নয়ন সরদার,শার্শা প্রতিনিধি:
দেশে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় সংক্রমণ প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ভারত থেকে আশা যাত্রীদের ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে ।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সেই সঙ্গে বিদেশ থেকে যেসব যাত্রী দেশে ফিরবেন নিজ খরচে তাদের ১৪ দিন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।
মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) দুপুরে নির্দেশনার একটি পত্র বেনাপোল ইমিগ্রেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ ও পুলিশের হাতে এসে পৌঁছায়। তবে এ আদেশ কিছুটা শিথিল করছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ভারত থেকে যেসব যাত্রী বাংলাদেশে ফিরবেন বা আসবেন তাদের ভারতীয় সরকারি স্বাস্থ্য বিভাগের পিসিআর থেকে নির্ভুল করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট সঙ্গে নিয়ে আসতে হবে। এরপর চেকপোস্টে নিয়োজিত স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা তাদের করোনা টেস্ট করে চেকপোস্ট থেকে ছাড়পত্র দেয়ার পর ১৪ দিন নিজ বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। যাত্রীদের যে এলাকায় বাড়ি সেখানকার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জানিয়ে দেয়া হবে। আর টেস্টে করোনার অস্তিত্ব পাওয়া গেলে তাদের অবশ্যই কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। আর যারা নরমাল সার্টিফিকেট সঙ্গে করে আনবেন তাদের অবশ্যই স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশ মতে ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে নিজ খরচে।
জানা গেছে, এমন সিদ্ধান্তে এতে দুশ্চিন্তা ও হতাশায় পড়েছেন যাত্রীরা। সরকারি তত্ত্বাবধানে কোয়ারেন্টাইন চালুর দাবি জানিয়েছেন যাত্রীরা। তবে আমেরিকা ও ইউরোপ থেকে আসা যাত্রীদের অবশ্যই ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে বলে জানান ইমিগ্রেশন ওসি আহসান হাবিব।
এদিকে পূর্ব প্রস্তুতি না থাকায় এই মুহূর্তে ভারতফেরত যাত্রীদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছে ইমিগ্রেশন স্বাস্থ্য বিভাগ।
বেনাপোল ইমিগ্রেশন স্বাস্থ্য বিভাগের মেডিকেল অফিসার আশরাফুজ্জামান জানান, যাত্রীদের কোয়ারেন্টাইনে রাখার পরিবেশ তৈরি করতে স্থানীয় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ যৌথভাবে কাজ করছে। এ নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক রয়েছে। পরিবেশ তৈরি করে আগামী দুই/একদিনের মধ্যে কোয়ারেন্টাইন কার্যক্রম তারা শুরু করবেন।
দেশের বৃহত্তম আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট বেনাপোল। প্রতিদিন এ পথে ভারত যাওয়া-আসা করে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা। এছাড়া এদেশের সিংহভাগ মানুষ ভারতে চিকিৎসা, আত্মীয় বাড়ি বেড়ানো, ব্যবসায়িক কাজ ও ভ্রমণের জন্য ভারত যাতায়াত করে থাকেন। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে শর্তসাপেক্ষে শুধু বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে যাত্রীদের ভারত প্রবেশের সুযোগ রয়েছে। প্রতিদিন এক হাজার থেকে ১৫শ‘ যাত্রী দুই দেশের মধ্যে যাতায়াত করছেন। এসব যাত্রীদের ৯৫ শতাংশ মেডিকেল ভিসার যাত্রী। অন্যান্য পাঁচ শতাংশ যাত্রীরা যাচ্ছেন বিজনেস ও কূটনৈতিক ভিসায়। টুরিস্ট ভিসা গত বছরের ১৩ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে।
বেনাপোল চেকপোস্টে যশোর থেকে চিকিৎসার জন্য ভারতগামী যাত্রী মাসুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমি খুবই অসুস্থ। এমনিতে হুইল চেয়ারে বসে যেতে হচ্ছে। তারপর চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে যদি হোটেলে ১৪ দিন থাকতে হয় তাহলে তো মহাসমস্যায় পড়তে হবে। একদিকে আর্থিক সমস্যা অন্যদিকে পরিবারের প্রয়োজনীয় সেবা থেকেও বঞ্চিত হতে হবে।’
ভারতফেরত যাত্রী জাহাঙ্গীর আলম জানান, চিকিৎসা করাতে তিনি ভারতে গিয়েছিলেন। যাওয়ার সময় করোনা পরীক্ষা করাতে ১৫শ’ টাকা লেগেছে। আবার ফেরার সময় ভারতীয় ১৫শ’ রুপি লাগছে করোনা রিপোর্টে। নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে তিনিও চান কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা। তবে ফেরার পথে বাসভাড়া ছাড়া আরা টাকা থাকে না। কীভাবে ১৪ দিন ব্যক্তিগত খরচে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন প্রশ্ন তার। সরকারিভাবে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন সেবার দাবি জানান তিনি।