কবি_ নিলয় চৌধুরী।
স্থায়ী শান্তির জন্য শিক্ষা ” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে ইউনেস্কো ১৯৮৫ সালের ২৪ জানুয়ারী শিক্ষা দিবস পালন শুরু করে। যেখানে স্বাধীনতার ঠিক পরেই আমাদের শিক্ষার হার ছিল প্রায় ১৭ শতাংশ আজ তা এসে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭৭ শতাংশ। শুনতে ভালো, পড়তে ভালো কিন্তু আসল কথা হলো সত্যিই কি আমরা জাতি হিসেবে শিক্ষিত হতে পেরেছি?শিক্ষার যে আলো তার বহিঃপ্রকাশ কি আমাদের সমাজ জীবনে আমাদের সংস্কৃতি পরিমন্ডলে প্রকাশিত হচ্ছে? শিক্ষা মানেই তো মন মননের বিকাশ, বোধের বিকাশ এবং তার সুন্দর প্রকাশ।কালের নিয়মে মানুষ তার আর্ত সামাজিক অবস্থার উন্নতি ঘটায় আর তা সত্য এবং স্বাভাবিক।সেই পরিক্রমায় রেডিও টিভি থেকে এখন হাতে হাতে স্মার্টফোন।এক কথায়_ জানার জন্য পৃথিবীটা আজ মুঠোবন্দী । এতো আধুনিকতার মধ্যে থেকেও পৃথিবীর সব জাতি সগর্বে নিজ নিজ সংস্কৃতি রক্ষা করছে এবং সকলের নিত্য চেষ্টা নিজ সংস্কৃতির বিকাশ।আমরা কি আমাদের নিজ সংস্কৃতি রক্ষা করতে পারছি নাকি আমাদের নতুন যৌবন ধীরে ধীরে আসক্ত হয়ে পড়ছে ভিন্ন সংস্কৃতি চর্চায়? এটাই এখন বাঙালি হিসেবে আমাদের ভাবার সময়। ভাষার আগ্রাসন শুরু হয়েছে অনেক আগেই। বাংলা ভাষী স্কুল ছাত্রদের থেকে ইংরেজী মাধ্যম স্কুলের ছাত্রের কদর বেশি। অভিভাবকদের একটা আভিজাত্যের প্রকাশও যেন ঐ সব ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করানো।ধীর ক্রমে ভাষার চর্চা কমে যাচ্ছে আর সাথে সাথে সংস্কৃতি চর্চাও। বাউল, জারি সারি, ভাটিয়ালি ভাওয়াইয়া, কবিতা গল্প নাটক বিতর্ক সভার আয়োজন এখন খুব একটা দেখা যায় না বললেই চলে।অথচ যখন এইদেশে শিক্ষিতের হার এতটা ছিল না তখন সমাজ জীবনে এর প্রচলন ছিল বেশ। সমাজে এতো ভেদাভেদ এতো বিদ্বেষ ছিল না। ছিল না এতো সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ এতো হানাহানি।তবে তো প্রশ্ন আসে মনে, এই কোন শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে আমাদের আগামী !যাদের কাছে নিজ সংস্কৃতি কদর পাচ্ছে না। তাদের কন্ঠে এখন কেন চটুল হিন্দি গান বা ইংরেজি গানের সুর! আসলেই ভাবতে হবে আমাদের। নাহয় অনাদরে অবহেলায় ধীরে ধীরে মুছে যাবে আমাদের সংস্কৃতি। বাঙালি জাতি হিসেবে যে সংস্কৃতি আমাদের অসাম্প্রদায়িক সমাজে বেড়ে ওঠার সুযোগ করে দিয়েছিলো সেই চিন্তা চেতনার সংস্কৃতির বিকাশ করতে হবে। বাড়াতে হবে আমাদের অতীত গরিমার সেই নিজ সংস্কৃতি চর্চার আয়োজন তা রাষ্ট্রীয় স্তরে এবং সামাজিক ভাবেও।তবেই আমরা নতুন যৌবনকে দিতে পারবো আমাদের আপন সংস্কৃতিতে বিকাশের সুযোগ আর নিজ সংস্কৃতিতে বেড়ে ওঠার গৌরব।নিজ সংস্কৃতিতে বেঁচে থাকার, খুশি থাকার ,সুখী থাকার গৌরব।।