করোনায় আক্রান্ত হয়ে বৃহস্পতিবার যশোরে আরো ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। তার নাম ইয়াকুব আলী। তিনি শার্শা উপজেলার গোগা ইউনিয়নের হরিচন্দ্রপুর গ্রামের নওশের আলীর ছেলে। হোমআইসোলেশনে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এরআগে গত সপ্তাহে অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়ার শিল্পপতি ও মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেনের (৭৩)মৃত্যু হয়েছিলো।এছাড়া যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও তার কন্যাসহ জেলায় নতুন করে ১৭ জনের কোভিড-১৯ নভেল করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১০ জন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (খুমেক) ল্যাবে ৭ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের জীবাণু পায়। সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানান, বৃহস্পতিবার সকালে যবিপ্রবির ফলাফল ও বুধবার রাতে খুমেক ল্যাবের ফলাফল তিনি হাতে পেয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে যশোর সদর উপজেলার ৪ জন, শার্শা উপজেলার ৩ জন, ঝিকরগাছা উপজেলার ১ জন, মণিরামপুর উপজেলার ২ জন, কেশবপুর উপজেলার ৩ জন ও অভয়নগর উপজেলার ৪ জন রয়েছেন। তাদের বাড়ি লকডাউন করেছে প্রশাসন।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, যবিপ্রবিতে যশোরের ৯২ নমুনা পরীক্ষায় ১০ জন ও খুমেকে ৪৫ নমুনা পরীক্ষায় ৭ জন শনাক্ত হয়েছেন বলে ফলাফলে উল্লেখ করেছেন।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নতুন আক্রান্ত ১৭ জন হলেন কেশবপুর উপজেলার বাসিন্দা যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায় (৫৮), তার কন্যা দেবযানি রায় (১৬), রামপ্রসাদ সানি (৪৮), সদর উপজেলার ঝুমঝুমপুর এলাকার বাসিন্দা যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স শারমিন আক্তার (৩৮), শহরের বেজপাড়া তালতলা এলাকার শামীন আহমেদ (৩৫), কাশিমপুর ইউনিয়নের এনায়েতপুর গ্রামের বশির আলী (৫৬) ও হামিদপুর নালিয়া গ্রামের খোরশেদ আলম (৫৫), শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জামে মসজিদের ইমাম আব্দুল্লাহর স্ত্রী মাজেদা বেগম (৫০), উপজেলার নাভারন রেলবাজারের আজগর আলী (৬০), দক্ষিণ বুরুজবাগানের রেহেনা নাসরিন (৫০), মণিরামপুর উপজেলার (পল্লী বিদ্যুৎ)রাজগঞ্জ উপকেন্দ্রের এজিএম রফিকুল ইসলাম ( ৩৮) ও এনজিও কর্মী জিয়ানুর রহমাপন (৩৫), অভয়নগর উপজেলার ফেরদৌসি বেগম (৪১), শাহিন হোসেন ( ৩৮), মিজানুর রহমান (৫৫), আনারুল ইসলাম (৫২) ও ঝিকরগাছা উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামের মোখলেছুর রহমান (৪৮)। সূত্র জানায়, যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের স্ত্রী যশোর মেডিকেল কলেজের সহকারি অধ্যাপক ডা. অঞ্জলী রায়ের করোন শনাক্ত হয় ১০ জুন। এরপরের দিন তত্ত্বাবধায়ক ও তার কন্যা শনাক্ত হলেন।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আরিফ আহমেদ জানান, তত্ত্বাবধায়ক স্বপরিবারে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তারা হোমআইসোলেশনে রয়েছেন। শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইউসুফ আলী জানান, গত ৪ জুন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স জামে মসজিদের ইমাম আব্দুল্লাহ (৫৫) করোনায় শনাক্ত হয়েছিলেন। ৭ দিনের মাথায় শনাক্ত হলেন তার স্ত্রী মাজেদা ।যশোর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. আদনান ইমতিয়াজ জানান, গত ৮ জুন খোরশেদ আলমের ছেলে সাদ্দাম হোসেনের করোনা শনাক্ত হয়েছিলো।
১ জুন সাদ্দাম ঢাকা থেকে নিজ বাড়িতে ফেরেন। ছেলের সংস্পর্শে পিতা আক্রান্ত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) এনএফটি বিভাগের চেয়ারম্যান ও পরীক্ষণ দলের সদস্য ড. শিরিন নিগার জানান, জিনোম সেন্টারে যশোর জেলার ৯২ নমুনা পরীক্ষা করে যশোর জেলায় ১০ জন ছাড়াও নড়াইল জেলার ১২ নমুনা পরীক্ষা করে ২ জন, মাগুরা জেলার ৩৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১জন পজেটিভ পাওয়া যায়। এছাড়া সাতক্ষীরা জেলার ৫ নমুনা ও বাগেরহাট জেলার ৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করলে সবগুলো নেগেটিভ শনাক্ত হয়।
অর্থাৎ ৫ জেলার ১৫১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ জন পজেটিভ ও ১৩৮ জন নেগেটিভ হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারের স্বাস্থ্যবিধি মেনে ইয়াকুব আলীর দাফনকার্য সম্পন্ন হয়েছে। গোগা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ জানান, গত সপ্তাহে হৃদরোগে আক্রান্ত হলে স্বজনরা চিকিৎসার জন্য ইয়াকুব আলীকে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে নমুনা পরীক্ষায় তার করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়। এর পর থেকে থেকে বাড়িতে আনা হয় ইয়াকুব আলীকে। হোমআইসোলেশনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানান, ১৭ জনের মধ্যে ১ জনের নমুনা খুলনার ফুলতলা থেকে সংগ্রহ করা ছিলো। যে কারণে তাকে খুলনার রোগী হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত যশোর জেলায় মোট ১শ ৭১ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। সুস্থ হয়েছেন ৯৯ জন। এছাড়া মারা গেছেন ২জন।