মো: শামসুর রহমান তালুকদার-
প্রকৃতির রূপ-সৌন্দর্য কাছ থেকে উপভোগ করতে সবাই দূর-দূরান্তে ছুটে যায়। চেনা সব পর্যটন কেন্দ্রের দিকে তাকাতে গিয়ে বাড়ির কাছেই দৃষ্টির অবহেলায় পড়ে থাকে কত না রূপের ডালা। এরকমই এক ডালা রূপসুধা নিয়ে দর্শনার্থীদের আনন্দ দিতে মুখিয়ে আছে টাঙ্গাইলের বাসুলিয়া।
টাঙ্গাইল জেলার বাসাইলে অবস্থিত বাসুলিয়ার অপরূপ সৌন্দর্য নজর কেড়েছে এ অঞ্চলের মানুষের। বাসুলিয়ার মনোরম সৌন্দর্যে তৃপ্ত ঘুরতে আসা মানুষ। যারা ছুটে আসছে দেশের বিভিন্ন জেলা ও অঞ্চল থেকে। চারদিকে বিস্তর পানি। এর মধ্যে মাথা তুলে ডালপালা ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে হিজলগাছ। পানির সঙ্গে গাছের মিতালিতে তৈরি হয়েছে এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। গাছের ফাঁকে নৌকায় ঘুরে বেড়ানোর আনন্দকে আরও বাড়িয়ে দেয় এই দৃশ্য।
টাঙ্গাইল শহর থেকে বাসুলিয়ার দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। টাঙ্গাইল থেকে বাসাইল, তারপর সখীপুর সড়ক ধরে তিন কিলোমিটার পেরোলেই বাসুলিয়া। সখীপুর যাওয়ার সময় ডান দিকে চোখে পড়ে এক বিশাল বিল, চাপড়া বিল। এর পূর্ব-দক্ষিণাংশে পানিতে দাঁড়িয়ে আছে হিজলগাছ, যেন পানিতে ভাসছে। সড়কে দাঁড়ালে দক্ষিণের জলরাশি ছুঁয়ে আসা মিষ্টি হাওয়া গা জুড়িয়ে দেয়।
প্রথম দিকে লোকজন এখানে দাঁড়িয়ে ঢাকার আশুলিয়া বাঁধের দক্ষিণে অনিন্দ্যসুন্দর জল-হাওয়ার সঙ্গে তুলনা করত এই স্থানকে। হয়তো তখন কেউ চাপড়া বিলের কিনারাকে বাসাইলে অবস্থিত বলে বাসুলিয়া বলে উল্লেখ করেছিলেন। সেখান থেকেই লোকমুখে স্থানটি বাসুলিয়া নামে পরিচিতি পায়।
পানিতে দাঁড়িয়ে থাকা হিজলগাছ নিয়ে রয়েছে বিস্তর প্রাচীন ইতিহাস। এসব গাছের জন্ম এখানে নয়। জনশ্রুতি অনুযায়ী, প্রাচীন যুগে আসাম রাজ্য থেকে ভেসে এসেছিল গাছগুলো। ইতোমধ্যেই এই বাসুলিয়া জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে। শুধু এলাকার লোকজন নয়, বিভিন্ন জেলা থেকেও দর্শনার্থীরা আসে এই বাসুলিয়ায়।
প্রতিদিন লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে এলাকাটি। মনোরম পরিবেশে কিছুটা সময় কাটাতে দর্শনার্থীরা ছুটে আসে পরিবার-পরিজন নিয়ে। নৌকায় উঠতে দর্শনার্থীদের লাইন দিতে হয়। ঈদ ও অন্যান্য পার্বণে উপচে পড়া ভিড় জমে।
বাসুলিয়ায় বেড়াতে আসা সৌন্দর্যপিপাসুরা জানান, বাড়ির পাশেই অপরূপ সৌন্দর্য। সময় পেলেই ছুটে আসেন তারা। মুক্ত বাতাস, অথৈ পানি আর হিজলগাছের সৌন্দর্য মনকে মাতিয়ে তোলে। নৌকায় চড়ে বেড়ানো, সন্ধ্যার প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য তাদের মুগ্ধ করে। সবচেয়ে বড় কথা- স্বল্প সময় ও অর্থ ব্যয়ে এই সৌন্দর্যসুধা উপভোগ করতে পারছেন সবাই।
দর্শনার্থীদের খাবারের চাহিদা পূরণে বসেছে অস্থায়ী দোকান। এছাড়া স্থায়ীভাবে রয়েছে কয়েকটি ফাস্ট ফুডের দোকানও। বাসুলিয়াকে আরও সৌন্দর্যমণ্ডিত করতে সড়কের বিভিন্ন স্থানে লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সড়ক ঘেঁষে রয়েছে বেঞ্চ ও মঞ্চ।
যদিও বাসুলিয়ায় বেড়ানোতে নিরাপত্তায় কোন সমস্যা নেই, তবে সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে এই এলাকা ছাড়তে দর্শনার্থীদের আহ্বান জানিয়েছে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন।
দর্শনার্থী গৃহিণী স্বপ্না খান বলেন, ছুটির দিনে পরিবারের সকলের সঙ্গে বাসুলিয়ার নয়নাভিরাম সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসেছি। এটা আমাদের টাঙ্গাইলবাসীর জন্য এক আশুলিয়া। একসময় আশুলিয়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথা লোকমুখে শুনেছি, আর এখন বাড়ির কাছে বাসুলিয়া। বড়ই সুন্দর- সম্মুখে শুধু পানি আর পানি। প্রায় প্রতি বর্ষায়ই আমরা টাঙ্গাইল থেকে একবার হলেও বাসুলিয়া বেড়াতে আসি। অনেক ভালো লাগে।’
