“বাবা বলে ছেলে নাম করবে” গানের এই কথাই সত্যি হয়েছিল। খুবই অল্প সময়ের ক্যারিয়ারে ছেলে আকাশ ছোঁয়া জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। মানুষের মনের গভীরে ঠাই করে নিয়েছেন। না ফেরার দেশে চলে গেছেন ২৪ বছর কিন্তু আজও সমান জনপ্রিয়। এরকমটা খুব কম দেখা যায়। নব্বই দশকের তিনি খুবই জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহ।
১৯৯৬ সালের আজকের দিনে (৬ সেপ্টেম্বর) ক্ষণজন্মা চিত্রনায়ক সালমান শাহ সবাইকে কাঁদিয়ে চলে যান না ফেয়ার দেশে। রোববার (৬ সেপ্টেম্বর) তার ২৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। সালমান শাহ। বাংলা ছবির ক্ষণজন্মা এক নায়ক। অভিনয় জগতে এসে পেয়েছেন খ্যাতি, সুনাম আর অগনিত ভক্তের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা। যা বাংলা সিনেমায় আজও ইতিহাস।
নিজের অভিনয় দক্ষতা, পোশাকে নতুনত্ব আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় হয়েছেন স্বপ্নের নায়ক। পৌঁছেছেন সবার অন্তরে অন্তরে।
মাত্র সাড়ে তিন বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে ইতি ঘটিয়ে ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর চলে যান না ফেরার দেশে। এই অল্প সময়েই তিনি দর্শকদের হৃদয় জয় করে একের পর এক উপহার দিয়েছেন সুপারহিট সিনেমা। অভিনয় করেছেন মোট ২৭টি সিনেমায়।
দেশীয় সিনেমায় ধূমকেতু হয়েই যেন ধরা দিয়েছিলেন সালমান শাহ। ১৯৯৩ সালে সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমার মাধ্যমে ঢালিউডে পা রাখেন তিনি। একই সিনেমায় অভিষেক ঘটে চিত্রনায়িকা মৌসুমীরও।
প্রথম সিনেমাতেই আকাশ ছোঁয়া জনপ্রিয়তা লাভ করেন তিনি। তার চলন-বলন ও পোশাক-পরিচ্ছদ তরুণদের মন জয় করে নেয়। নায়ক সালমান ও ব্যক্তি সালমান দুইটিই জনপ্রিয়তার শীর্ষ স্পর্শ করে।
তার প্রকৃত নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন।সালমান শাহ নামটি ছিল সিনেমার জন্য। ১৯৭০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর তিনি সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা কমর উদ্দিন চৌধুরী ও মা নীলা চৌধুরী।
সালমান শাহ ক্যারিয়ারের শুরুতে কাজ করেছেন ছোট পর্দায়। ‘আকাশ ছোঁয়া’, ‘দোয়েল’, ‘সব পাখি ঘরে ফেরে’, ‘সৈকতে সারস’, ‘নয়ন’ ও ‘স্বপ্নের পৃথিবী’তে নাটকে তাকে অভিনয় করতে দেখা গেছে। এছাড়া প্রচুর বিজ্ঞাপনও করেছেন তিনি।
সালমান শাহ অভিনীত সিনেমাগুলো হলো- ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ (বিপরীতে মৌসুমী), তুমি আমার (শাবনূর), অন্তরে অন্তরে (মৌসুমী), কন্যাদান (লিমা), জীবন সংসার (শাবনূর), চাওয়া থেকে পাওয়া (শাবনূর), সুজন সখী (শাবনূর), বুকের ভেতর আগুন (শাবনূর), এই ঘর এই সংসার (বৃষ্টি), স্নেহ (মৌসুমী), বিচার হবে (শাবনূর), প্রেমযুদ্ধ (লিমা), মহা মিলন (শাবনূর), তোমাকে চাই (শাবনূর), বিক্ষোভ (শাবনূর), আশা ভালোবাসা (শাবনাজ), মায়ের অধিকার (শাবনাজ), আঞ্জুমান (শাবনাজ),
আনন্দ অশ্রু (শাবনূর), প্রেম পিয়াসী (শাবনূর), সত্যের মৃত্যু নেই (শাহনাজ), প্রিয়জন (শিল্পী), শুধু তুমি (শ্যামা), স্বপ্নের পৃথিবী (শাবনূর), স্বপ্নের নায়ক (শাবনূর), দেন মোহর (শাবনূর) ও স্বপ্নের ঠিকানা (শাবনূর)।
‘বুকের ভেতর আগুন’ ছিল সালমান অভিনীত শেষ সিনেমা। তার সঙ্গে জুটি বেঁধে সবচেয়ে বেশি ১৪টি সিনেমায় অভিনয় করেন শাবনূর।
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর নিজ ঘরে সালমান শাহকে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়।
শুরুতে বিষয়টি আত্মহত্যা বলা হয়। কিন্তু তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেন তার মা নীলা চৌধুরী। বিষয়টি নিয়ে মামলা এখনো চলমান।
ভক্তদের মাঝেও এ নিয়ে দ্বিধা দ্বন্দ্ব এখনো কাটেনি। সবার একটিই প্রত্যাশা তার মৃত্যু রহস্যের জট খুলুক।