বিল্লাল হোসেন,যশোর প্রতিনিধি :
যশোরে ৪৮ ঘন্টায় নতুন করে আরও ৪৬ জনের কোভিড-১৯ নভেল করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে ২৫ জনের এন্টিজেন পরীক্ষায় ৫ জন ও জেনোম সেন্টারে ৩১৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৪১ জনের ফলাফল পজেটিভ আসে। এই নিয়ে মঙ্গলবার পর্যন্ত জেলায় ৫ হাজার ৮৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত হলেন। এই সময়ে জেলায় করোনার টিকা নিয়েছেন আরও ২ হাজার ১০ জন। এদিকে, টিকা নিয়েও ফের করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) যশোরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. মাহমুদুল হাসান পান্নু। তিনি হোমআইসোলেশনে আছেন। তার আগে আক্রান্ত হয়েছিলেন যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আরিফ আহমেদ। টিকা গ্রহণের ৩৬ দিন পর তিনি আক্রান্ত হন।
সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য কর্মকর্তা ডা. রেহেনেওয়াজ জানান, গত ৪৮ ঘন্টায় যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে করোনা সন্দিগ্ধ ২৫ জনের এন্টিজেন পরীক্ষা করা হয়। ফলাফলে ৫ জন নারী পুরুষের শরীরে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। একই সময়ে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জেনোম সেন্টার থেকে ৩১৮ জনের নমুনা পরীক্ষার ফলাফল আসে। তাতে ৪১ জনের পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে সোমবার ১৭৮ নমুনায় ২৩ জন ও মঙ্গলবার ১৪০ নমুনায় ১৮ জনের করোনা পজেটিভ ছিলো। তিনি আরো জানান, মঙ্গলবার সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় টিকা কেন্দ্রগুলো বন্ধ ছিলো। এরআগে সোমবার জেলায় টিকা নিয়েছেন ২ হাজার ১০ জন। এরমধ্যে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল কেন্দ্রে ৩৯৬ জন , মেডিকেল কলেজ কেন্দ্রে ১০ জন, ,বিমান বাহিনী কেন্দ্রে ১৮৬ জন, যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) কেন্দ্রে ৫০ জন, পুলিশ হাসপাতালের কেন্দ্র থেকে মোট ১০ জন, শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩ টি কেন্দ্রে থেকে ১৫৮ জন, ঝিকরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩ টি কেন্দ্র থেকে ২২০ জন, চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩ টি থেকে ৫২০ জন, মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩ টি কেন্দ্র থেকে ১৭৩ জন, কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩ টি কেন্দ্র থেকে ১১৮ জন, বাঘারপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩ টি কেন্দ্র থেকে ১০০ জন ও অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩ টি কেন্দ্র ৭৯ জন জন টিকা গ্রহণ করেন। মোট টিকা গ্রহণকারীদের মধ্যে পুরুষ ৭৩ হাজার ৬শ’ জন ৮৭ ও মহিলা রয়েছেন ৪১ হাজার ৫শ’ ৪৫ জন। এক প্রশ্নে তথ্য কর্মকর্তা ডা. রেহেনেওয়াজ জানান, সার্জারী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বিএমএ যশোরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. মাহমুদুল হাসান পান্নু আগেও একবার করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। তিনি সুস্থ হয়ে কর্মস্থলে ফিরেছিলেন। সোমবারের (২৯ মার্চ) ফলাফলে তিনি ফের করোনায় আক্রান্ত হলেন। ডা. পান্নু টিকা গ্রহণ করেছিলেন। মুঠোফোন কথা হলে ডা. মাহমুদুল হাসান পান্নু জানান, তিনি যশোরে হোমআইসোলেশনে রয়েছেন। শারীরিকভাবে প্রচন্ড দুর্বল। শরীরে প্রচন্ড ব্যথা। তিনি জানান, নিজের কর্মস্থল বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম দিকে করোনার টিকা গ্রহণ করেছিলেন। যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানান, ৩০ মার্চ পর্যন্ত জেলায় ২৯ হাজার ৮শ’ ৪১জনের নমুনা পরীক্ষার ফলাফল পেয়েছি। তাতে ৫ হাজার ৮৮ জনের করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে। আর মারা গেছেন ৬১ জন। সিভিল সার্জন ডা. টিকা গ্রহণের পর স্বাস্থ্যবিধি না মানলে করোনা হওয়ার আশঙ্কা শতভাগ। প্রথম ডোজ টিকা নেয়ার পর মানুষ করোনা থেকে ৫০ ভাগ সুরক্ষা থাকবে। আর ২য় ডোজ গ্রহণের ৩ সপ্তাহ পর ৭০ ভাগ সুরক্ষার পাশাপাশি শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। ফলে এরপর করোনা হলেও মানুষকে খুব বেশি কাবু করতে পারবেনা। প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে যেতে হবেনা। হোমআইসোলেশনে করোনার মোকাবেলা করতে পারবেন। টিকা গ্রহণকারীসহ সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহবান সিভিল সার্জনের। অন্যথায় যশোরে করোনা পরিস্থিতি আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।