চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলার পুঁইছড়ি ইউনিয়নের দক্ষিন পুইছড়ির শীল পাড়ার বাসিন্দা মদন কান্তি সুশীল মধু। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরন করার পর তার লাশ সৎকার নিয়ে মানবতার ইতিহাসের নির্মম এক নাটকিয়তা দেরীতে হলেও সোস্যাল মিডিয়ার সুবাধে সারাদেশব্যাপী তীব্র সমালোচনা ও নিন্দার ঝড় উঠেছে।
সমগ্র চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষের মুখে মুখে এখন মদন কান্তির সৎকার প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা।২৪ জুন, বুধবার বৈশ্বিক মহামারী করোনার মৃত্যুর মিছিলে যুক্ত হয় বাঁশখালীর দক্ষিন পুইছড়ি গ্রামের শীলপাড়ার মদন কুমারের নাম। চট্টগ্রামের ইউএসটিসি’তে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার পর ইউএসটিসি তে মারা যান মদন কান্তি সুশীল। রাত ১১ টায় পরিবারের থেকে কল আসে চট্টগ্রাম অঞ্চলের করোনা সংকটকালীন লাশ দাফন ও সৎকারকারী সেবা সংস্থা “আল মানাহিলে”র কাঁছে। লাশ নিয়ে যেতে হবে বাঁশখালির দক্ষিণ পুইছড়ির শীলপাড়া গ্রামে।
গোসল করিয়ে লাশ নিয়ে মধ্যরাতে যাত্রা শুরু করে আল মানাহিল।লাশ নিয়ে চট্টগ্রামের আনোয়ারা পর্যন্ত যাওয়ার পর মৃত মদন কান্তি সুশীলের ছেলে জানায় তার প্রতিবেশী জাতি ভাইয়েরা লাশ না নেওয়ার জন্য পরিবারকে হুমকি ধামকি দিচ্ছে। এক পর্যায়ে তারা বলে যদি লাশের সৎকার ও শেষকৃত্য বাঁশখালী পুঁইছড়ির শীলপাড়া গ্রামে হয় তবে তাদেরকে সমাজচ্যুত করা হবে, জ্বালিয়ে দেওয়া হবে তাদের পৈতৃক ঘর।এমতাবস্থায় অবস্থায় আল মানাহিলের পক্ষ থেকে প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করা হয়।
কিন্ত প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই মৃত মদন কান্তি সুশীলের ছেলে অসীম কান্তি সুশীল কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে আল-মানাহিল টিমের কাঁছে অনুরোধ করে, লাশ যাতে বাঁশখালীতে না নেওয়া হয়। স্বজাতী ও স্বগোত্রীয়দের চাপ-হুমকি-ধমকির এত ঝামেলায় তারা যেতে চায় না। শান্তিমত বাবাকে শেষযাত্রার বিদায় দিতে চায় মৃত মদন পরিবারের সদস্যরা।পরবর্তীতে লাশ নিয়ে যাওয়া হয় চট্টগ্রাম নগরীর বলুয়ারদীঘি শ্মশানে। বিভিন্ন কারণে সেখানেও লাশের শেষকৃত্য করার অনুমতি পায়নি আল-মানাহীল।অবশেষে দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর পরদিন সকাল ১০ টায় উত্তর কাট্টলী শ্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
শেষ হয় আল মানাহিল ও মৃতের পরিবারের অবর্ণনীয় দুর্ভোগের ১২ ঘণ্টার যুদ্ধ।এলাকায় অতি স্বজ্জন ও সহজ-সরল ব্যক্তি হিসাবে পরিচিত মদন কান্তি সুশীল চট্টগ্রাম শহরে নরসুন্দর পেশায় নিজেকে নিয়োজিত রেখে পরিবারের ভরন-পোষন চালাত। এমন একজন মানুষের শেষযাত্রার সৎকার ও শেষকৃত্য নিয়ে স্বজ্বাতি ও গোস্টির এমন অমানবিকতায় স্তম্ভিত হয়েছে এলাকার সুশীল সমাজ।পুইছড়ী জমিদার বাড়ীর প্রতিনিধি সুলতানুল আজিম চৌধুরী, ফেসবুক সূত্রে প্রাপ্ত সংবাদে ঊষ্মা প্রকাশ করে বলেন, সত্যি বলতে কি , এতদিন আমি বিষয়টি এফবি’তে দেখলেও সঠিক বুঝে উঠতেই পারিনি কোথাকার কি ঘটনা ! আর (মধু’র) নাম মদন সুশীল তাও জানতাম না ।
মিঠুনের কাছ হতে কালকে জানতে পারলাম মধু মারা গেছে । কিন্তু গ্রামে দাহ্ করতে না দেওয়া ব্যক্তি যে আমাদের প্রিয় মধু’দা এবং আমাদের গ্রামের ঘটনা তা আমার ধারণার কাছেও ছিল না । বিষয়টি একান্তই আমাদের এলাকার । কারা বাঁধা দিয়েছে ধারণার বাইরে না । তারা কম বেশি সবাই শিক্ষিত বটে কিন্তু প্রশ্ন জাগে কতটুকু সুশিক্ষিত ! এ আধুনিক যুগে এসে মান্ধাতার আমলের যুক্তি দেখিয়ে বাঁধা দেওয়া!! স্রষ্টা না করুন তাদের মধ্যে হতে কেউ যদি এই মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় তাহলে এমনটি ঘটনা ঘটানোর পর তারা কি আশা করতে পারে ? শীল পাড়ার ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশি সবাই মুসলিম তাদের কোন মতামত না নিয়ে এমনটি করা আপনজনদেরও ও বোকামি হয়েছে ।
সম্প্রদায়ের বাঁধা দান কারীরা এলাকার সুশীল ও সাধারণ মানুষের নিকট অসভ্য হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে । তৎক্ষনাৎ বিষয়টি আমার নজরে আসলে আমিই ব্যবস্হা নিতাম । কোন শক্তি বাঁধা দিয়ে ঠেকাতে পারতনা। আমি বড়ই মর্মাহত । শিক্ষিত দাবী করে মুর্খের কাজ করেছে মধুদা’র স্বগোত্রীয় স্বজনরা।
মদন কান্তি সুশীল মধুর শেষকৃত্য ও লাশ সৎকার নিয়ে অমানবিক এ নাটকিয়তা সোস্যাল মিডিয়ার সুবাধে বিলম্বে প্রকাশিত হলেও বর্তমানে টক অব দ্যা বাঁশখালীতে পরিনত হয়েছে। অনেকের এখন জিজ্ঞাসা, মদন কান্তির লাশের সৎকারকে কেন্দ্র করে কোন স্বার্থান্বেষী মহলের কোন দূর্ভিসন্ধি ছিল কিনা তা অনুসন্ধান করে নিহত মদন কান্তি সুশীলের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রশাসনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।