স্টাফ রিপোর্টার –
চারবারের এমপি শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর যেকোনো মুহুর্তে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎ পেতে পারেন। দল পরিবর্তনের কারণে অনুতপ্ত শাহ মোহাম্মদ আবু জাফরের কৃতকর্মকে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্যই এই ধরণের আয়োজন হতে পারে বলে রাজনৈতিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সূত্র বলছে, ফরিদপুর-১ আসনে খন্দকার নাসিরুল ইসলাম ও শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনুর মধ্যে বিরোধ, রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রুপ নেওয়ায় বিএনপির হাইকমান্ড শাহ মোহাম্মদ আবু জাফরের মতো পৌঢ় খাওয়া মুক্তিযুদ্ধের সংগঠককে দলে ফিরিয়ে নিতে পারে বলে জোর আলোচনা এখন সর্বত্র। যদিও একাধিকবার দল পরিবর্তন করে তার জনপ্রিয়তা হারিয়ে নানান রাজনৈতিক বিতর্কের জন্মদিয়েছেন প্রবীণ এই রাজনৈতিক।
একাধিক সূত্র জানা গেছে, অতি সম্প্রতি শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর ক্ষমা চেয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে আবেগঘন চিঠি দিয়েছেন। তিনি দল পরিবর্তন করে কিংসপার্টি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে (বিএনএম) যোগ দেওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার চেয়েছেন। কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহসভাপতি ও বিএনপি নেতা নাসিরুল ইসলাম নাসিরের চাঁদাবাজি, দখলবাজি, কমিটি বাণিজ্য, মামলা বাণিজ্য, বালুমহল দখলসহ নানামুখী অপকর্মে তার থেকে বিএনপিকে বাঁচাতে আবু জাফরের প্রয়োজনীয়তা আছে বলে কেন্দ্রীয় অনেক নেতা মনে করেন।
বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল নেতা মনে করছেন, নাসিরের এসব অপকর্মের কারনেই চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া যেকোনো সময় ডাকতে পারেন শাহ মোহাম্মদ আবু জাফরকে। একইসঙ্গে তাকে সতর্ক করে ক্ষমা করে দিতে পারেন শেষবারের মতো।
বারবার দল বদলে অভ্যস্ত শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, বিএনপি এবং বিএনএম থেকে বিভিন্ন দফায় চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন যদিও একবারও মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি। সর্বশেষ বিএনএম থেকেও পদত্যাগ করে জনতার পার্টি বাংলাদেশে যোগ দেন তিনি।
বিশেষ করে কৃষকদের সহসভাপতি খন্দকার নাসিরের কর্মকাণ্ড বিএনপির ভাবমূর্তিকে চরমভাবে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। কারণ ছয়বার দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কৃত নাসিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ভূরি ভূরি অভিযোগ রয়েছে। সাংবাদিক নির্যাতন থেকে শুরু করে স্থানীয় ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের দলে ভেড়ানো, কমিটি বাণিজ্য, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে সংগঠনে বিভাজন সৃষ্টি করছেন। এতে দীর্ঘদিনের ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতারা উপেক্ষিত হচ্ছেন, বাড়ছে ক্ষোভ ও বিভক্তি। নাসিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে তদন্ত ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে। যেখানে ফরিদপুর–১ আসনে ‘দলীয় বিভাজন’ ও ‘হাইব্রিড প্রভাব’ বাড়ার আশঙ্কা তুলে ধরে তদন্তপূর্বক সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
স্থানীয় ত্যাগী নেতাকর্মীরা বলছেন, নাসিরুল ইসলাম আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা ও বিতর্কিত ব্যক্তিদের মোটা অঙ্কের বিনিময়ে বিএনপিতে যোগদান করিয়ে বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের পদে বসাচ্ছেন। তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় জাসদ ছাত্রলীগের মাধ্যমে। ১৯৭১ পরবর্তী সময়ে রাজাকারদের সঙ্গে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে তিনি এলাকা ছেড়ে পালিয়ে ছিলেন বলে দাবি স্থানীয়দের।
বিএনপি ও জাতীয় পার্টির টিকিটে একাধিক নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত খন্দকার নাসিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অতীতে ধানের শীষের প্রার্থীর বিরুদ্ধেও অবস্থান নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। দলীয় সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে সরকারি রাস্তার গাছ কেটে আত্মসাৎ করার অভিযোগে এলাকায় তিনি ‘গেছো নাসির’ নামে পরিচিতি পান।