ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে ক্যাসিনো খেলে অবৈধ অর্থ উপার্জন করে তা পাচারের উদ্দেশ্যে গোপন রেখেছিল এনামুল হক এনু ও তার ভাই রুপন ভূঁইয়া। র্যাবের দেওয়া চার অর্থপাচার মামলায় এই অভিযোগের প্রমাণ পেয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তদন্তে এনু ও রুপন ছাড়াও ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জয় গোপাল সরকারের সম্পৃক্ততা পেয়েছে সিআইডি। তবে ক্লাবের সভাপতি ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মোল্লা আবু কাওছারের কোনও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেছে সিআইডি। অথচ এই ক্লাবেই ক্যাসিনো খেলার ঘটনাস্থল দেখানো হয়েছে।
এছাড়া এনু ও রুপনের চার মামলার অভিযোগপত্রে সংঘবদ্ধ অপরাধের কথা বলা হলেও আসামির তালিকায় নাম আসেনি আরেক সাবেক যুবলীগ নেতা ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর এ কে এম মমিনুল হক ওরফে সাঈদের।
বুধবার (২২ জুলাই) ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে তিনটি মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন সিআইডির দুই তদন্ত কর্মকর্তা। এর আগে মঙ্গলবার একটি মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয় সিআইডি। মামলা গুলো হলো-ওয়ারী থানার মামলা নম্বর ৩৪, সূত্রাপুর থানার মামলা নম্বর ২৯, গেন্ডারিয়া থানার মামলা নম্বর ২৮ এবং সূত্রাপুর থানার মামলা নম্বর ২৭। এই চার মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।
সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মো. নাজিম উদ্দিন আল আজাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘র্যাবের দায়ের করা চারটি অর্থপাচার মামলার তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। চারটি মামলায় বেশিরভাগই কমন আসামি। চার মামলায় ৫১ আসামি হলেও তারা মানুষ ১৮ জন। এই ১৮ জনই চারটি মামলায় আসামি হয়েছেন।’
অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সংঘবদ্ধভাবে অপরাধীরা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অর্থ পাচারের উদ্দেশ্যে নিজেদের কাছে রেখেছিল। আসামিরা এই অর্থ উপার্জনের কোনও বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেনি।’
অভিযোগপত্রে ক্যাসিনোর মাধ্যমে সংঘবদ্ধভাবে এনু ও তার ভাই রুপনের অবৈধ অর্থ উপার্জনের কথা বলা হয়েছে। এজন্য তারা মতিঝিলের ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবসহ কয়েকটি ক্লাবে অবৈধ ক্যাসিনো খেলতো। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক মেহেদী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আসামিরা সবাই সংঘবদ্ধ হয়ে অপরাধ সংঘটিত করেছে। তারা সংঘবদ্ধভাবে ক্যাসিনো খেলা পরিচালনা করে, উপার্জিত অর্থ পাচারের উদ্দেশ্যে গোপন করেছিল। তদন্তে এই অপরাধের প্রমাণ মিলছে। তাই তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।’
মামলায় এনু ও রুপনসহ তাদের ম্যানেজার, বন্ধু ও কর্মচারীদের আসামি করা হয়েছে। এছাড়া আসামি করা হয়েছে যেখানে ক্যাসিনোর আসর বসাতো এনু ও রুপন সেই ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জয় গোপাল সরকারকে।
তবে একই ক্লাবের তৎকালীন সভাপতি ও সাবেক স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোল্লা আবু কাওছারকে আসামি করা হয়নি। এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক মো. মেহেদী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তার সম্পৃক্ততা আমরা তদন্তে পাইনি। তাই অভিযোগপত্রে তার নাম আসেনি।’
একই ক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে এনু রুপনের ক্যাসিনো কাণ্ডের সম্পৃক্ততা পেলেও সভাপতির সম্পৃক্ততা পায়নি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। যদিও ক্যাসিনোকাণ্ডের অভিযানের পর থেকে জনসম্মুখে দেখা যায়নি মোল্লা আবু কাওছারকে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি দেশের বাহিরে রয়েছেন। তাকে নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়ার পর স্বেচ্ছাসেবক লীগ থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জয় গোপাল সরকারের সম্পৃক্তরা বিষয়ে সিআইডির কর্মকর্তারা জানান, তরুণ বয়সে গোপাল ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের হয়ে খেলেছেন। এরপর ক্লাবের ক্যাশিয়ার ও পরিচালনা পর্ষদের সদস্য পদ পান। ২০১৪ সালে তিনি ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর এনু ও রূপনের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে। এই সূত্র ধরে তিনি তাদের ক্লাবে ক্যাসিনো চালাতে সহযোগিতা করেন।