যশোরে কোভিড-১৯ নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২ জন মারা গেছেন বলে গত ২৪ ঘন্টার তথ্য রেকর্ডে উল্লেখ করেছেন স্বাস্থ্য বিভাগ। এই নিয়ে এই পর্যন্ত জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৭ জন। এদিকে, যশোরে ৫ পুলিশ সদস্য ও ২ র্যাবসহ নতুন করে আরও ৩১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
ফলে শুক্রবার পর্যন্ত যশোরে ৪৭১ জন রোগী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। যশোর সিভিল সার্জন অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকর্তা ডা. রেহেনেওয়াজ জানিয়েছেন, নতুন শনাক্ত ৩১ জনের মধ্যে যশোর সদর উপজেলায় ২২ জন ও অভয়নগর উপজেলার ৯ জন। করোনায় আাক্রান্ত সন্দেহে এদিন যশোর জেলার আরও ৭ জনের নমুনা সংগ্রহ করে যবিপ্রবি ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। ডা. রেহেনেওয়াজ জানান, গত ২৪ ঘন্টায় যশোরে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে রেকর্ড করা হয়েছে।
তারা হলেন যশোর সদর উপজেলার রুপদিয়ার চাউলিয়া গ্রামের মৃত নাসির গাজীর ছেলে আব্দুল খালেক গাজী (৩৪) ও বেনাপোল পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ব্যবসায়ী মোমিনুর রহমান (৫০)। এর আগে মারা যাওয়া ৫ জন। তারা হলেন অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া পৌরসভার শংকপরপাশার বাসিন্দা বিশিষ্ট শিল্পপতি আমির হোসেন (৭৫), নওয়াপাড়া পৌর এলাকার আনিসুর রহমান (৫৫), গুয়াখোলা গ্রামের সাংবাদিক বিল্লাল হোসেন (৫৩),শার্শা উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামের জাকির হোসেন (৫০) ও যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের ছাতিয়ানতলা গ্রামের সরদার পাড়ার আব্দুল ওহাব আলী সরদার (৭০)। যশোর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. আদনান ইমতিয়াজ জানান, সদর উপজেলায় আক্রান্ত ২২ জনের মধ্যে রয়েছেন ৫ জন পুলিশ ও ২ জন র্যাব সদস্য রয়েছেন।
পুলিশের ৫ সদস্য যশোর পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। রাতে তাদের করোনা ডেডিকেটেড জিডিএল হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। আর র্যাবের ২ জন সদস্য আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি তাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। বাকি ১৫ জনের মধ্যে ঘোপ সেন্টাল রোডে একই পরিবারের ৪জনের মধ্যে ২ জন পুরুষ ও ২ জন নারী। এই পরিবারের ১ জন বাঘারপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপসহকারি কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (সেকমো) পদে চাকরি করেন। কয়েক দিন আগে তারও করোনা শনাক্ত হয়। তার সংস্পর্শে পরিবারের অন্যরা আক্রান্ত হতে পারেন।
এছাড়া বেজপাড়া টিবি ক্লিনিক এলাকায় একই পরিবারের ২ জন, বেজপাড়া নলডাঙ্গা এলাকায় ১, চাঁচড়া চেকপোষ্ট এলাকায় ১ জন, নাজির শংকর পুর এলাকায় ১ জন, নীলগঞ্জ সাহাপাড়ায় ১ জন, সদর উপজেলার সুজলপুর গ্রামের ১ জন ও ঝুমঝুমপুর এলাকার ১ জন ও রুপদিয়া চাউলিয়া গ্রামে ১ জন। এদের মধ্যে গত ২৪ জুন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান চাউলিয়া গ্রামের আক্রান্ত যুবক। আক্রান্তদের বাড়ি সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জাকির হোসেনের নেতৃত্বে লকডাউন করা হয়েছে। পুলিশ ও র্যাব সদস্য ছাড়া সবাই হোমআইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ।
অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহমুদুর রহমান রিজভী জানিয়েছেন, নতুন করে আক্রান্ত ৯ জনের মধ্যে বুইকারার একই পরিবারের ৪ জন, বোকলা গ্রামের একই পরিবারের ৩জন, বউবাজার তরফদারপাড়ার ১ জন ও দেয়াপাড়ার ১ জন। তারা হোমআইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আক্রান্তদের বাড়ি লকডাউন করেছে উপজেলা প্রশাসন। যবিপ্রবির এনএফটি বিভাগের চেয়ারম্যান ও পরীক্ষণ দলের সদস্য ড. শিরিন নিগার জানিয়েছেন, জিনোম সেন্টারে যশোর জেলার ৮২ নমুনা পরীক্ষায় ৩১ জনের ছাড়াও মাগুরা জেলার ২৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৭ জন, বাগেরহাট জেলার ৫৮ নমুনা পরীক্ষায় ৯ জন ও সাতক্ষীরা জেলার ৭৪ নমুনা পরীক্ষায় ১৫ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।
সবমিলিয়ে ২৭০ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৬৯ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। বাকি ২০১ জনের ফলাফল নেগেটিভ এসেছে। যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানান, শুক্রবার পর্যন্ত জেলায় মোট ৪৭১ জন করোনা রোগী শনাক্ত হলেন। সুস্থ হয়েছেন ১৫৭ জন। মারা গেছেন ৭ জন।
সিভিল সার্জন জানান, যশোরে করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এতে করে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারাও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। যশোরের করোনা পরিস্থিতি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।