গোটা পৃথিবীর পর্যটকরা আর দার্জিলিঙে বেড়াতে যেতে পারবেন না৷অনির্দিষ্টকালের জন্য সেখানে জারি হয়েছে নিষেধাজ্ঞা৷
ভারতের শৈলশহর দার্জিলিং গোটা পৃথিবীর অন্যতম পর্যটনকেদ্র৷
প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ সেখানে ভিড় করেন৷
শুধু ভারত বা বাংলাদেশ নয়, সব দেশের লোকজন৷
তাঁদের কলকাকলিতে গমগম করে দার্জিলিং৷
সত্যি কথা বলতে কি, দার্জিলিঙের বাসিন্দারা সম্পূর্ণভাবে পর্যটকনির্ভর৷ কারণ, সমতল থেকে ৬হাজার ৭১০ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই শহরে সেভাবে না আছে কোনও শিল্প, না কৃষি৷
এমনকি, প্রাত্যহিক প্রয়োজনিয় জিনিসপত্রও তাঁদের বয়ে নিয়ে যেতে হয় উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি থেকে৷

তাঁদের আর্থিক অবস্থাও খুব একটা সচল নয়৷
তাই তাঁরা কান পেতে থাকেন পর্যটকদের পদশব্দের দিকে৷
কিন্তু, তাহলে হঠাৎ দার্জিলিঙে পর্যটকদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হল কেন? করলইবা কে?
না, এই নির্দেশ পশ্চিমবঙ্গ সরকার বা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নয়৷
এই কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জিটিএ অর্থাৎ Gorkha Teritorial Administration.
এটি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অর্ন্তগত একটি স্বায়ত্বশাসন কমিটি৷
তাঁরাই গোটা জেলা অর্থাৎ দার্জিলিং, কার্শিয়াং, মিরিক ও কালিম্পং (এখন আলাদা জেলা)-র ভালমন্দ দেখেন৷
জিটিএ প্রধান বিনয় তামাং জানিয়েছেন, আপাতত গোটা অঞ্চলে কোনও পর্যটককে ঢুকতে দেওয়া হবে না৷ এমনকি, এ’ব্যাপারে তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর কোনও আর্জিও শুনবেন না৷
সেইজন্য তাঁরা দার্জিলিঙে ঢোকার তিনটি রাস্তা অর্থাৎ পাঙ্খাবাড়ি রোড, সেবক রোড এবং রঙ্গিত নদীর উপরের সেতুটি বন্ধ করে দিয়েছেন৷
এর অর্থ, কেউ যাতে ৩১ ও ৫৫ নম্বর জাতীয় সড়ক এবং নেপাল দিয়ে প্রবেশ করতে না পারেন৷
একইসঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে দার্জিলিঙের ছোট-বড় ৩৫৪টি হোটেল৷
এখন প্রশ্ন হল, পর্যটকনির্ভর এমন একটি উল্লেখযোগ্য জায়গায় তাহলে পর্যটকদেরই ব্রাত্য করে দেওয়া হল কেন?
ইতিপূর্বে ৮০-র দশক থেকে বহুবার এই পাহাড়ী অঞ্চল বন্ধ হয়েছে৷ কিন্তু, তার পিছনে ছিল রাজনৈতিক কারণ৷ তখন পাহাড়ের মানুষ চেয়েছিলেন, গোটা এলাকাটিকে পৃথকভাবে “গোর্খাল্যান্ড” হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হোক৷
এই”গোর্খাল্যান্ড আন্দোলন”-এর ডাক প্রথম দেয় “গোর্খা ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট “৷ পরে, আন্দোলনের হাল ধরে ” গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা”৷
সেইসময় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্যে বারবার পাহাড়ের জনজীবন স্তব্ধ হয়ে যায়৷
ফলে, আন্দোলনের প্রতি সমর্থন থাকলেও, রুটি-রুজির টানে ক্রমশ জনরোষ তৈরি হতে থাকে৷
অথচ, আজ কিন্তু পাহাড়ের জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে জিটিএ-র এই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন৷
এর কারণ আর কিছুই নয়, অব্যর্থ মৃত্যুর হাত থেকে মুক্তি পাওয়া৷
তাঁরা সবাই চাইছেন, এই শৈলশহরটি যেন “করোনামুক্ত” থাকে৷
তাই কোনওধরণের পর্যটককেই সেখানে ঢুকতে দেওয়া হবে না৷
তবে, খুব ভালভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে, স্যানিটাইজ করে, পণ্যবাহী গাড়িগুলি ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে৷
জিটিএ-এ প্রধান বিনয় তামাং জানিয়েছেন, উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়িতে ভয়ঙ্করভাবে “করোনা” ছড়িয়ে পড়ায়, তাঁরা এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন৷
তবে, পাহাড়ের বাসিন্দাদের যাতে খাবারের অভাব না হয়, সেইজন্য তাঁরা রাজ্য ও কেনদ্রিয় সরকারের ঘোষিত নীতি অনুসারে প্রতি সপ্তাহে ৫ কিলো চাল, ৩ কিলো গম এবং ৫০০ গ্রাম ডালের সরবরাহ বজায় রাখতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন৷