ২০ জুন ছয় কর্মচারী নিয়োগ দেওয়ার ঘটনায় ১১ কাউন্সিলর পৌরভবনের মিলনায়তনে সাংবাদিক সম্মেলন করেন। ওই সাংবাদিক সম্মেলনে মেয়রের দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরায় মেয়র উত্তম সাহা কাউন্সিলর খোকন কুমার দাস ও একরামুল হককে দৃস্কৃতিকারী দিয়ে খুন-জখম করার হুমকি দেন বলে অনাস্থাপত্রে উল্লেখ করা হয়।
কাউন্সিলর মিজানুর রহমান ও খোকন কুমার দাস বলেন, ‘সুনির্দিষ্টভাবে ১৩টি অভিযোগ তুলে মেয়র উত্তম সাহার আসল চরিত্র আমরা তুলে ধরেছি। তিনি পৌরসভাকে নিজের সম্পত্তি মনে করেন।
এমনকি তিনি প্রায় সময় আমাদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল করে অমানবিক আচরণ করতেন। নারী কাউন্সিলরদের সঙ্গে অশালীন ব্যবহার করতেন। এতে আমরা তার ব্যবহারে অতিষ্ঠ। তিনি বলতেন কাউন্সিলরদের দরকার নেই। আমি একাই পৌরসভা চালাবো।