বিল্লাল হোসেন,যশোর প্রতিনিধি:
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ১২ দিন পর সবচেয়ে কম মৃত্যু রেকর্ড হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৬ জন ও উপসর্গ নিয়ে মারা যান ১ জন। করোনা রেডজোন ও ইয়োলোজোনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়। এরআগে একদিনে ১৭ জনের মৃত্যুর রেকর্ড করা হয়েছিলো। এদিকে, রোববার জেলায় ৪৮০ টি নমুনা পরীক্ষায় ১৩৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
হাসপাতালে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আরিফ আহমেদ জানান, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত ৬ জন হলেন যশোর শহরের ঘোপ সেন্ট্রাল রোডের বিজন বাহাদুরের স্ত্রী নিশা মন্ডল (২৩), সদর উপজেলার নতুন উপশহর আড়পাড়ার জিরাব্দী মোল্যার ছেলে হোসেন আলী (৪০), ঝিকরগাছা উপজেলার বেনেয়ালী গ্রামের সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী হামিদা বেগম (৬৫), ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার ছুটিপুর গ্রামের আসলাম হোসেনের স্ত্রী জোহরা বেগম (৪৮) ও নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার রামকান্তপুর গ্রামের জলিল শেখের স্ত্রী সুফিয়া বেগম (৪৮)। এছাড়া করোনার উপসর্গ নিয়ে নার্গিস আক্তার (৪৫) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ইকবাল হোসেনের স্ত্রী। এরআগের ১২ দিনে হাসপাতালের রেডজোন ও ইয়োলোজোনে করোনায় আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৪৮ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ১০ জুলাই ১২ জন, ৯ জুলাই ১২ জন, ৮ জুলাই ১১ জন, ৭ জুলাই ১৬ জন, ৬ জুলাই ১২ জন, ৫ জুলাই ১৬ জন, ৪ জুলাই ১৭ জন, ৩ জুলাই ১০ জন , ২ জুলাই ৯ জন, ১ জুলাই ৯ জন, ৩০ জুন ১২ জন ও ২৯ জুন ১২ জন মারা যান বলে মৃত্যু রেজিস্ট্রার খাতার উল্লেক করা তথ্যে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আখতারুজ্জামান জানান, রোগীরা শেষ মুহুর্তে হাসপাতালে এসেও অক্সিজেন, আইসিইউ সুবিধা পেলেও অনেকে মৃত্যুর কাছে হেরে যান। করোনা উপসর্গ দেখা দেয়ার সাথেই যতি তারা পরীক্ষা নিরীক্ষা ও চিকিৎসাসেবা নিতে আন্তরিক হতেন তাহলে এমনটা হতো না। বিলম্বে হাসপাতালে আসা রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করে সারিয়ে তোলা অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে। শারীরিক অবস্থার সামান্য অবনতিতে হাসপাতালে ভর্তির ব্যাপারে রোগীর স্বজনদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন। তাহলে সঠিক সময়ে চিকিৎসাসেবায় মৃত্যুর সংখ্যা কমানো সম্ভব হবে।
যশোর সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য কর্মকর্তা ডা. রেহেনেওয়াজ জানান, রোববার যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জেনোম সেন্টারে ১১১ টি নমুনা পরীক্ষায় ৩৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এছাড়া যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩৫৩ জনের র্যাপিড এন্টিজেন পরীক্ষায় ৯৬ জন পজেটিভ হয়েছে। এছাড়া জিন এক্সাপার্ট মেশিনে ১৪ জনের পরীক্ষায় ৩ জনের শরীরে করোনার জীবাণু মিলেছে। মোট শনাক্ত ১৩৫ জনের মধ্যে সদর উপজেলায় ৭০ জন, কেশবপুর উপজেলায় ৫ জন, ঝিকরগাছা উপজেলায় ১৪ জন, অভয়নগর উপজেলায় ২০ জন, মণিরামপুর উপজেলায় ১০ জন, বাঘারপাড়া উপজেলায় ৮ জন, শার্শা উপজেলায় ২ জন ও চৌগাছা উপজেলায় ৬ জন রয়েছেন।
যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানান, ১১ জুলাই পর্যন্ত যশোর জেলায় ১৫ হাজার ৩শ’ ৯৯ জন কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। সুস্থ হয়েছেন ৯ হাজার ১শ’ ৬৭ জন। যশোরের বিভিন্ন হাসপাতাল ও বাড়িতে মৃত্যু হয়েছে ২১৮ জনের। এছাড়া ঢাকায় ৬ জন খুলনায় ৭ জন ও সাতক্ষীরার হাসপাতালে মারা গেছেন ১জন। সিভিল সার্জন আরও জানান, করোনাকে মানুষ পাত্তা না দেয়ার কারণেই যশোরে এখন করোনা পরিস্থিতি অবনতি হচ্ছে। যত নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে তত বেশি করোনা পজেটিভ রোগী শনাক্ত হচ্ছে। ফলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মানুষকে সাবধানতার সাথে থাকতে হবে। কঠোর লকডাউনের নিয়মনীতি মেনে চলতে হবে।