সোহেল রানা , ঢাকা :
রাষ্ট্রীয়ভাবে কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফ্ফুজে খতমে নবুওয়াত বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর ৭ নং জোনের উদ্যোগে উলামা-মাশায়েখ সীরাত কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি আল্লামা আতাউল্লাহ হাফিজ্জী এবং প্রধান আলোচক আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফ্ফুজে খতমে নবুওয়াত বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মুহিউদ্দীন রাব্বানী কাদিয়ানীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণার দাবি জানান।
বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সাভার বন্ধন রেস্টুরেন্টের মিলনায়তনে সীরাত কনফারেন্সটি অনুষ্ঠিত হয়।
বক্তৃতাকালে বক্তারা বলেন, আমরা মুসলমান। আমাদের বিশ্বাস হলো হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল। তারপর নতুন করে কেউ নবী রাসূল হিসেবে আগমণ করবে না। এটা কুরআন-সুন্নাহ ইজমা-কিয়াসের সর্বসম্মত বক্তব্য। উপরোক্ত বিষয়টি দ্বীন ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস। যা অস্বীকার করলে কিংবা সন্দেহ পোষণ করলে ঈমান থাকে না। অথচ তথাকথিত ‘আহমদীয়া মুসলিম জামাত’ নামধারী কাদিয়ানীরা নিজেদের মুসলিম দাবি করলেও উল্লেখিত বিশ্বাসটি অস্বীকার করে। যার ফলে তারা মুসলমানদের ধর্ম বিশ্বাস থেকে বের হয়ে যায়। তাদের নতুন এক ধর্ম বিশ্বাস প্রতিষ্ঠিত হয়, সেটা হলো কাদিয়ানী ধর্মমত। তাই রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদেরকে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে।
তারা আরো বলেন, তাদের অসংখ্য কুফুরী মতবাদের মধ্যে একটি হলো এই- ‘মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী প্রতিশ্রুত মাসীহ, ইমাম মাহদী এবং প্রেরিত নবী ও রাসূল’ (নাউজুবিল্লাহ ) (রুহানী খাযায়েন-খ:১৮ পৃ:২০৭, কালিমাতুল ফসল-১৫, লেখক: মির্জাপুত্র বশির আহমদ এম এ, আখবারে বদর আল:২ পৃ:৪৩) এ সকল অসংখ্য কুফুরী মতবাদ প্রচার করে তারা মুসলমানদের ঈমান ধ্বংস করছে। তাই তাদের অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে।
বক্তারা বলেন, সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মুসলমান হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টানসহ বিভিন্ন জাতি-ধর্মের মানুষ এদেশে একসাথে বসবাস করে। বাংলাদেশের ৯০ ভাগ নাগরিক ইসলাম ধর্মের অনুসারী মুসলিম। সকল ধর্মের অনুসারীরা স্বাধীনভাবে তাদের নিজ নিজ ধর্ম পালন করছে। বাংলাদেশের মহান সংবিধানেও ধর্মীয় স্বাধীনতা সংরক্ষণের কথা সুস্পষ্টভাবে রয়েছে।
বক্তারা আরো বলেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে এবং ইসলামের নামে তাদের সকল প্রকাশনা, প্রচার-প্রচারণা নিষিদ্ধ করতে হবে, ইসলামী পরিভাষা ব্যবহার করা অমুসলিমদের জন্য সম্পূর্ণ অবৈধ। অতএব ইসলামের সকল পরিভাষা যেমন- কালিমা, নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, মসজিদ, আজান, ইকামত, নবী, মাহদী শব্দ ইত্যাদি তাদের জন্য সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে।
বক্তারা বলেন, কাদিয়ানীরা শত শত একর জমি ক্রয় করে রাষ্ট্রের ভেতরে আলাদা রাষ্ট্র কায়েম করার পরিকল্পনা করছে, তাদের এই পরিকল্পনা ধ্বংস করে দিতে হবে। আমরা সরকারকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। আলেমদের দাবি- তারা পূর্ব থেকেই তারা কাফের হয়ে আছে, এক্ষেত্রে আদালতের একটি রায়ও রয়েছে, এখন প্রয়োজন রাষ্ট্রীয়ভাবে সেটির বাস্তবায়ন করা।
আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফ্ফুজে খতমে নবুওয়াত বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর ৭ নং জোনের সেক্রেটারি মুফতি মাহফুজুর রহমান ও রফিকুল ইসলাম সরদারের সঞ্চালনায় উলামা মাশায়েখ সীরাত কনফারেন্সে বক্তব্য রাখেন, মুফতি শাহ নুরুল আমীন, মুফতি সাঈদ নূর, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী , মাওলানা জহুরুল ইসলাম, মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, মুফতি কিফায়াতুল্লাহ আজহারী, মুফতি আব্দুর রাজ্জাক কাসেমী, মাওলানা ইউসুফ সাদিক হক্কানী, মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম সোবহানী, মুফতি মাসউদুল করীম ও মুফতি জাহিদুল ইসলাম কাসেমী প্রমুখ।
সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন মাওলানা কাউসার হোসাইন ও মাওলানা সুলতান মাহমুদ।
এ সময় সাংগঠনিক কার্যক্রমকে আরো বেগবান করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফ্ফুজে খতমে নবুওয়াত বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর ৭ নং জোন সাভার আশুলিয়া ধামরাইয়ের ২০১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির সভাপতি হিসেবে মাওলানা আলী আজম ও মুফতি মাহফুজুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়।