সাকিব আসলাম
দীর্ঘদিন ধরে আশুলিয়ার আউকপাড়াসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জমি দখল, নিরীহ মানুষের ওপর নির্যাতন, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে আসা বহুল আলোচিত আসামি আইয়ূব আলী সিকদার ওরফে ‘কিলার শিকদার’কে অবশেষে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র হত্যাসহ ৯ টি মামলা থাকলেও তাকে গ্রেপ্তার করে চাঁদাবাজি মামলায় আদালতে প্রেরণ করায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
তাঁকে গ্রেপ্তার করায় স্থানীয়দের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসলেও পুলিশের ভূমিকার কারণে হতাশ এলাকার শান্তি প্রিয় জনগণ।
জানা গেছে, আশুলিয়ার ডন নামে খ্যাত আইয়ূব আলী শিকদার ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের শাসনামলে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। আওয়ামী নেতাদের সান্নিধ্যে গিয়ে তিনি লাভ করেন জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতির পদ। সে সময় আশুলিয়াসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ভূমি দখল, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকলেও আইয়ূব আলী শিকদার
শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা হওয়ায় তিনি ছিলেন ক্ষমতার উর্ধে। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের বাড্ডা থানার ছাত্র হত্যা মামলার আসামী এই আইয়ূব।
গত ৫ আগস্টের পর আইয়ূব আলী শিকদার ওরফে কিলার শিকদার গাঁ ঢাকা দেন। সম্প্রতি তিনি এলাকায় এসে আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেন বলে জানায় এলাকাবাসী।
বর্তমানে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে ছাত্র হত্যা মামলার আসামীদের এবং নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও রহস্যজনক কারণে এতদিন আইয়ূব আলী শিকদার ছিলেন প্রকাশ্যেই।
গত রবিবার (১৯ অক্টোবর) বিকালে আশুলিয়া থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে আইয়ূব আলী শিকদারকে। আশুলিয়া থানাধীন আউকপাড়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন তিনি।
তবে, মামলার নথিপত্র থেকে মুন্সিগঞ্জ, তেজগাঁও ও আশুলিয়ায় তার স্থায়ী ঠিকানার অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আইয়ূব আলী শিকদার এক সময় ময়লার ভাগারে কাজ করতো। এরপর সে চাকরি নেয় তেজগাঁও মিল্ক ভিটা কারখানায়। তিনি ‘ন্যাশনাল প্লাজা বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড’ নাম দিয়ে সরকারি জমি দখল ও জালিয়াতির মাধ্যমে হস্তান্তর শুরু করেন। যা ভূমি সংস্কার বোর্ডের প্রতিবেদনেও উঠে আসে।
আশুলিয়ার আউকপাড়ায় ২০ একর সরকারি সম্পত্তি দখল করে তা প্লট আকারে বিক্রি করে শত কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়ার অভিযোগও আছে আইয়ূব আলী শিকদারের বিরুদ্ধে।
অনুসন্ধান কালে সূত্র জানায়, আশুলিয়া থানায় আইয়ূব আলী শিকদারকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার পর তাঁকে ছাড়িয়ে নিতে তদবির আসে বিএনপির এক উচ্চ পর্যায়ের নেতার কাছ থেকে। অন্যদিকে, কি মামলায় আইয়ূবকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা চেপে রাখে আশুলিয়া থানা পুলিশ। পরে দেখা যায়, ওই বিএনপি নেতার তদবিরে আইয়ূব আলী শিকদারকে একটি চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়।
এই প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে দেখা যায় আইয়ূবের বিরুদ্ধে বাড্ডা থানায় বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে ছাত্র হত্যা মামলা, নিউ মার্কেট থানায় চাঁদাবাজি মামলা এবং আশুলিয়া থানায় বিভিন্ন সময় অপহরণ ও হত্যাচেষ্টাসহ তার বিরুদ্ধে আরো ৭ টি মামলার অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
এব্যাপারে রাজধানীর বাড্ডা থানার ওসি মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান জানান, “জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি আইয়ূব আলী শিকদারকে বাড্ডা থানার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে ছাত্র হত্যার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে।”
এ বিষয়ে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল হান্নানের (ওসি) কাছে জানতে চাওয়া হলে, তিনি তদন্তের স্বার্থে বিস্তারিত জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “আসামির বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ ছিল। যে মামলায় পর্যাপ্ত এবং দ্রুত প্রমাণ পাওয়া গেছে, সেই মামলাতেই তাকে বিজ্ঞ আদালতে পাঠানো হয়েছে। বাকি অভিযোগগুলোর তদন্ত প্রক্রিয়া চলছে।”
জানতে চাইলে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরাফাতুল ইসলাম বলেন, “
চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন আইয়ূব আলী শিকদার। তবে, ছাত্রহত্যা মামলার আসামীকে চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়টি মুখরোচক গল্প। তিনি আরো বলেন, আদালতে প্রেরণের সময় তাকে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হয়েছে, রিমান্ডে আসলে আইয়ূব আলী সিকদারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।”
তবে মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) সকালে আদালতের জিআর শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আইয়ূব আলী শিকদারকে আদালতে প্রেরণের সময় রিমান্ড এবং তার ফরওয়ার্ডিং এ প্রকৃত মামলার তথ্য দেয়নি আশুলিয়া থানা পুলিশ। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সোমবার বিকালে ঢাকার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তাজুল ইসলাম সোহাগের আদালতে তোলা হলে শ্রমিক লীগ নেতা আইয়ূব আলী সিকদারকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।