ইকরামুল হাসান–
নদী, চর, খাল, বিল, গজারির বন, টাঙ্গাইল শাড়ি তার গরবের ধন, এই বিখ্যাত প্রবাদ বাক্যের ছায়াতলেই টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার মহেড়া ইউনিয়নে দাঁড়িয়ে আছে এক অমূল্য ঐতিহাসিক স্থাপনা—মহেড়া জমিদার বাড়ি। ইউরোপীয় ধাঁচে নির্মিত এই দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্য আজও যেন আপন মহিমায় জানান দেয় জমিদারী আমলের গৌরবময় অতীতের কথা।
১৮৯০ সালে নির্মিত এ বাড়ির অলংকৃত বারান্দা, কারুকার্য খচিত দরজা-জানালা ও সুদৃশ্য প্রাসাদসম ভবন দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে।বর্তমানে এটি পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার হিসেবে পরিচালিত হলেও পর্যটকদের জন্য এটি উন্মুক্ত এক অনন্য দর্শনীয় স্থান।
এই ঐতিহাসিক নিদর্শনকে ঘিরেই এক ভিন্নধর্মী শিক্ষা সফরের আয়োজন করে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ। সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) বিভাগের ৮১ ও ৮২ ব্যাচের ৩০ জন শিক্ষার্থী সহপাঠ্য কার্যক্রমের অংশ হিসেবে মহেড়া জমিদার বাড়ি পরিদর্শনে অংশ নেন। সফরটি তত্ত্বাবধান করেন সহকারী অধ্যাপক শবনম জান্নাত, সঙ্গে ছিলেন প্রভাষক ফারিশতা সিদ্দিকী ও প্রভাষক সোহেল হোসেন।
শিক্ষার্থীরা সরেজমিনে ঘুরে দেখেন আনন্দ লজ, মহারাজ লজ ও চৌধুরী লজের শৈল্পিক স্থাপনা। প্রতিটি ভবন যেন অতীতের রাজকীয়তার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কারও চোখে লেগেছে স্থাপত্যের নান্দনিক সৌন্দর্য, আবার কারও কাছে এটি হয়ে উঠেছে ইতিহাসের জীবন্ত পাঠশালা।

শিক্ষা সফরটির উদ্দেশ্য সম্পর্কে সহকারী অধ্যাপক শবনম জান্নাত তার অভিব্যক্তি প্রকাশ করে বলেন, এই সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল বাস্তব অভিজ্ঞতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদেরকে সাংবাদিকতার নানা দিক অনুধাবন করানো। তিনি জানান, “ফিচার এন্ড ক্রিয়েটিভ রাইটিং কোর্সে ভ্রমণ ও ঐতিহাসিক স্থানকে কেন্দ্র করে ফিচার লেখার প্রক্রিয়া শেখানোর জন্যই আমি শিক্ষার্থীদের এখানে এনেছি। একই সঙ্গে ফটো জার্নালিজম কোর্সে তারা ছবি তুলে রিপোর্ট সাজাবে, আর এডিটিং কোর্সে ক্যাপশন রাইটিংয়ের অনুশীলন করবে।
শুধু পাঠ্যক্রম নয়, এই সফর শিক্ষার্থীদের কর্মজীবনের প্রস্তুতিতেও নতুন মাত্রা যোগ করেছে। শবনম জান্নাত আরও বলেন, “আজকের গরম আবহাওয়া ও প্রতিকূল পরিবেশে কাজ করার অভিজ্ঞতাও তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সাংবাদিকতার পেশায় প্রতিনিয়তই এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে।”
তবে শুধু ইতিবাচক দিক নয়, সফর শেষে তিনি কিছু সীমাবদ্ধতার কথাও উল্লেখ করেন। তার মতে, জমিদার আমলের ব্যবহৃত জিনিসপত্র, ছবি বা দলিলপত্র নিয়ে একটি জাদুঘর গড়ে তোলা গেলে এই স্থান আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠত।
শিক্ষার্থীরাও সফর শেষে জানান, ক্লাসরুমের গণ্ডি পেরিয়ে বাস্তব পরিবেশে সাংবাদিকতার অনুশীলন তাদের কাছে ছিল এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা। ইতিহাস, স্থাপত্য, প্রকৃতি ও শিক্ষা—সব মিলিয়ে এটি তাদের জন্য হয়ে উঠেছে এক স্মরণীয় ভ্রমণ।
মহেড়া জমিদার বাড়ি শুধু একটি প্রাসাদ নয়; এটি বাংলাদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও সংগ্রামের জীবন্ত প্রতীক। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্থাপত্যের দেয়ালে জমেছে ধুলো, তবে অতীতের স্মৃতিগুলো আজও উজ্জ্বল। আর সেই উজ্জ্বলতার সঙ্গে মিশে গেলো স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ঝাঁক তরুণ শিক্ষার্থীর নতুন শিখন ও অনুপ্রেরণার গল্প।
