মোঃ শামসুর রহমান তালুকদার –
টাঙ্গাইলে এবার পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। চলতি মৌসুমের শুরুতেই ‘সোনালি আঁশ’ পাটের দাম গত বছরের চেয়ে বেশি পাচ্ছেন কৃষকেরা। ভালো দাম পাওয়ায় খুশি জেলার পাট চাষিরা। বোরো ধানের চেয়ে এবার জেলায় পাটের আবাদ ভালো হয়েছে বলে চাষিরা জানিয়েছেন। কৃষি বিভাগ বলছে, পাট চাষিদের সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।
জানা যায়, জেলায় গত বছরের চেয়ে চলতি বছর পাটের আবাদ কমেছে। এবার পাটের আবাদ কমলেও অনুকূল আবহাওয়া, উন্নত বীজ এবং কৃষি বিভাগের সহায়তায় ভালো ফলন হয়েছে। গত বছর পানি সংকটের কারণে অনেক কৃষক পাট জাগ দিতে পারেননি। ফলে অনেকের পাট নষ্ট হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হন কৃষক। গত কয়েকদিন ধরে পাট কাটা, জাগ দেওয়া, পাটকাঠি থেকে পাট ছাড়ানো ও শুকানো নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন চাষিরা। পরিবারের অন্যরা এসব কাজে সহযোগিতা করছেন। বিশেষ করে নারীদের এ কাজে দেখা গেছে। এরই মধ্যে অনেকেই ভালো দামে বিক্রিও করছেন। বাজারে পাটের দামও ভালো পাওয়ায় তারা বেশ খুশি। পাটের বাম্পার ফলনে আশার আলো দেখছেন। তবে পাট কাটায় খরচ অনেক বেড়ে যাওয়া এবং জমিতে পানি কম থাকায় কৃষকেরা বেকাদায় পড়েছেন।
চাষিরা জানান, এবার প্রতি বিঘায় ৮ থেকে ৯ মণ পাটের ফলন হয়েছে। গত বছর প্রতি মণ পাট বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৫শ’ থেকে ২ হাজার ৭শ’ টাকায়। এবার সেই দাম দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ২শ’ টাকায়। গত বছর পাট চাষে লোকসান গুনতে হয়েছিল। চলতি মৌসুমে আবাদ ভালো হওয়ায় লাভবান হচ্ছেন। এতে তারা খুশি। বিশেষ করে গত বছরের চেয়ে এবার বাজারে পাটের দামও বেশি। বোরো ধানের চেয়ে এ বছর পাটের আবাদ ভালো হয়েছে।
কৃষি বিভাগ জানায়, গত বছর জেলায় ১৯ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছিল। চলতি মৌসুমে পাটের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৯ হাজার ৮১৮ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ১৮ হাজার ৩৬১ হেক্টর। পাটের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ১৭ হাজার ৩শ’ বেল। এবার দেশি, তোষা, কেনাফ, মেস্তা জাতের পাট আবাদ করা হয়েছে। এবার সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে ভূঞাপুর এবং সবচেয়ে কম আবাদ হয়েছে ধনবাড়ী উপজেলায়।
কৃষি বিভাগ জানায়, সদর উপজেলায় ৩ হাজার ৩৭৫ হেক্টর, বাসাইলে ৪৮০ হেক্টর, কালিহাতীতে ১ হাজার ১৭০ হেক্টর, ঘাটাইলে ৭৯০ হেক্টর, নাগরপুরে ১ হাজার ৮৬০ হেক্টর, মির্জাপুরে ১ হাজার ৩১৮ হেক্টর, মধুপুরে ১৬৩ হেক্টর, ভূঞাপুরে ৩ হাজার ৯১৫ হেক্টর, গোপালপুরে ৩ হাজার হেক্টর, সখীপুরে ২৭৫ হেক্টর, দেলদুয়ারে ১ হাজার ৯০৫ হেক্টর, ধনবাড়ীতে ১১০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে।
সদর উপজেলার কৃষক কাজিম উদ্দিন বলেন, ‘৪০ শতাংশ জমিতে এবার পাটের আবাদ করেছি। বাজারে দামও ভালো। এতে আমরা অনেক খুশি। প্রতি বিঘায় ৮ থেকে ৯ মণ পাট পাওয়া যাচ্ছে। গত বছর পাট কাটার আগেই নষ্ট হয়ে লোকসান হয়েছিল।’
আয়নাল হক নামের আরেক কৃষক বাংলাদেশ বুলেটিন কে বলেন, ‘আমি ৫০ শতাংশ জমিতে পাটের আবাদ করেছি। এতে আমার ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। আশা করছি ১৫ থেকে ১৬ মণ পাট পাবো। প্রায় ৬০ হাজার টাকায় পাটগুলো বিক্রি করতে পারবো। এ বছর বোরো ধানের চেয়ে পাটের আবাদ ভালো হয়েছে।’
কৃষক নূরনবী বাংলাদেশ বুলেটিন কে বলেন, ‘গত বছর আমাদের লোকসান হয়েছিল। এ বছর দাম বেশি হওয়ায় লাভবান হচ্ছি। যারা এবার পাটের আবাদ করেছেন; তারাই ভালো ফলন পাচ্ছেন এবং লাভবান হচ্ছেন। এবার পাট চাষে খরচও বেশি হচ্ছে। অনেক সময় পাট জাগ দেওয়ার জন্য পানিও ঠিকমতো পাওয়া যায় না।’
শ্রমিক আব্দুর রৌফ বলেন, ‘প্রতিদিন পাট ছাড়ানোর কাজ করছি। প্রতিদিন ৫শ’ টাকা পাচ্ছি।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তরের উপ-পরিচালক আশেক পারভেজ মুঠোফোনে বাংলাদেশ বুলেটিন কে বলেন, ‘টাঙ্গাইল জেলা পাট উৎপাদনে অন্যতম। বর্তমানে কৃষকেরা বাজারে পাটের দাম ভালো পাচ্ছেন। আমরা সরকারিভাবে পাট চাষিদের প্রণোদনা, বিনা মূল্যে বীজ বিতরণসহ বিভিন্ন সহযোগিতা করেছি। এ বছর পাটের উৎপাদন বাড়বে বলে আশা করছি।’