স্টাফ রিপোর্টার-
২০০৯ সালে নিষিদ্ধ হলেও সদস্য সংগ্রহসহ সাংগঠনিক নানা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরীর। তবে বিভিন্ন সময় সংগঠনটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা গেলেও আড়ালে থেকে গেছেন শীর্ষ নেতারা।
কাটআউট পদ্ধতিতে নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করায় কোনভাবেই শীর্ষ নেতাদের শনাক্ত করতে পারছিলেন না গোয়েন্দারা। অবশেষে হিজবুত তাহরীরের শীর্ষ নেতা তৌহিদুর রহমান ওরফে তৌহিদ ওরফে সিফাত (২৯) নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।
সিটিটিসি জানায়, হিজবুত তাহরীরের শীর্ষ নেতাদের শনাক্ত করে গ্রেফতার একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো। তারা হাইলি রেডিকালাইজড এবং কাটআউট পদ্ধতিতে বিভিন্ন সাংগঠনিক কাজ চালিয়ে আসছিল। সিটিটিসি অনেক সাফল্যের সঙ্গে হিজবুত তাহরীরের সবচেয়ে বড় নেতাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। গ্রেফতার মপতৌহিদ হিজবুত তাহরীরের শীর্ষ ২-৩ জনের মধ্যে একজন।
বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর গেয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (সিটিটিসি) প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, বুধবার (৬ ডিসেম্বর) দিনগত রাতে কক্সবাজার থেকে তৌহিদুর রহমান ওরফে তৌহিদ ওরফে সিফাতকে (২৯) গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি হিজবুত তাহরীরের শীর্ষ নেতাদের একজন। গত ৩০ সেপ্টেম্বর হিজবুত তাহরীর একটি অনলাইন সম্মেলন করে। তারা সম্মেলনের জন্য রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পোস্টার টানায়, অনলাইন প্রচারণা ও ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হয়। সম্মেলনে নানা রকম বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হয়েছে।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, ২০০৩ সালের একটি সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে হিজবুত তাহরীর। সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের প্রকাশ্য প্রচেষ্টায় সংগঠনটি যাত্রা শুরু করে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে হিজবুত তাহরীর প্রচলিত রাষ্ট্র ব্যবস্থায় বিশ্বাস করেনা। তারা প্রচলিত আইন মানেনা বলেও প্রচারণা চালিয়ে আসছে। বর্তমান রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করে খেলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য দাওয়াতি কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। যার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে একধরনের সাম্প্রদায়িক উস্কানি তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। ২০০৯ সালে হিজবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকার। এরপর থেকে আত্মগোপণে থেকে সংগঠনটির নেতারা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। এরমধ্যে আমরা অনেককে গ্রেফতার করেছি তবে শীর্ষ পর্যায়ের নেতা গ্রেফতার এবারই প্রথম।
তিনি বলেন, যেসব এলাকায় সিসিটিভির আওতায় নেই বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি কম সেসব স্থান আগে থেকে রেকি করে তারা পোস্টার লাগাতো। তারপরেও পোস্টার লাগানোর সময় আমরা অনেককে হাতে-নাতে গ্রেফতার করেছি। কিন্তু শীর্ষ নেতাদের শনাক্ত করে গ্রেফতার চ্যালেঞ্জ ছিলো। তারা হাইলি রেডিকালাইজড এবং কাটআউট পদ্ধতিতে নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। নিচের সারির কাউকে গ্রেফতার করা গেলেও তার উপরের কারও বিষয়ে কোন তথ্য পাওয়া যেতোনা। কিন্তু সিটিটিসি অনেক সাফল্যের সাথে হিজবুত তাহরীরের সবচেয়ে বড় নেতাদের একজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে।
সিটিটিসি প্রধান আরও বলেন, হিজবুত তাহরীর সাধারণত উচ্চবিত্ত ও মেধাবীদের টার্গেট করে প্রচারণা চালায়। তাদের ভাবনা, যদি এই শ্রেণিকে রিক্রুট করতে পারে প্রতিষ্ঠিত সমাজে সমর্থন পাবে এবং খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। তারা সদস্য সংগ্রহের জন্য বিশ্বিবদ্যালয়গুলোকেও টার্গেট করে।
গ্রেফতার তৌহিদের পরিবারের একজন সদস্য সিভিল সার্ভিস কর্মকর্তা। এছাড়া পরিবারের বেশ কয়েকজন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তৌহিদ ২০১১ ও ২০১৯ সালে গ্রেফতার করা হয়েছিল। জেল থেকে জামিনে বেরিয়ে আবারও সাংগঠনিক কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ে। দীর্ঘ ১২ বছরে তৈহিদ সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ে চলে আসে।
তৌহিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে হিজবুত তাহরীরের ফুলটাইম সদস্য হিসেবে কাজ করে আসছিল। ৩০ সেপ্টেম্বর তাদের অনলাইন সম্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন তৌহিদ। আমাদের তদন্ত অব্যাহত আছে। তাকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমরা খুব বেশি সময় পাইনি। তবে তাকে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হবে। আশা করছি রিমান্ডে তার কাছ থেকে সংগঠন সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পাওয়া যাবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা সম্মেলনের বিষয়টি জানার পর কনফিউজড ছিলাম সম্মেলনটি দেশের ভেতরে নাকি বাইরে থেকে অনুষ্ঠিত করা হয়েছে। এখনো স্থানটি এক্সাক্টলি শনাক্ত করতে পারিনি, তবে বাংলাদেশের কোথাও করেছে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করাও চ্যালেঞ্জের বিষয়। আশা করছি জিজ্ঞাসাবাদে বিস্তারিত জানতে পারবো, পরে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাবো।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা শীর্ষ নেতাদের শনাক্ত করতে কাজ করে যাচ্ছিলাম, কিন্তু শনাক্ত করতে পারিনি। তারা খুবই প্রোটেকটিভ ভাবে যোগাযোগ করে। তাদের শনাক্ত করা চ্যালেঞ্জের বিষয় ছিলো।
সম্মেলনে মঞ্চে উপস্থিত তিনজনের মধ্যে দুইজন বক্তব্য দেয় ও একজন উপস্থাপক ছিলো। আমরা প্রধান ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে পেরেছি, আশা করছি বাকি দুইজনকে গ্রেফতার করতে পারবো। তাদের সম্মেলনের মূল বিষয় ছিলো বর্তমান সরকারকে উৎখাত করা। তবে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিস্তারিত জানা যাবে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা পোস্টার কোথায় ছাপায় এটা আমাদেরও প্রশ্ন, জিজ্ঞাসাবাদে বিষয়গুলো জানার চেষ্টা করবো। যারা পোস্টার টানায় তাদেরকে হয়তো হাতে নাতে ২-১ জনকে গ্রেফতার করতে পেরেছি বিভিন্ন সময়। কিন্তু তারা কাট আউট, স্লিপার সেল পদ্ধতিতে কাজ করে। তাদের রিক্রুট কৌশলটাও একটু অন্যরকম। বিভিন্ন গ্রুপকে টার্গেট করে মেসেজ দেয় তাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য। আমরা বিষয়গুলো জানার চেষ্টা করবো।
কারাগারে রেডিকালাইজেশনের বিষয়ে তিনি বলেন, কারাগারে আমাদের কোন সুপারভিশন থাকেনা। তবে যারা অথোরিটি আছে আশা করি তারা এ বিষয়ে সচেতন। আমরা যতটুকু জানি জঙ্গিদের আলাদা সেলে সর্বোচ্চ নজরদারীতে রাখা হয়। এরপরেও তারা সুযোগ নিয়ে নিজেদের কাজ করতে পারে। তবে আমরা কারাগারে ডিরেডিক্যালাইজড সিস্টেমের মধ্যেও যাচ্ছি, খুব শীঘ্রই আমরা এ বিষয়ে কাজ শুরু করবো। জঙ্গিরা জেল থেকে বের হয়ে সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়েও চলে আসছে, আমরা এ বিষয়ে কনসার্ন।