আগস্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে হঠাৎ অসম্ভব শ্বাসকষ্ট শুরু হয় হিন্দি সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেতা সঞ্জয় দত্তের ৷ দ্রুত তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ৷ করোনাকালে এই শ্বাসকষ্ট হওয়ায়, সবাই ধরে নিয়েছিলেন সঞ্জয় নিশ্চয় “কোভিট-১৯”-এর শিকার ৷ কিন্তু, নানাভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরেও তাঁর করোনা রিপোর্ট আসে “নেগেটিভ” ৷
তখন চিকিৎসকরা আবিষ্কার করেন করোনা নয়, সঞ্জয় দত্ত ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত৷ এবং সেটা “থার্ড স্টেজ” ৷ প্রথমে ওষুধপত্র দিয়ে কয়েকদিনের জন্য তাঁকে বাড়িতে বিশ্রাম নিতে বলা হয়৷
ঠিক এই সময়ে ভারতের বিভিন্ন মিডিয়া খবর করে, ভারতে সঞ্জয় দত্তের চিকিৎসা হবে না ৷ দুই সপ্তাহের মধ্যেই তিনি উড়ে যাবেন আমেরিকায় ৷ তাঁরা এমন ভবিষ্যতবাণীও দেন যে, চিকিৎসা হবে সেই হাসপাতালে, যেখানে সঞ্জয়ের মা, অতীতের লাবণ্যময়ী নায়িকা নার্গিস-এর ক্যান্সার নিরাময়ের চেষ্টা করা হয়েছিল৷
শুধু তাই নয়, নার্গিসের মৃত্যুর পরে দত্ত পরিবার সেখানে একটি “ক্যান্সার ফাউন্ডেশন”-ও গড়ে তোলেন৷ এখন যার দেখাশোনা করেন সঞ্জয়ের বোন প্রিয়া দত্ত ৷ তারাই যাবতীয় দায়িত্ব নেবে ৷
কিন্তু, সব জল্পনা-কল্পনাকে ভুল প্রমাণ করে, দুই সপ্তাহ পরে সঞ্জয় দত্তের চিকিৎসা শুরু হয় মুম্বাইতে ৷ কোকিলাবেন হাসপাতালে ৷ প্রিয়া দত্তও জানিয়ে দেন, তাঁদের ক্যান্সার ফাউন্ডেশন পাশে থাকলেও, এখন চিকিৎসা হবে ভারতেই ৷ কারণ প্রথমত, ভারতে এখন ক্যান্সারের চিকিৎসা যথেষ্ট উন্নত৷
আর্ন্তজাতিক মানের৷ দ্বিতীয়ত, বিদেশের সব বিমান বন্ধ৷ তৃতীয়ত, গেলেও সেখানে ১৪দিন গৃহবন্দী হয়ে থাকতে হবে৷
চিকিৎসার শুরুতে মুম্বাই-এর বিশিষ্ট অঙ্কোলজিস্ট-দের নিয়ে একটা বোর্ড গঠিত হয়৷ তাঁদের পরিকল্পনা অনুসারে সঞ্জয়কে প্রথম পর্য্যায়ে ৪টি “কেমো” দেওয়া হয়েছে৷ কোকিলাবেন হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সঞ্জয় খুব ভালভাবেই সেগুলি নিয়েছেন ৷ কোনও সমস্যা হয়নি ৷
পরবর্তী কেমোথেরাপি শুরু হবে তিন সপ্তাহ পরে৷
এ’ব্যাপারে কলকাতার বিশিষ্ট ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা: রাকেশ রায় জানালেন, সাধারণত ক্যান্সার তখনই নির্মূল করা সম্ভব, যদি তা আগে ধরা পড়ে৷ তবে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঠিক চিকিৎসা হলে, রোগীর জীবনকাল বাড়িয়ে দেওয়া সম্ভব ৷ ডা: রাকেশ রায় বললেন, “যেমন ধরুন, পরীক্ষা করে যদি দেখা যায়, রোগীর আয়ূ ৩/৪ মাসের বেশি নয় ৷ সেটা আমরা ৩/৪ বছর টেনে দিতে পারি”৷
ফুসফুসের ক্যান্সার সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, “আগে একটা সময় ছিল যখন এই রোগীদের কেমোথেরাপি দেওয়া ছাড়া আর কিছু করার থাকত না৷ কিন্তু এখন নানা ধরণের ট্যাবলেট বেরিয়ে গেছে ৷ কেমো-র পাশাপাশি আমরা সেগুলোও প্রয়োগ করে থাকি ৷ তাই আর বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না ৷” তবে, থার্ড স্টেজ রোগীদের সম্বন্ধে ডা: রায়ের বক্তব্য, এক্ষেত্রে যদি রোগীর শরীরে এমন “জিন বা মিউটেশন” পাওয়া যায়, যা রোগটাকে প্রতিরোধ করতে পারবে, তাহলে খুব ভাল হয় ৷ তবে, সেক্ষেত্রে অন্তত শতকরা ৪০ ভাগ “জিন” পেতে হবে ৷
তিনি বলেন, “এখন বিজ্ঞান অনেক উন্নত ৷ সেটাই মূল ভরসা ৷ যদিও এক্ষেত্রে সঞ্জয় দত্তের শারীরিক ও মানসিক জোরটাও অত্যন্ত প্রয়োজন ৷ কারণ, তিনি “থার্ড স্টেজ”-এ রয়েছেন ৷