এক দিকে কোভিড ১৯-এর প্রতিষেধক বাজারে আনতে প্রতিযোগিতা চলছে দেশে-দেশে। অন্য দিকে পাল্লা দিয়ে লকডাউন শিথিলের প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে অনেক জায়গায়। যদিও বর্তমান পরিস্থিতির নিরিখে যে-সব দেশে অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, সেখানে এখনই ‘তালা খোলার’ পর্ব ডেকে আনতে পারে মহাবিপদ,
সোমবার এমনটাই জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র প্রধান টেড্রস অ্যাডানম গ্যাব্রিয়েসাস। পাশাপাশি প্রতিষেধকে অনুমোদন দেওয়ার প্রক্রিয়ায় তাড়াহুড়ো না করারই উপদেশ তাঁদের। সংস্থার প্রধান বৈজ্ঞানিক সৌম্যা স্বামীনাথনের কথায়, ‘‘জরুরি ভিত্তিতে প্রতিষেধক অনুমোদন দেওয়ার তাড়ায় বিষয়টিকে মোটেই হালকা ভাবে নিলে চলবে না। যথেষ্ট গুরুত্ব এবং গভীরতার সঙ্গে বিষয়টি দেখা প্রয়োজন।’’
সোমবার সম্ভাব্য প্রতিষেধকের ‘ফাস্ট ট্র্যাক’ ভিত্তিতে অনুমোদনের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিল আমেরিকা। মার্কিন ‘ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’-এর প্রধান এই প্রসঙ্গে আজ জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট আধিকারিকেরা যদি মনে করেন যে ঝুঁকির তুলনায় লাভের পরিমাণ বেশি, তা হলে প্রতিষেধক অনুমোদন প্রক্রিয়ায় চলতি নিয়মের বদল আনতে তিনি প্রস্তুত। অন্য দিকে, ইতিমধ্যেই দু’মাসেরও কম সময়ে ট্রায়াল চালিয়ে তাদের নিয়ন্ত্রক সংস্থার তরফে অনুমোদন পেয়ে গিয়েছে রুশ টিকা।
তবে সম্পূর্ণ তথ্য এবং পরিসংখ্যান জোগাড়ের আগেই এই টিকায় অনুমোদনের হিড়িক কতটা নিরাপদ তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্বামীনাথন। একই অবস্থানে হু-র ‘এমার্জেন্সি প্রোগ্রাম’-এর প্রধান মাইক রায়ানও। তাঁর কথায়, ‘‘সম্পূর্ণ ট্রায়াল শেষের আগে টিকা বাজারে আনার ক্ষেত্রে পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন।
সমস্যা দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে তা প্রয়োগ বন্ধ করা উচিত।’’রাজনৈতিক টানাপড়েনের আবহে হংকংয়ে মঙ্গলবার গণহারে করোনা-পরীক্ষা শুরু হল। শতাধিক পরীক্ষাকেন্দ্রে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে পরীক্ষা করাতে দেখা যায় বহু মানুষকে।
যদিও আদতে এর মাধ্যমে ‘হংকংবাসীদের ডিএনএ সংগ্রহের ফন্দি আঁটছে চিন’— এমন আশঙ্কা প্রকাশ করতেও শোনা গিয়েছে অনেককে। তবে এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে হংকং প্রশাসন। গুজবে কান না-দিয়ে আরও বেশি সংখ্যক মানুষকে পরীক্ষা করাতে এগিয়ে আসার আর্জি জানিয়েছেন নেত্রী ক্যারি ল্যাম। প্রশাসনের এই উদ্যোগ সম্পর্কে এ ধরনের গুজব ছড়ানোর জন্য ‘নিন্দুকদের’ ভর্ৎসনা করেছেন তিনি।
এ দিকে সরকারি করোনাভাইরাস অ্যাপ লঞ্চ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তা ডাউনলোড করে নিয়েছে ডেনমার্কের ৯ লক্ষ মানুষ! ফিনিস ইনস্টিটিউট অব হেল্থ অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, সংক্রমণের চেন ভাঙার জন্যই ‘করোনাভিলক্কু’ নামে এই অ্যাপটি লঞ্চ করা হয়েছে। কাছাকাছি দাঁড়ানো দু’জনের মোবাইলেই অ্যাপটি থাকলে ব্লু টুথের মাধ্যমে নিজে থেকেই একটি কোড চলে যাবে তাঁদের কাছে।
যার মাধ্যমে বোঝা যাবে তাঁরা কেউ করোনাভাইরাসের সংস্পর্শে এসেছিলেন কি না। নতুন করে সংক্রমণের খবর না-থাকায় মঙ্গলবার থেকে খুলে গেল করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল বলে চিহ্নিত চিনের উহান প্রদেশের স্কুলগুলির দরজা।
দীর্ঘ লকডাউন পর্ব কাটিয়ে এ দিন স্কুলে ফিরেছে কমপক্ষে ১৪ লক্ষ পড়ুয়া। রবিবার এই প্রদেশের শেষ করোনা আক্রান্ত সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। তিনি বাইরে থেকেই আক্রান্ত হন বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। স্কুলের দরজা খুলেছে ব্রিটেন এবং চেক প্রজাতন্ত্রেও। আজ থেকে পঠনপাঠন চালু হয়েছে ব্রিটেনের ৪০% স্কুলে। এর ফলে সংক্রমণের গতি বাড়ছে কি না, সে দিকে তাদের সতর্ক নজর রয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
তবে সংক্রমণ বৃদ্ধির জেরে ফের মাস্ক বাধ্যতামূলক করা হয়েছে প্রাগের সরকারি অফিস, বিমানবন্দর-সহ একাধিক জায়গায়।