জাবি প্রতিনিধি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আল-বেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সিকদার মো. জুলকারনাইনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে তার অপসারণের দাবিতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন হলের শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (১১ মার্চ) বিকাল সাড়ে পাঁচটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে রাত নয়টার দিকে আল-বেরুনী হল সংলগ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী ইসলামনগর এলাকার সংযোগ সড়ক বন্ধ করে দেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, হলের প্রাধ্যক্ষ নিয়মিত হলে আসেন না। ফলে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে স্বাক্ষর নিতে প্রাধ্যক্ষের বাসায় ও বিভাগে যেতে হয়। তার দায়িত্বে অবহেলার কারণে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। এছাড়া দীর্ঘদিন হলের ক্যান্টিন বন্ধ থাকলেও তিনি সেটি চালু করার বিষয়ে উদ্যোগ নেননি। এতে প্রায় দুই মাস পার্শ্ববর্তী ইসলামনগর বাজার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় গিয়ে খাবার খেতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, ‘হলের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে প্রাধ্যক্ষকে একাধিকবার অবগত করা হলেও তিনি ব্যবস্থা নেন না। এছাড়া বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে তার বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মসহ উত্থাপিত নানা অভিযোগের পর তিনি প্রাধ্যক্ষ পদে থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন।’
এদিকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলতে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক বশির আহমেদ, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ আলমগীর কবীরসহ প্রশাসনপন্থী কয়েকজন শিক্ষক।
তারা শিক্ষার্থীদের জানান, ‘আল-বেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সিকদার মো. জুলকারনাইনের বিষয়টি সিন্ডিকেট সভায় তোলা হয়। তবে সিন্ডিকেট সদস্যরা তাকে প্রাধ্যক্ষ পদ থেকে অপসারণের বিষয়ে মতামত দেননি।’ এ সময় তারা সমস্যা সমাধানে শিক্ষার্থীদের কাছে কিছুদিন সময় চান। তখন উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলার দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। তখন শিক্ষকরা আবারও উপাচার্যের বাসভবনে ঢুকে যান।
এরপর রাত আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমসহ ওই শিক্ষকরা আবারও শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলতে আসেন। তখন উপাচার্য প্রাধ্যক্ষকে অপসারণসহ সকল সমস্যা সমাধানে তদন্ত কমিটি করার ঘোষণা দেন। তবে শিক্ষার্থীরা সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আজকের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার দাবি জানান। এ সময় সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক বশির আহমেদের একটি মন্তব্যের প্রেক্ষিতে তার সঙ্গেও বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন শিক্ষার্থীরা। পরে উপাচার্যসহ অন্য শিক্ষকরা বাসভবনে ঢুকে যান। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা হলের সামনে অবস্থান নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী ইসলামনগর এলাকার সংযোগ সড়ক বন্ধ করে দেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম ও প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসানের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এর আগে, গত সোমবার আল-বেরুনী হলের অফিস কক্ষের সামনে প্রাধ্যক্ষের অপসারণ দাবিতে মানববন্ধন করেন হলের শিক্ষার্থীরা। এ সময় ৪৮ ঘন্টার মধ্যে হলের প্রাধ্যক্ষকে অপসারণের দাবি জানান তারা। পরে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেন শিক্ষার্থীরা। স্মারকলিপিতে হল প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নিয়মিত হলে না আসা, ক্যান্টিন চালু করতে দৃশ্যমান পদক্ষেপ না নেওয়া, হলের সামনের সড়ক সংস্কার ও হলের সংস্কার কাজ শেষ না করাসহ নানা অনিয়ম ও দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগের বিষয় উল্লেখ করা হয়।
এরপর গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে উপস্থিত হয়ে প্রাধ্যক্ষের অপসারণের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। তখন শিক্ষার্থীদের রবিবারের মধ্যে হলের প্রাধ্যক্ষকে অপসারণ করে নতুন কাউকে দায়িত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন উপাচার্য। তারপরও প্রাধ্যক্ষকে অপসারণ না করায় গতকাল রবিবার রাতে আবারও উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। তখন প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক নিগার সুলতানা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আজ সোমবার বিকাল চারটা পর্যন্ত সময় নেন। তবুও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
বা বু ম/ এস আর