মোঃ শামসুর রহমান তালুকদার
সারাদেশে চলমান বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের গুলি করে হত্যা, হামলা এবং গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তিসহ বিভিন্ন দাবী না মানা পর্যন্ত এবার চলমান উচ্চ মাধ্যমিকের অবশিষ্ট পরীক্ষাগুলোয় অংশগ্রহণ না করার ঘোষণা দিয়েছেন টাঙ্গাইলের বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা।
আজ বৃহস্পতিবার (১ আগষ্ট) জেলার বিভিন্ন কলেজের নামে খোলা ফেসবুক গ্রুপে শিক্ষার্থীরা চলমান পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করার ঘোষণা দেয়।
পরীক্ষা না দেয়ার ঘোষণা স্ব স্ব কলেজের নামে ফেসবুকে গ্রুপে পোষ্ট করে এই ঘোষণা করছে শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও সারাদেশে বিভিন্ন জেলার কলেজের শিক্ষার্থীরা একই ঘোষণা দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোষ্ট করছেন। যদিও কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন শিক্ষার্থীদের ফেসবুকে পোষ্ট করার বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ কিছুই জানেন না।
উল্লেখিত কলেজগুলো হলো:
ভূঞাপুর ইবরাহীম খাঁ সরকারি কলেজ, মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসান আদর্শ কলেজ, বিবেকানন্দ হাইস্কুল এন্ড কলেজ, সরকারি মাওলানা মোহাম্মদ আলী কলেজ (এমএম আলী), কুমুদিনী সরকারি কলেজ, বঙ্গবন্ধু ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ,সরকারি শেখ ফজিলাতুন নেসা মুজিব মহিলা মহাবিদ্যালয়, সৃষ্টি কলেজ অব টাঙ্গাইল, এলেঙ্গার সরকারি শামসুল হক কলেজ, সখীপুর সরকারি মুজিব কলেজ, মির্জাপুর শহীদ ভবানী প্রসাদ সাহা সরকারি কলেজ, কালিহাতী শাহজাহান সিরাজ কলেজসহ জেলার বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা না দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
সৃষ্টি কলেজ অব টাঙ্গাইলের শিক্ষার্থীরা ঘোষণাতে বলেছেন, জিম্মি করে অস্ত্রের মুখে ডিবি অফিসে হাতে স্ক্রিপ্ট ধরিয়ে জোরপূর্বক সমন্বয়কারীদের দ্বারা যে বিবৃতি দেয়া হয়েছে তা এদেশের ছাত্রসমাজ প্রত্যাখান করেছে। আমরা আমাদের ভাই বোনদের নৃশংস হত্যাকান্ড এবং দেশব্যাপী চলমান হেনস্তার সুষ্ঠু জবাব ও বিচার চাই।
মির্জাপুর শহীদ ভবানী প্রসাদ সাহা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী লিখেছে, যতদিন পর্যন্ত না সকল অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তারকৃত এইচএসসি পরীক্ষার্থী ও অন্যান্যদের মুক্তি দেয়া হয় ততদিন পর্যন্ত শহীদ ভবানী প্রসাদ সাহা সরকারি কলেজের কোন পরীক্ষার্থী ঢাকা বিভাগে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করবে না।
একই ঘোষণা দিয়েছে কুমুদিনী সরকারি কলেজ, সরকারি শেখ ফজিলাতুন নেসা মুজিব মহিলা মহাবিদ্যালয়, টাঙ্গাইলের মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসান আদর্শ কলেজ, বিবেকানন্দ হাইস্কুল এন্ড কলেজ, সরকারি মাওলানা মোহাম্মদ আলী কলেজের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া একই দাবীতে জেলার সকল কলেজের শিক্ষার্থীরা একই বিবৃতি দেয় ফেসবুকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুমুদিনী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা জানায়, চলমান বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের উপর গুলি চালানো হয়েছে। এতে অনেক শিক্ষার্থী মারা গেছে। এছাড়া পরবর্তিতে এইচএসসি শিক্ষার্থীদের অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত না হওয়া এবং শিক্ষার্থীদের ছেড়ে না দেয়া পর্যন্ত আমরা পরীক্ষায় অংশগ্রহন করবো না।
ভূঞাপুর ইবরাহীম খাঁ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো কামরুজ্জামান সরকার বলেন, শিক্ষার্থীদের এই ধরনের কোন বিষয় জানা নেই। তারা এখন বোর্ডের অধীন।
সরকারি ফজিলাতুন্নেসা মুজিব মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ শহীদুজ্জামান মুঠোফোনে বাংলাদেশ বুলেটিনকে জানান, এ বিষয়ে আমি অবগত নই। হঠাৎ কলেজ পেইজ তিনি এই ম্যাসেজ টা দেখতে পান। যার নিচে লেখা সাধারণ ছাত্র ছাত্রীবৃন্দ।
সরকারি কুমুদিনী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ বদরুল আলম কে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
প্রায় সব কলেজের অধ্যক্ষদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, শিক্ষার্থীদের চলমান এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করার বিষয়টি শিক্ষার্থীরা লিখিতভাবে জানায়নি। এই বিষয়ে কিছুই জানেন না তারা।
এদিকে বৃষ্টিকে মাথায় নিয়ে আজ টাঙ্গাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সমাজের উদ্যোগে দেয়াল লিখন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে নয়টার দিকে শহরের বিভিন্ন সড়কের পাশে দেয়ালে শিক্ষার্থীরা অঙ্কন করে এ কর্মসূচি পালন করেন। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসাবে তারা দেয়ালে “সোনার বাংলায় শুকুনের থাবা, রক্তাক্ত জুলাই ২৪, রক্তের দাগ শুকায় নাই” ইত্যদি শ্লোগান লেখেন।