1. boyd94289@gmail.com : Ayon Islam : Ayon Islam
  2. tanvirinternational2727@gmail.com : NewsDesk :
  3. hrbangladeshbulletin@gmail.com : News Room : News Room
  4. 25.sanowar@gmail.com : Sanowar Hossain : Sanowar Hossain
  5. bangladeshbulleting646@gmail.com : Sohel Desk : Sohel Desk
শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:২১ পূর্বাহ্ন

রাজধানীতে করোনার মহাবিপদ সংকেত

  • সময় : শুক্রবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২০
  • ২৪৮

রাজধানীতে করোনার প্রথম ঢেউয়ে বায়ুদূষণ কিছুটা কম থাকলেও, দ্বিতীয় ঢেউয়ের শুরুতেই চরম বায়ুদূষণ নগরবাসীর জন্য এক দুশ্চিন্তার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। শীতের হাওয়া লাগতে শুরু করেছে রাজধানী ঢাকায়। সময়টা স্বস্তির হবার কথা থাকলেও, তা হচ্ছে না। কেননা শীত একা আসছে না, সাথে আছে প্রচুর ধুলোবালি। করোনার কারণে লকডাউনের সময় এপ্রিল-মে মাসে দূষণ কমেছিল ৬৬ শতাংশ। কিন্তু বায়ুর মান আবারও খারাপ হতে শুরু করেছে।


শীতকাল আসতে না আসতেই বায়ুদূষণে প্রায় দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় পৌঁছেছে রাজধানী ঢাকা। দূষণকবলিত অন্যান্য দেশের তুলনায় এই মাত্রা প্রায় দ্বিগুণ। গত ২১ নভেম্বর, ২০২০ ইং বায়ুদূষণে ঢাকা বিশ্বে আবারও এক নম্বরে উঠে আসার পর প্রতিদিন ওঠানামা করছে। এতদিন পর্যন্ত ভারতের রাজধানী দিল্লি ছিল বায়ুদূষণে শীর্ষে। সেই দিল্লির চেয়ে দ্বিগুণের বেশি দূষিত এখন ঢাকা।

জনবহুল ঢাকা দীর্ঘদিন ধরেই দূষিত বাতাস নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। মূলত নির্মাণ কাজের নিয়ন্ত্রণহীন ধুলা, যানবাহনের ধোয়া, ইটভাটা প্রভৃতি কারণে রাজধানীতে দূষণের মাত্রা ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পর্যবেক্ষণ এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের (একিউআই) তথ্যে এই বছরের নভেম্বর মাসে অন্তত ১০ দিন ঢাকার দূষণের মাত্রা ছিল ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ এবং শহরের সবাই মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বের বায়ুমান যাচাইবিষয়ক প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান ‘এয়ার ভিজ্যুয়াল’-এর বায়ুমান সূচক (একিউআই) অনুযায়ী ২৩ নভেম্বর দিল্লির বায়ুদূষণের মানমাত্রা ছিল ১১২, মুম্বাইয়ের ১৬৯ এবং তৃতীয় অবস্থানে থাকা কলকাতার মানমাত্রা ছিল ১৮৬। আর ঢাকার বায়ুমান ছিল ৩১৫, যা দুর্যোগপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

বায়ু বিশেষজ্ঞদের মতে, বায়ুদূষণের মাত্রা ২০০ ছাড়ালে তাকে মারাত্মক অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। শীতের শুষ্ক মৌসুমের কারণে আগামী তিন মাস এ ধরনের পরিস্থিতি বিরাজ করবে। বায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার যদি এখনই বায়ুদূষণ রোধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে আগামী দিনগুলোতে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে।

রাজধানীতে বায়ুদূষণ হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে করোনার প্রভাব কাটিয়ে যানবাহনের চলাচল বেড়েছে, বাংলাদেশের আশপাশের অঞ্চল থেকে দূষিত বাতাস আসছে ঢাকার দিকে। সাধারণত শীতকালে উত্তরের বাতাস আসা শুরু হয়। তার সঙ্গে আসছে দূষিত কণাও। ঢাকায় খোঁড়াখুঁড়ির পরিমাণ বেড়েছে। নির্মাণকাজের কারণে ধূলিকণা বাড়ছে এবং চলতি মাসে ইটভাটাগুলো চালু হওয়ার কারণেই মূলত এই দূষণ আরো বেড়ে গেছে।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) তথ্য অনুসারে, রাজধানীর বায়ুদূষণের ৫০ শতাংশ হয় ইটভাটা থেকে, ৩০ শতাংশ হয় রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও সিটি করপোরেশনের বর্জ্য থেকে। ১০ শতাংশ দূষণ হয় গাড়ির জ্বালানি থেকে। শিল্পকারখানার বর্জ্য থেকে ১০ শতাংশ। এই দূষণ কমাতে জরুরি ভিত্তিতে খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধের পাশাপাশি রাস্তাগুলোতে প্রতিদিন পানি দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রবলতা ও দূষিত বায়ুর সংস্পর্শে বেশি সময় থাকার মধ্যে সম্পর্ক থাকায় রাজধানী ঢাকার বাসিন্দাদের জন্য এক গুরুতর উদ্বেগের বিষয় বাতাসের খারাপ মান। নেদারল্যান্ডসের এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে দূষণের সংস্পর্শে আসার মাত্রায় সামান্য বৃদ্ধি, মৃত্যুহার ২১% পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দেখেছেন যে প্রতি ঘন মিটার বায়ুতে বিপজ্জনক সূক্ষ্মধুলা ও বস্তুকণা পিএম২.৫ যদি মাত্র এক মাইক্রোগ্রাম বৃদ্ধি পায় তাহলে সেটি কোভিড-১৯-এ মৃত্যুর হার ৮% বাড়িয়ে দেয়। নেদারল্যান্ডসের আরেকটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে দূষণের সংস্পর্শে আসার মাত্রায় সামান্য বৃদ্ধি, মৃত্যুর হার ২১% পর্যন্ত বৃদ্ধি করে। সম্প্রতি সায়েন্স অব দ্য টোটাল এনভায়রনমেন্ট সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণাতেও দেখানো হয়েছে বায়ুদূষণের সংস্পর্শে দীর্ঘ মেয়াদে অবস্থান করা, করোনাভাইরাসে প্রাণহানির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ হতে পারে।

রাজধানীতে শীতে চরম আকারে বায়ুদূষণ ঠেকাতে সরকারি-বেসরকারি অবকাঠামো, বিভিন্ন কাজ এবং ইউটিলিটি সার্ভিসের কাজের জন্য সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় করা প্রয়োজন। পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন স্থানে ভবন নির্মাণের সময় পানি ছিটানো, যন্ত্রপাতি যত্রতত্র ফেলে না রাখা ও নির্মাণের ক্ষেত্র নির্ধারিত বেষ্টনীর মধ্যে আবদ্ধ রাখা কঠোরভাবে নিশ্চিত করতে হবে।

ইটভাটা থেকে সৃষ্ট দূষণ বন্ধে মালিকদের জ্বালানিসাশ্রয়ী আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে বাধ্য করা, শুস্ক মৌসুমে ধুলার দূষণ প্রতিরোধে সিটি করপোরেশনকে সঠিকভাব রাস্তা পরিস্কার এবং ধুলা ছড়িয়ে পড়া বন্ধে নিয়মিত রাস্তায় পানি ছিটানো, যত্রতত্র সিটি করপোরেশনের, শিল্পকারখানর বায়ুদূষণ কমাতে ইটিপি ব্যবহারে বাধ্য করা, যানবাহন ও নৌযান থেকে দূষণ বন্ধ ইত্যাদি কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা গেলে বায়ুদূষণের মাত্রা কমতে পারে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও দূষণের বড় একটি কারণ।

এটা নিয়ে অনেক কাজ হলেও আজ পর্যন্ত আমরা তা ঠিক করতে পারিনি। এখনও যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয়। এই অবস্থার উত্তরণ ঘটাতে হবে। অর্থাৎ, রাজধানীতে অতিদ্রুত যেকোনো মূল্যে বায়ুদূষণ কমিয়ে নগরবাসীর জন্য দূষণমুক্ত বাতাস নিশ্চিত করে বাসযোগ্য নগরী গড়ে তুলতে হবে।

রাজধানীতে শীতে উচ্চ মাত্রার বায়ু দূষণ নতুন করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়িয়ে তোলার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে। তাই বায়ু দূষণ দূর করার জন্য অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।

পাশাপাশি বায়ুদূষণ রোধে সরকারি আইনের কঠোর প্রয়োগ ছাড়াও জনগণকে হতে হবে পরিবেশ সচেতন। শুধুমাত্র নিজের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য নয়। বরং আগামী প্রজন্মকে সুস্থভাবে বাঁচাতে, বাতাসকে দূষণমুক্ত রাখতে দরকার পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখার অঙ্গীকার।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের অন্যান্য খবর
©বাংলাদেশবুলেটিন২৪