ঢাকাই চলচ্চিত্রে নবাব সিরাজুদ্দৌলার নাম মনে এলেই সিনেমাপ্রেমী মানুষের মানসপটে প্রয়াত আনোয়ার হোসেনের মুখ ভেসে ওঠে কিন্তু তার সাথেই আরেকজন শক্তিমান অভিনেতা প্রবীর মিত্রের কথাও পরম শ্রদ্ধায় সবাই স্মরন করেন। প্রবীর মিত্র রঙ্গিন নবাব সিরাজুদ্দৌলার নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, যখন রঙ্গিন নবাব সিরাজুদ্দৌলার শুটিং শুরু হয় তখন আনোয়ার হোসেনের কাছে দোয়া চাইতে গেলে তিনি প্রানভরে দোয়া করেছিলেন।
ষাটের দশক থেকে তিনি অভিনয় করছেন। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে প্রবীর মিত্র ‘নায়ক’ হিসেবে কয়েকটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। এরপর ‘চরিত্রাভিনেতা’ হিসেবে কাজ করেও তিনি পেয়েছেন আকাশ ছোঁয়া দর্শকপ্রিয়তা।
তৎকালীন তিতাস একটি নদীর নাম, তীর ভাঙা ঢেউ, অভাগী বড় ভালো লোক ছিল, জন্ম থেকে জ্বলছি, নবাব সিরাজউদ্দৌলা থেকে শুরু করে আজকের আকাশ ছোঁয়া ভালবাসা, ভালোবাসলেই ঘর বাঁধা যায়না, দেবদাস, বলো না তুমি আমার, দেহরক্ষী, সুইটহার্ট, সর্বশেষ প্রেমী ও প্রেমীসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের অভিনেতা প্রবীর মিত্র।
তবে গেল কয়েক বছর ধরে গুণী এই অভিনেতাকে দেখা যাচ্ছে না কোথাও। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রবীর মিত্র ভালো নেই। সিনেমায় কাজ করেন না, রয়েছেন আড়ালে। শারীরিক অসুস্থতা ও একাকীত্ব সঙ্গে নিয়ে রাজধানীর সেগুনবাগিচার বাসায় চার দেয়ালের মাঝে দিন কাটছে ৭৯ বছর বয়সী এই অভিনেতার। যেই প্রবীর মিত্র দর্শকদের আনন্দে ভাসিয়েছেন, কাঁদিয়েছেন, হাসিয়েছেন সেই প্রবীর মিত্রের দিন পার হচ্ছে কষ্টেই। ঠিকঠাক হাঁটাচলাও করতে পারেন না। এখন লাঠিই ভরসা প্রবীর মিত্রের। প্রবীর মিত্রের বর্তমান শারীরিক অবস্থার খবরাখবর নিতে যোগাযোগ করা হলে পুত্রবধূ সোনিয়া ইয়াসমিন প্রতিঘন্টা ডটকমকে জানান,‘এখন এই অভিনেতা হাঁটুর ব্যথা ও কানের সম্যস্যায় ভুগছেন। এছাড়া বার্ধক্যজনিত নানা শারীরিক জটিলতা তো রয়েছই। সোনিয়া ইয়াসমিন আরও বলেন, হাঁটুতে প্রচণ্ড ব্যথা থাকায় বাবা খুব একটা হাঁটাচলা করেন না। কারণ লাঠি ছাড়া হাঁটতে কষ্ট হয়।
অভিনয়ের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ১৯৮২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত মোহাম্মদ মহিউদ্দিন পরিচালিত ‘বড় ভালো লোক ছিলো’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ে জন্য পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান প্রবীর মিত্র।
এরপর দীর্ঘদিনের আক্ষেপ ঘুচিয়ে ২০১৮ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে তাকে।
১৯৪০ সালে চাঁদপুরে জন্ম নেওয়া প্রবীর মিত্রের শৈশব কেটেছে পুরান ঢাকায়। পড়াশোনা করেন সেন্ট গ্রেগরি হাইস্কুল ও জগন্নাথ কলেজে (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়)।
উল্লেখ্য,সবশেষ এসডি রুবেলের পরিচালনায় ‘বৃদ্ধাশ্রম’ নামে একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি; তবে ছবিটি এখনও মুক্তি পায়নি।