যশোরে চিকিৎসক নার্সিং সুপারভাইজার সেবিকা ব্যাংকার ও পুলিশসহ নতুন করে ৬০ জনের কোভিড-১৯ নভেল করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এই নিয়ে শনিবার পর্যন্ত জেলায় করোনায় মোট আক্রান্ত হয়েছেন ২১৫২ জন। বিষয়টি নিশ্চিত করে সিভিল সার্জন অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকর্তা ডা. রেহেনেওয়াজ জানান, করোনা পজেটিভ শনাক্তদের মধ্যে বেজপাড়ার মৃত আসলাম হোসেনের (৬০) নাম রয়েছে। তিনি করোনায় আাক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলে রেকর্ড করা হয়েছে।
ডা. রেহেনেওয়াজ আরো জানিয়েছেন, শনিবার যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জেনোম সেন্টার থেকে পাঠানো ১৮১ জনের নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে ৬৭ জনের করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়। তালিকায় ৭ জন পুরাতন রোগী রয়েছেন। ফলোআপ নমুনা পরীক্ষায় তাদের ফলাফল পজেটিভ। সেই হিসেবে যশোরে নতুন করে ৬০ জন শনাক্ত হয়েছেন। এরমধ্যে যশোর সদর উপজেলায় ৩৪ জন, শার্শা উপজেলায় ২ জন, ঝিকরগাছা উপজেলায় ৭ জন, চৌগাছা উপজেলায় ১ জন মণিরামপুর উপজেলায় ৩ জন, কেশবপুর উপজেলায় ৫ জন ও অভয়নগর উপজেলায় ৮ জন। ডা. রেহেনেওয়াজ আরো জানান, এদিন করোনায় আক্রান্ত সন্দেহে আরও ২০৩ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য যবিপ্রবির জেনোম সেন্টারে পাঠানো হয়েছে। সুস্থ হয়েছেন ৪১ জন।
তিনি জানান, বেজপাড়ার আসলাম হোসেন গত ৪ আগস্ট সন্ধ্যায় যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশ ওয়ার্ডে ভর্তি হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত পৌনে ১২ টার দিকে তিনি মারা যান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠান। পরীক্ষায় তার শরীরে করোনা ছিলো বলে প্রমান মিলেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আরিফ আহমেদ জানান, আসলামের করোনা পজেটিভ ফলাফলের হাতে পাওয়ার পর তার পরিবারকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। আসলাম বেজপাড়ার আবুল কাশেমের ছেলে।
যশোর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. আদনান ইমতিয়াজ জানান, আক্রান্তদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন যশোর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. শাফাত আল দ্বীন (৩৭), উপশহর এলাকার বাসিন্দা যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের নাসিং সুপারভাইজার নার্গিস আক্তার (৫৪), একই হাসপাতালের (কোয়ার্টারে বসবাসরত) জ্যেষ্ঠ সেবিকা রোকসানা (৪৫), ঘোপ বেলতলা এলাকার বাসিন্দা হাসপাতালের আয়া শাহানারা খাতুন (৪৫), যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের স্টাফ (কোয়ার্টারে বসবাস) সঞ্জয় (৩০), কারবালা এলাকার বাসিন্দা সোনালী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার মাহমুদ হাসান (৩৪) একই এলাকার বাসিন্দা ব্যাংক কর্মকর্তা শামসুল আলম
(৬০), চাঁচড়া তেতুলতলা এলাকার বাসিন্দা ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক সাউদুর রহমান (৩৭), এসপি বাংলো এলাকায় বসবাসকারী পুলিশের এসআই সাজুল (৩৯), এএসআই আল মিরাজ খান (৩৩) ও কোয়ার্টারে বসবাসকারী পুলিশ সদস্য ইদ্রিসুর রহমান (৩৬)। আক্রান্তদের মধ্যে বারান্দীপাড়ার আাব্দুল জব্বার (৭৮) ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অন্যরা হোমআইসোলেশনে রয়েছেন। আক্রান্তের বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে।
যবিপ্রবির অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও পরীক্ষণ দলের সদস্য ড. তানভীর ইসলাম জানিয়েছেন, জেনোম সেন্টারে যশোর জেলার ৬৭ জন ছাড়াও মাগুরা জেলার ৪০ নমুনা পরীক্ষায় ১৬ জন ও নড়াইল জেলার ২৯ জনের নমুনা পরীক্ষা ১৭ জনের শরীরে কোভিডের জীবাণু পাওয়া গেছে। সবমিলিয়ে ২৫০ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১০০ জনের করোনা পজিটিভ এবং ১৫০ জনের নেগেটিভ ফলাফল এসেছে।
যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানিয়েছেন, শনিবার পর্যন্ত জেলার ১০২০০ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। ফলাফল এসেছে ৮৮৪৮ জনের। এরমধ্যে করোনা পজেটিভ ২১৫২ জন। আর নেগেটিভ শনাক্ত হয়েছে ৬৬৯৬ জনের। সুস্থ হয়েছেন ১২৩৬ জন। মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ৩১ জন হয়েছে।