বৃহস্পতিবার যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন (করোনা) ওয়ার্ডে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দিগ্ধ দুইজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এছাড়া যশোরে ১ জন চিকিৎসক ,২ জন পুলিশ , ১ জন নারী ফার্মাসিস্ট ও ১ জন পরিছন্নকর্মীসহ আরও ১৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে ১৪ জন নতুন রোগী ও ২ জন পুরাতন রোগী রয়েছেন। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ৫৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৬ জনের শরীরে কোভিডের অস্তিত্ব মেলে।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আরিফ আহমেদ জানান, আইসোলেশন ওয়ার্ডে মারা যাওয়া ২ জন হলেন যশোর সদর উপজেলার ঝুমঝুমপুর এলাকার মৃত কেসমত আলীর ছেলে আরশাফ আলী (৫৭) ও নওয়াদাগা গ্রামের কায়েশ বিশ্বাসের ছেলে সাধু বিশ্বাস (৩০)। আরএমও জানান, বুধবার রাত ৯টা ২০ মিনিটে করোনার উপসর্গ নিয়ে আরশাফ আলী ভর্তি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার ২টা ৪০ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। আর সাধু বিশ্বাস হয়েছিলেন বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫টা ৩০ মিনিটে মারা যান তিনি। আরশাফ আলী ও সাধু বিশ্বাসের জ্বর ঠান্ডা ও শ্বাসকষ্ট ছিলো। সকালে আরশাফ আলীর নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া সাধু বিশ্বাসের মৃত্যুর পর নমুনা সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের দাফন করার জন্য স্বজনদের বলা হয়েছে। যশোর সিভিল সার্জন অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকর্তা ডা. রেহেনেওয়াজ জানিয়েছেন, ১৬ জন শনাক্তের মধ্যে ১৪ জন নতুন রোগীর মধ্যে যশোর সদর উপজেলার ৩ জন, শার্শা উপজেলায় ৩ জন, কেশবপুর উপজেলায় ৩ জন অভয়নগর উপজেলায় ৩ জন, ঝিকরগাছা উপজেলায় ১ জন ও চৌগাছা উপজেলায় ১ জন রয়েছেন।
আর পুরাতন ২ রোগীর মধ্যে ১ জন সদর উপজেলার অপরজন শার্শা উপজেলার। তিনি আরো জানান, করোনায় আক্রান্ত সন্দেহে বৃহস্পতিবার আরো ৪৯ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য যবিপ্রবির জিনোম সেন্টারে পাঠানো হয়েছে। যশোর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য উপজেলার মেডিকেল অফিসার (রোগ নিয়ন্ত্রন) ডা. এ এন এম নাসিম ফেরদৌস জানান, সদর উপজেলায় আক্রান্ত ৩ জনের মধ্যে আদ-দ্বীন মেডিকেল কলেজের ১ জন সহযোগী অধ্যাপক , ১ জন স্কুল হেলথ ক্লিনিকের নারী ফার্মাসিস্ট ও ১ জন ঠিকাদার রয়েছেন। সহযোগী অধ্যাপক ও নারী ফামাসিস্ট পোস্ট অফিস পাড়া ও ঠিকাদার বসবাস করেন বাহাদুরপুর গ্রামে। তিনি আরো জানান, স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষে তার সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছেন বৃহস্পতিবার সকালে তিনি (সহযোগী অধ্যাপক ) স্বপরিবারে ঢাকায় গিয়েছেন।
তাকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। নারী ফার্মাসিস্ট ও ঠিকাদারের বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। তারা হোমআইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ঝিকরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, ঝিকরগাছায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ঝিকরগাছা থানার এসআই মিরাজুল ইসলাম (৪১)। জ্বর ঠান্ডায় আক্রান্ত হলে গত ১৫ তারিখে তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছিলো। ফলাফল পজেটিভ হওয়ার বিষয়টি ওই পুলিশ সদস্য ও থানার অফিসার ইনচার্জকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি হোমআইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আলমগীর হোসেন জানিয়েছেন, নতুন করে আক্রান্ত ৩ জনের মধ্যে ১ জন হলেন কেশবপুর থানায় কর্মরত এএসআই তরিকুল ইসলাম (৩৬)।
তার বাসা লকডাউন করার জন্য উপজেলা প্রশাসনকে বলা হয়েছে। বর্তমানে হোমআইসোলেশনে তার চিকিৎসাসেবা চলছে। অপর ২ জনের মধ্যে ১ জন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি ও অপরজন গৃহিনী। চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.লুৎফুন্নাহার লাকি জানান, নতুন আক্রান্ত নারী চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন পরিছন্নকর্মী। এরআগে তার স্বামী ও মেয়ের করোনা শনাক্ত হয়েছিলো। তিনি হোমআইসোলেশনে ছিলেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে শ্বাসকষ্ট বাড়লে তাকে যশোর বক্ষব্যাধি হাসপাতালে আইসোলেশনে পাঠানো হয়েছে। সেখানে তার চিকিৎসাসেবা চলছে। অভয়নগড়র উপজেলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.মাহমুদুর রহমান রিজভী জানান, নতুন করে আক্রান্ত ৩ জনের বাড়ি উপজেলার বোয়াখোলা গ্রামে। এরমধ্যে ৫২ বছর বয়সী একজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। অন্য ২ জন হোমআইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সকলের বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে।শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.ইউসুফ আলী জানান, ফলাফল হাতে পাওয়ার পর নতুন করে আক্রান্ত ৩ জনের বাড়ি লকডাউন করার জন্য প্রশাসনকে বলা হয়েছে।
তারা হোমআইসোলেশনে রয়েছেন। যবিপ্রবির অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও পরীক্ষণ দলের সদস্য ড. তানভীর ইসলাম জানিয়েছেন, জিনোম সেন্টারে যশোরের ৫৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৬ জন ছাড়াও , নড়াইলের ২২ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৪ জন, মাগুরার ১৮ নমুনা পরীক্ষায় ২ জন, বাগেরহাটের ৭৬ নমুনা পরীক্ষায় ১৭ জন। সবমিলিয়ে ১৭০ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৩৯ জনের করোনা পজিটিভ ও ১৩১ জনের নেগেটিভ ফলাফল এসেছে।যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানান, হাসপাতালের আইসোলেশ ওয়ার্ডে ২ জন মারা যাওয়ার খবর শুনেছি। ওয়ার্ড থেকে সতর্কতার সাথে মৃতদেহ পাঠানো হয়েছে।
তাদের নমুনা পরীক্ষার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে তারা করোনায় আক্রান্ত ছিলেন কিনা। সিভিল সার্জন আরো জানান, যশোরে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত যশোর জেলায় মোট ২৮২ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। সুস্থ হয়েছেন ১২০ জন। এছাড়া মারা গেছেন ১ জন।