নির্যাতনের স্বীকার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত চিত্রনায়িকা তমা মির্জা। অমানবিক নির্যাতনের স্বীকার হয়ে তিনি স্বামী হিশাম চিশতির বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং যৌতুক জন্য মারপিটসহ হুমকি প্রদানের অপরাধে মামলা করেছেন। গত ৫ ডিসেম্বর রাজধানীর বাড্ডা থানায় তার বিরুদ্ধে যৌতুক ও হত্যাচেষ্টার মামলা করেন তিনি। রাজধানীর পূর্ব কাফরুলে তার স্বামীর বাসার স্থায়ী ঠিকানা (১৮০/এ) উল্লেখ করে মামলাটিতে স্বামী হিশাম চিশতিকে একমাত্র আসামি করা হয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন আইন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলার এজাহারে, যৌতুকের জন্য মারপিট করে জখম, ইলেকট্রনিক মাধ্যম ব্যবহার করে বেআইনি প্রবেশ, ছদ্মবেশ ধারণ করে ব্যক্তি ক্ষতিসাধনসহ ফেসবুক ও ম্যাসেঞ্জারে সম্মান হানিকর মন্তব্য পুশ করে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন, বিরক্ত, অপমান, মারপিট ও হুমকি প্রদানের কথা উল্লেখ করা হয়।
মামলা প্রসঙ্গে তমা মির্জা তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘নিজের ও পরিবারের সম্মানের কথা ভেবে এতোদিন চুপ ছিলাম। কিন্তু এখন দেখছি তা সহ্যের সীমানা ছাড়িয়ে গেছে। একজন মেয়ে হিসেবে অনেক কিছু সহ্য করেছি। বিয়ের কয়েকদিন না পেরুতেই আমার সঙ্গে নানা অন্যায় শুরু করে হিশাম। বারবার অর্থের দাবি করাসহ আমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। শুধু সংসারটা টিকিয়ে রাখতে চেয়েছিলাম। তবে দিনের পর দিন এভাবে অত্যাচারে আমি অতিষ্ঠ। আমার ধৈর্যের বাঁধ পেরিয়ে গেছে। বাধ্য হয়েই এই মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অনেকে হয়তো বলবেন হিশাম একজন ব্যবসায়ী সে কেন যৌতকের জন্য চাপ দিবেন আসলে কিছু মানুষের মন মানসিকতা এতটাই নিচু মনের যা কল্পনাও করা যায় না। ভালোবেসে সংসার করার জন্য বিয়ে করেছিলাম। কিন্তু একজন ভুল মানুষকে জীবন সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছি।’ গত বছর মে মাসে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার ব্যবসায়ী হিশাম চিশতির সঙ্গে বিয়ে হয় তমা মির্জার। বিয়ের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় এই দম্পতির বিভিন্ন সময়ের ছবি ও স্ট্যাটাস দেখে অনেকেই ভেবেছিলেন সুখেই সংসার করছেন তারা। কিন্তু ভেতরের অন্ধকার এই প্রথমবার সামনে এলো। সূত্র মতে, তমা মির্জার মামলার কথা জানার পর পরই কানাডায় পাড়ি জমিয়েছেন হিশাম।
প্রসঙ্গত, চিত্রনায়িকা তমা মির্জার মামলার পর দিনই (গত ৬ ডিসেম্বর) মধ্যরাতে রাজধানীর বাড্ডা থানায় তার বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার মামলা করেছেন তারই স্বামী হিশাম চিশতি। মামলাটিতে তমা মির্জাকে এক নম্বর আসামি করা হয়। এছাড়া তার বাবা-মা, ভাই এবং অজ্ঞাতপরিচয় একজনকেও আসামি করা হয়েছে বলে জানা যায়। তবে হিশামের অভিযোগ ভিত্তিহীন জানিয়ে তমা বলেন, যেখানে আমার পরিবারের উপর হামলা করেছে সেখানে কিভাবে এমন অভিযোগ করে? মায়ের গায়ে হাত পর্যন্ত তোলেন হিশাম। একটা পর্যায়ে নিজেদের রক্ষা করতে উপায় না পেয়ে ৯৯৯ এ কল করি। পরে পুলিশ এসে বিষয়টি নিয়ন্ত্রনে এনেছেন। তারা ঘটনা স্থালে এসে পুরো বিষয়টি অবগত হয়েছেন। তাদের এমন অভিযোগ হাস্যকর। পুলিশ দায়িত্ব নিয়ে উভয় পক্ষকে নিয়ে বসে পারিবারিক ভাবে সমাধান করার কথা ছিল কিন্তু তার আগেই হিশাম পালিয়ে গেছেন।
২০০৯ সালে শাহীন সুমন পরিচালিত ‘মনে বড় কষ্ট’ সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় তমা মির্জার। এরপর অনন্ত হীরার ‘ও আমার দেশের মাটি’, শাহাদাত হোসেন লিটনের ‘তোমার কাছে ঋণী’ নামের চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি। ২০১৫ সালে শাহনেওয়াজ কাকলী পরিচালিত ‘নদীজন’ সিনেমায় শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। তমা অভিনীত সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ‘চল পালাই’ ও পূর্ণ মিউজিক্যাল ফিল্ম ‘গহীনের গান’। এরপর চলচ্চিত্রে না দেখা গেলেও দেশ টিভির ‘প্রিয়তমা’র প্রিয় মুখ’ নিয়মিত উপস্থাপন করছেন।