“করোনা” ক্রমশ সংক্রামিত হতে চলেছে বাংলা সাহিত্যে৷
করোনা-কে প্রতিহত করার জন্য লকডাউন চালু হওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই, বাঙালির সৃষ্টিচেতনা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছিল৷ ফলে, ঘরেঘরে তৈরি হতে লাগল, মোবাইল-ক্যামেরানির্ভর নানা ধরণের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান৷ গান, কবিতা, গল্পপাঠ, একক-নাটক, আলোচনাসভা, কিছুই বাদ গেল না৷ এমনকি, স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি তৈরিরও হিড়িক পড়ে গেল৷ বলা বাহুল্য, প্রায় প্রত্যেকটি উদ্যোগের মধ্যবিন্দুতে ছিল, করোনা৷ অবশ্য সত্যি কথা বলতে কি, সেইসব নিবেদনের গুণগত মান তেমন উন্নত হতে পারেনি৷ আজও নয়৷
এবার বিশ্বব্যাপী সেই ভয়ঙ্কর মারণব্যাধি “করোনা”-কে সাহিত্যের আঙিনায় নিয়ে আসতে চলেছেন বিশিষ্ট বাঙালি সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার৷
ভারতের জনপ্রিয় সাহিত্য-পত্রিকা “দেশ”-এর আগামী পুজা-সংখ্যায় প্রকাশিত হবে তাঁর আর একটি অনন্য উপন্যাস “অবগুন্ঠন”৷ নামটি হয়ত পরে পরিবর্তিত হতে পারে৷
শুক্রবার দুপুরে এক টেলিফোন-সাক্ষাৎকারে সমরেশ মজুমদার জানালেন, গোটা পৃথিবীতে বহুবার বিভিন্ন চেহারায় মহামারী হানা দিয়েছে৷ তাতে হাজার হাজার লোক মারাও গেছেন৷ কিন্তু, এবার করোনা জীবনহানির পাশাপাশি, মানুষের পারিপার্শ্বিকতা, কর্মজীবন এবং পারিবারিক বৃত্তটা সম্পূর্ণভাবে নেড়েঘেঁটে দিয়েছে৷ এতে, কিছুটা ভাল যেমন হয়েছে, ক্ষতিটাও কম হয়নি৷ বিশেষত, মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক ও বিশ্বাস৷ কোথাও যেন সেখানে চিড় ধরেছে৷
সমরেশ মজুমদারের নতুন উপন্যাস “অবগুন্ঠন” মূলত ডালপালা মেলবে পাঁচজন প্রবীণ মানুষকে ঘিরে৷ এঁরা প্রত্যেকেকেই তাঁদের জীবনে কম-বেশি প্রতিষ্ঠিত৷ পাঁচজনেই কলকাতার একটি অভিজাত ক্লাবের সদস্য৷ দীর্ঘদিন যাবৎ তাঁরা মোটামুটি প্রতি-সন্ধ্যায় সেখানে মিলিত হতেন৷ খানাপিনাসহ চলত নির্ভেজাল আড্ডা৷ সেইসূত্রে বন্ধুত্বটাও বেশ ঘন৷
কিন্তু, লকডাউন শুরু হতেই, শহরের সব ক্লাব ও বার বন্ধ হয়ে গেল৷ পাঁচজন বন্ধুই হয়ে পড়লেন গৃহবন্দী৷
এখান থেকেই শুরু হল, নানা সমস্যার সূত্রপাত৷ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঘটতে লাগল সম্পর্কের টানাপোড়েন৷
পাশাপাশি, পাঁচজনেরই মনের মধ্যে বাসা বাঁধল মৃত্যুভয়৷ এছাড়াও সবাই চিন্তিত হয়ে পড়লেন এই ভেবে যে, করোনায় মারা গেলে, পরিবারের লোকজন ডেডবডি হাতে পাবে কিনা, কীভাবে সৎকার হবে, তা কেউ জানেনা৷ তাহলে কি, সারাজীবন সম্মান ও বৈভবের সঙ্গে বেঁচে থাকার পরে, শেষে কি কুকুর, বেড়ালের মত মরতে হবে?
এই প্রশ্নচিহ্নটাই আজ ঝুলছে প্রায় প্রতিটি প্রবীণ নাগরিকের মনে৷