মোঃ শামসুর রহমান তালুকদার –
টাঙ্গাইলে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্যের বহুতল ভবন দখলে নিয়ে সেখানে ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ ব্যক্তিদের তোলা সেই নারীকে আবার তিন দিনের রিমান্ডে মঞ্জুর করেছে আদালত, যিনি নিজেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের টাঙ্গাইল জেলার ‘সমন্বয়ক’ হিসেবে পরিচয় দিতেন।
তার বিরুদ্ধে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য জোয়াহেরুল ইসলামের বাসা ভাঙচুর, লুটপাট, দখল ও ১০ কোটি টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে মামলা হয়।
চার দিনের রিমান্ড শেষে মারইয়াম মুকাদ্দাস নামের সাবেক ‘সমন্বয়ককে’ বৃহস্পতিবার বিকালে টাঙ্গাইলের বিচারিক হাকিম আদালতে হাজির করা হয়।
এসময় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে আরও পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে। শুনানি শেষে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. গোলাম মাহবুব খাঁন আরো তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
টাঙ্গাইল সদর থানার ওসি তানভীর আহম্মেদ জানান , “সাবেক সংসদ সদস্য জোয়াহেরুল ইসলামের বাড়ি দখল ও চাঁদা দাবির উদ্দেশ্য, বিদেশে যাওয়ার কারণসহ বিভিন্ন তথ্য জানতে মারইয়ামকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। তাই তাকে আবার রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।”
রোববার রাত ১২টার দিকে শহরের পশ্চিম আকুর-টাকুরপাড়া (হাউজিং) এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এবং সোমবার চারদিনের রিমান্ড পায় পুলিশ।
গ্রেপ্তার হওয়া মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টির বাসা বাসাইল উপজেলার ফুলকী ইউনিয়নের জশিহাটী গ্রামে। তিনি মাজহারুল ইসলামের মেয়ে। টাঙ্গাইল শহরের আকুর টাকুর পাড়ায় ভাড়া বাসায় বসবাস করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, শনিবার সকালে মিষ্টির নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নেতা জোয়াহেরুল ইসলামের (ভিপি জোয়াহের) শহরের ছোট কালীবাড়ি রোডের ছয়তলা ভবনটি দখল করা হয়। পরে রাতে বাড়িটি দখলমুক্ত করে যৌথবাহিনী। সেই সময় মিষ্টিকে আটক করা হলেও পরে মুচলেকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
পরবর্তীতে রোবিবার সাবেক সংসদ সদস্য জোয়াহেরুল ইসলামের স্ত্রী রওশন আরা খান (৫৮) সমন্বয়ক মিষ্টির বিরুদ্ধে টাঙ্গাইল থানায় মামলা করেন।
মিষ্টির পক্ষে অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম রতন ও সিরাজুল ইসলাম শুনানিতে অংশ নেন এবং তারা জামিন আবেদন করেন। আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এ বিষয়ে পুলিশ বলেছে, মিষ্টি তার নিজের পরিচিতি ও গুরুত্ব বাড়াতে এবং নিজের এই পরিচিতিকে কাজে লাগিয়ে প্রভাব-প্রতিপত্তি বাড়াতে আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি ভাঙচুর করে পরে তা দখলের উদ্যোগ নেন। চার দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ এমন তথ্যই পেয়েছে বলে জানায়। তবে কোনো সংগঠনের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা আছে কিনা সে তথ্য এখনও পায়নি পুলিশ।
৪ দিনের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পুলিশ আরো বলেছে, মিষ্টি টাঙ্গাইল শহরে একটি এনজিও করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু কিছু আওয়ামী লীগ নেতার অসহযোগিতার কারণে সেটি ঠিকমতো চালাতে ব্যর্থ হন। এতে ২০২০ সালে এনজিওটি বন্ধ হয়ে যায়। তখন থেকেই ঐসব নেতাদের প্রতি তার ক্ষোভ ছিল। সেই ক্ষোভের কারণেই বাড়িঘর ভাঙচুরে নেতৃত্ব দেন তিনি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত অন্য নেতারা আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি ভাঙচুর ও ঞদখল করে দাতব্য প্রতিষ্ঠান করার পক্ষে না থাকলেও মিষ্টি তার কিছু অনুসারী নিয়ে নিজের ‘গুরুত্ব’ বাড়াতে ভাঙচুর ও দখলের পথে হাটেন।
পুলিশ আরো যুক্ত করেছে এই বলে, জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানতে পেরেছেন যে মিষ্টি প্রথমে ঢাকায় একটি ডিপ্লোমা ডিগ্রি নিয়েছেন। পরে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাশন ডিজাইনে স্নাতকে ভর্তি হলেও কোর্স শেষ করতে পারেননি। তিনি সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতের কাশ্মিরসহ একাধিক দেশ ভ্রমণ করেছেন। তিনি টাঙ্গাইলে এনজিও করতে ব্যর্থ হয়ে অনলাইনে ব্যবসা শুরু করেন। গত জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে পরিচিতি পান।