তিনি বলেন, করোনা শুনলেই মৃত্যু ভয় পেয়ে বসে। কোনো মৃত্যুই কাম্য নয়। তবে আমাদের দেশে করোনায় মৃত্যুর হার কম, সুস্থতার হার অনেক বেশি। করোনার ভয়ে আতঙ্কিত হব কেন? ভয়কে জয় করতে হবে। মরার আগে মরব কেন?
এসময় কোনো ধরণের অনিয়ম-দুর্নীতি বরদাশত করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন প্রধানমন্ত্রী । তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর কে কোন দলের সেটা বড় কথা নয়। দুর্নীতি ও অনিয়মে জড়িতদের আমরা ধরে যাচ্ছি। তবে এদের ধরে যেন আমরাই চোর হয়ে যাচ্ছি। আমরা ধরার পর আমাদের দোষারোপ করা হয়। তবে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। এই অনিয়মগুলো আমরা নিশ্চয়ই মানবো না। যে যাই হোক তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি, নেবো এবং এটা অব্যাহত থাকবে।’
বৃহস্পতিবার এবারের সংক্ষিপ্ত বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার কথা বলেন। করোনা মোকাবিলায় সরকার ও তার দল আওয়ামী লীগের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।করোনাকালে স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি নিয়ে বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদেরের অভিযোগের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের চরিত্র নষ্ট করে দিয়ে গেছে ১৯৭৫ এর পরে যারা রাতের অন্ধকারে অস্ত্র হাতে নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল তারাই। কারণ অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে সেই ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য এরা মানুষকে দুর্নীতি শিখিয়েছে, কালো টাকা শিখিয়েছে, ঋণখেলাপি শিখিয়েছে। তারা এই সমাজটাকে কলুষিত করে গেছে। মানুষ আগে যে একটা আদর্শ নিয়ে চলতো, নীতি নিয়ে চলতো, দীর্ঘদিন এদেশে এই মিলিটারি ডিকটেটরশিপ এদেশের মানুষের চরিত্র হরণ করেছে। কারণ তাদের অবৈধ ক্ষমতাটাকে নিষ্কণ্টক করাই ছিল তাদের লক্ষ্য।
তারা বছরের পর বছর এই দুর্নীতির নিয়ম বীজ বপন করেছে। তা মহীরুহ হয়ে গেছে। যতই কাটেন, কোথা থেকে আবার গজিয়ে ওঠে। মানুষের চরিত্রটাই নষ্ট করে দিয়ে গেছে। এই চরিত্রহীনতা একেবারে ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত ছিল। সেখানে আপনি যতই চেষ্টা করেন, এর মূলোৎপাটন যথেষ্ট কঠিন। তারপরও এর মধ্যে যে খবরগুলো পাচ্ছেন এটা কারা করছেন? আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর কে কোন দলের সেটা বড় কথা নয়, এই ধরনের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, অনিয়মে জড়িত যাকে যেখানে পাচ্ছি আমরা ধরে যাচ্ছি। ধরছি বলেই যেন আমরা চোর হয়ে যাচ্ছি। আমরা ধরার পর আমাদের দোষারোপ করা হয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটাই হচ্ছে দুর্ভাগ্য। এর আগে তো দুর্নীতিটাই নীতি ছিল, অনিয়মটাই নিয়ম ছিল। সেভাবেই রাষ্ট্র চলেছে। কিন্তু আমরা আসার পর সেগুলো মোকাবিলা করার চেষ্টা করছি। যতটুকু পারি সেগুলো আমরা শুদ্ধ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। এই অনিয়মগুলো আমরা নিশ্চয়ই মানবো না।’
বাজেট নিয়ে অনেকের সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঘরে বসে বাজেটের সমালোচনা করা এটা অনেকেই করতে পারে। কিন্তু মাঠে গিয়ে কাজ করার মতো কয়জন আছে? বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক যারা তারাই শুধু এই কাজ করে। তারাই শুধু মাঠে গিয়ে কাজ করে। অনেক উন্নত দেশ বাজেট প্রণয়ন করতে পারেনি। কিন্তু আমরা করেছি। এজন্য অর্থমন্ত্রীসহ এর সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত ছিল তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।’
পরিবেশগত কারণে বাংলাদেশে বন্যা নিয়মিত ঘটনা হয়ে গেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘করোনা তো আছেই। এরই মধ্যে ঘূর্ণিঝড় গেলো। এখন এলো বন্যা। ইতোমধ্যে উত্তরাঞ্চলে কয়েকটি জেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। এই বন্যার পানি নেমে এলে দক্ষিণাঞ্চল প্লাবিত হবে। ইতোমধ্যে মধ্য অঞ্চলে বন্যা প্লাবিত হতে শুরু করেছে। কাজেই আমার জানা আছে কখন কোন এলাকায় বন্যা হয়। এজন্য আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। কোনও দুর্যোগ আসার পর যাতে ত্রাণের অপেক্ষা করতে না হয় তার জন্য আগাম ব্যবস্থা রেখে দিয়েছি। আমরা জেলায় জেলায় বরাদ্দ দিয়ে রেখেছি। দেশের প্রকৃত অবস্থা জেনেই ব্যবস্থা নেই মানুষকে সুরক্ষিত রাখতে। মানুষের কষ্ট যাতে কমাতে পারি সেদিকে লক্ষ রেখে পদক্ষেপগুলো নিয়ে থাকি।’
তিনি বলেন, ‘জিনিসের দাম যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে সেই ব্যবস্থা নিয়ে যাচ্ছি। যেভাবে হোক দেশের অর্থনীতি যেন গতিশীল থাকে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য দুই হাজার ডাক্তার ও পাঁচ হাজার নার্স নিয়োগ দিয়েছি। আরও দুই হাজার ডাক্তারের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। হেলথ টেকনোলজিস্ট ও অ্যাটেনডেন্ট পদে তিন হাজার পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। টেস্ট করার জন্য দক্ষ জনবল প্রয়োজন। তা পাওয়া খুবই কঠিন। অনেক প্রতিবন্ধকতা সহ্য করে মানুষের বাড়িতে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করতে হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে ঢুকতে দেওয়া হয়নি তাদের। প্রথমে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। পরে আস্তে আস্তে মানুষকে সচেতন করা হলে তারা এগিয়ে এসেছেন। যেসব টেকনিশিয়ান কাজ করেছে আমি নির্দেশ দিয়েছি। নীতিমালার কিছু সমস্যা আছে। বলেছি নীতিমালা বড় বিষয় নয়। যারা দুঃসময়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছে, তাদের সবাইকে আমাদের দেখতে হবে।’
অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী পাটকলগুলো বন্ধ করার কারণ ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, ‘পাটকলের শ্রমিকদের আমরা মোবাইলের মাধ্যমে বেতন দিয়ে দিলাম। ২৫ হাজার শ্রমিকের সঙ্গে আরও আছে অনিয়মিত শ্রমিক। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের বছরের পর বছর বেতন দিয়ে যেতে হবে। কিন্তু এভাবে একটি শিল্প চলতে পারে না। এই কারখানাগুলো সব থেকে পুরনো। সেই পঞ্চাশ-ষাটের দশকে তৈরি। এই শিল্পগুলো দিয়ে আসলে লাভ করা সম্ভব নয়। পাটের একটা উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রয়েছে। সেই জন্য আমরা চাচ্ছি এটাকে নতুনভাবে তৈরি করতে।’
তিনি বলেন, ‘পাট আমাদের অর্থকরী ফসল। আবার কৃষিপণ্য। আমরা পাটের জন্ম রহস্য আবিষ্কার করেছি। গবেষণা করে বিভিন্ন পাটজাত পণ্য আবিষ্কার করছি। পরিবেশগত কারণে সবাই সিনথেটিক পণ্য থেকে মুক্তি চায়। সেখানে পাট হচ্ছে বিকল্প। ফলে বিশ্বব্যাপী এ খাতে আমাদের বিশাল সম্ভাবনা রয়ে গেছে। কিন্তু এজন্য আমাদের কারখানাগুলোকে সময়োপযোগী করতে হবে। আধুনিক করতে হবে। নতুন করতে হবে। সেজন্য আমরা পাটের শ্রমিকদের মজুরির টাকাসহ সব পাওনা একবারে শোধ করে দেবো। এজন্য প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছি। তবে সব ক্যাশ টাকা দেবো না।
ক্যাশ টাকা দিলে মেয়ের জামাই, ভাতিজা-আত্মীয় স্বজন সকলে হুমড়ি খেয়ে পড়বে। ভাগ চাইবে। এজন্য আমরা অর্ধেকটা সঞ্চয়পত্র করে দেবো। যাতে তারা এখন মাসে যে বেতন পাচ্ছেন তার থেকে বেশি পাবে। আর আমরা এই কারখানাগুলো নতুনভাবে করবো। এখানে শ্রমিকদের মধ্যে আগ্রহীদের আমরা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবো। আধুনিক প্রযুক্তি অনুযায়ী তাদের তৈরি করবো। পাটকল চালু হলে তারা নতুনভাবে চাকরি পারে। পাট ও পাটজাত পণ্যের বিশ্ব বাজার ধরতে এই পদক্ষেপ নিচ্ছি।’