নিজস্ব প্রতিবেদক
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। এ বছর ১৪শ’ ৪০ টাকা মণে ধান ক্রয় করার সিদ্ধান্তে কৃষকরা খুশি। তবে কৃষকদের লাভের টাকা পুরোটাই যাচ্ছে পিঁপড়ার পেটে। পথে পথে তারা হচ্ছেন বাধাগ্রস্ত। লেবার ৩০ টাকা, কসর বাবদ বাড়তি ২ কেজি ধান বাদ ,অফিস খরচ বাবদ ১ হাজার টাকা এবং সর্বশেষ ধানের টাকা নিতে এসে হয়রানির শিকার হচ্ছেন কৃষকরা। স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের মতো ভয়াল সিন্ডিকেট না থাকলেও গোপন সিন্ডিকেট এখনো সক্রিয়।
জানা গেছে, চাঁদপুর সেচ প্রকল্পভুক্ত ফরিদগঞ্জ উপজেলায় এ বছর বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। গত ২৬ এপ্রিল খাদ্য অধিদপ্তরের অধীন ফরিদগঞ্জ উপজেলায় ৬৮৪ মেট্রিক টন ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ জন্য লটারির মাধ্যমে ২৫২ জন কৃষককে নির্বাচিত করা হয়। সরকারিভাবে এবার বোরো ধান কেনার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে কেজি প্রতি ৩৬ টাকা। বাজারের দামের তুলনায় বেশি হওয়ায় এতে কৃষকরা খুশি হন।
কিন্তু অচিরেই কৃষকের এই খুশি-আনন্দ হতাশায় পরিণত হচ্ছে। ধান বিক্রি করতে এসে পদে পদে খরচা দিতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠেছে তাদের। একজন কৃষক লটারির মাধ্যমে ৩ টন ধান (৭৫ মণ) ধান বিক্রি করতে পারেন। এই ধানের সরকারি মূল্যে দাম ১ লাখ ৭ হাজার ৭শ ‘ টাকা পাওয়ার কথা। কিন্তু কৃষককে লেবার খরচ বাবদ মণপ্রতি ৩০ টাকা দিতে হচ্ছে। অর্থাৎ ৭৫ মণে ২ হাজার ২৫০ টাকা দিতে হয়। খাদ্য অফিসের অলিখিত খরচ বাবদ টনপ্রতি ১ হাজার টাকা নেয়া হচ্ছে। কসর হিসেবে প্রতি মণে ২ কেজির বেশি ধান দিতে হচ্ছে কৃষকদের। অর্থাৎ ৭৫ মণে ১৫০ কেজি দিতে হয়। কেজি ৩৬ টাকা করে ১৫০ কেজি ধানের দাম ৫ হাজার ৪০০ টাকা। সব মিলিয়ে সরকারি হিসাবে ১ হাজার ৪৪০ টাকা মণ হলেও কৃষক হাতে পান ১ হাজার ২৪০ টাকা। এরপর কৃষকদের বাড়ি থেকে খাদ্য গুদাম পর্যন্ত ধান পৌঁছাতে গাড়ি ভাড়া গুনতে হচ্ছে। সব মিলে লাভের অংশ চলে যায় পিঁপড়ার পেটে।
লটারিতে প্রথম হওয়া ফারুক খান বলেন, আমার এক নামে ৩ টন ধান বিক্রি করতে গেলে প্রতি মণে লেবার খরচ ৩০ টাকা করে দিতে হয়েছে। অফিস খরচ বাবদ টনপ্রতি ১ হাজার টাকা নিয়েছে। এই টাকা সংগ্রহ করছেন খাদ্য পরিদর্শক মো. জামাল উদ্দিন নিজেই।
অভিযোগ রয়েছে, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে যা ইচ্ছা তা-ই করছেন জামাল উদ্দিন। অফিস খরচ নিচ্ছেন, ধানের আর্দ্রতার উসিলায় কৃষকদের হয়রানি করছেন তিনি।
খাদ্য পরিদর্শক মো. জামাল উদ্দিন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, লেবার খরচ নেয়ার বিষয়টি সত্য। অন্য কোনো কিছু নেই। কোনো সিন্ডিকেট নেই। তবে একটি ভিডিও ক্লিপ দেখালে তিনি বলেন, আমি ঠিকাদারের কাছ থেকে খরচ নিয়ে নেবো।
এ বিষয়ে উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা মিজানুর রহমান লেবার খরচ বাবদ মণপ্রতি ৩০ টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করেন। এছাড়া বস্তার ওজন ও কসর বাবদ বাড়তি ১ কেজিসহ মোট ৪২ কেজি ওজন মাপা হচ্ছে বলে স্বীকার করেন। অফিস খরচের বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা রাজিয়া জানান, বিষয়টি তিনি মাত্রই জেনেছেন। এ বিষয়টি দেখার আশ্বাস দেন তিনি।