স্পোর্টস ডেস্ক-
বড়দের ক্রিকেটে বাংলাদেশের সাফল্য না থাকলেও ছোটদের টুর্নামেন্টে রয়েছে। ২০২০ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশের যুবারা। এবার অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপেও চ্যাম্পিয়ন হলো বাংলাদেশ।
২০১৯ সালে প্রথমবার এশিয়া মহাদেশের শ্রেষ্ঠত্বের ফাইনালে উঠলেও ভারতের কাছে শেষ মুহূর্তে ৫ রানে হেরে স্বপ্ন ভঙ্গ হয় বাংলাদেশের। এবার সেই ভারতকে হারিয়েই দ্বিতীয়বার ফাইনালে উঠে মাহফুজুর রহমান রাব্বির দল। ফাইনালে স্বাগতিক সংযুক্ত আরব আমিরাতকে একদম উড়িয়ে দিয়ে শিরোপা উল্লাস করেছেন বাংলাদেশের যুবারা।
দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আরব আমিরাতকে ১৯৫ রানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হলো বাংলাদেশ। শিরোপা জয়ের মঞ্চটা প্রস্তুত করে দিয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। বিশেষ করে টুর্নামেন্টে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি হাঁকানো আশিকুর রহমান শিবলি। এবারের টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ ৩৭৮ রানের মালিকও তিনি।
আরব আমিরাতকে জিততে হলে ২৮৩ রান করতে হতো। জেতা তো দূরের কথা অর্ধেক রানও করতে পারেনি স্বাগতিকেরা। রানা তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই একের পর এক উইকেট হারাতে থাকে রানার্সআপরা। বাংলাদেশকে প্রথম উইকেট এনে দেন মারুফ মৃধা। দলীয় ১২ রানের সময় আরিয়ানশ শর্মাকে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন এই পেসার।
এরপর প্রতিপক্ষের রান ৫০ হওয়ার আগেই ৫ উইকেট তুলে নেন বাংলাদেশের যুবারা। এ সময় প্রতিপক্ষকে একাই ধসিয়ে দেন রোহানাত দৌল্লা বর্ষণ। পরের ৪ উইকেটের ৩টিই নেন এই পেসার। তাঁর দেখানো পথে বাকি বোলাররাও উইকেট উদ্যাপন শুরু করেন। এতে করে ৮৭ রানে অলআউট হয় আরব আমিরাত।
এই রানও করতে পারত না আরব আমিরাত যদি না চারে নেমে এক প্রান্ত আগলে রেখে ধ্রুব পরাশর না খেলতেন। সতীর্থরা যখন আসা-যাওয়ার মিছিলে ছিলেন তখন ধৈর্য ধরে দলের পরাজয় কমানোর চেষ্টা করছিলেন তিনি। তাঁর ব্যাটিং দৃঢ়তা মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষাটা বাড়িয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশের একাদশের বাইরে থাকা খেলোয়াড়দের। কেননা, বিজয়ের মাসে বিজয় উল্লাসে মাতোয়ারা হতে বাংলাদেশের পতাকা হাতে নিয়ে অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছিলেন খেলোয়াড়েরা।
ধ্রুবকে অবশ্য আউট করতে না পারেনি বাংলাদেশি বোলাররা। ২৫ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। তাঁকে না পারলেও অমিদ রেহমানকে আউট করে বাংলাদেশকে শিরোপা উদ্যাপনের মুহূর্ত এনে দেন শেখ পারভেজ জীবন। বাংলাদেশের হয়ে ৩টি করে উইকেট নেন মারুফ ও বর্ষণ।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ২৮২ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। শুরুটা অবশ্য ভালো ছিল না বাংলাদেশের। ১৪ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ব্যক্তিগত ৭ রানে আউট হন জিশান আলম। জিশান ফিরলেও বাংলাদেশকে দ্রুত ম্যাচে ফেরান আরেক ওপেনার শিবলি। চৌধুরী মোহাম্মদ রিজওয়ানকে নিয়ে শুধু দলের হালই ধরেননি দ্রুত রানও তোলেন শিবলি।
দ্বিতীয় উইকেটে দুজনে মিলে ১২৫ রান যোগ করেন শিবলি-রিজওয়ান। রিজওয়ান ফিফটি করে ৬০ রানে ফিরলেও সেঞ্চুরি করেছেন শিবলি। টুর্নামেন্টে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করার পথে আরিফুল ইসলামকে নিয়ে তৃতীয় উইকেটে ৮৬ রানের জুটিও গড়েন তিনি। কাঁটায় কাঁটায় ফিফটি করে আরিফুল আউট হলে একের পর এক উইকেট হারাতে থাকে বাংলাদেশ।
তবে এক প্রান্ত আগলে রেখে দলকে ৮ উইকেটে ২৮২ রান এনে দেন শিবলি। সপ্তম ব্যাটারে হিসেবে আউট হওয়ার আগে ১৪৯ বলে ১২৯ রানের ইনিংস খেলেছেন তিনি। তাঁর দুর্দান্ত ইনিংসটি ১২ চার ও ১ ছক্কায় সাজানো।বলে ৫০ রানের ঝকঝকে ইনিংস উপহার দেন এই ব্যাটার। এরপর দ্রুতই ফেরেন আহরার আমিন ও মোহাম্মদ শিহাব জেমস। তবে আরেক পাশে ঠিকই চালিয়ে খেলে যাচ্ছিলেন শিবলি। সাতে নেমে ১১ বলে ২১ রানের কার্যকরী ইনিংস খেলেন অধিনায়ক মাহফুজুর রহমান রাব্বি। ২৭৯ রানের মাথায় ষষ্ঠ ব্যাটার হিসেবে রাব্বির বিদায়ের পর ২৮২ রানের মাথায় ফেরেন শিবলিও। তবে ততক্ষণে খেলে ফেলেছেন ১২৯ রানের অসাধারণ এক ইনিংস। ১৪৯ বলে ১২টি চার ও ১ ছক্কায় নিজের ইনিংস সাজান শিবলী। শেষ পর্যন্ত আরও এক উইকেট হারিয়ে ২৮২ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস।
আরব আমিরাতের হয়ে বল হাতে সবচেয়ে সফল ছিলেন ডানহাতি পেসার আয়মান আহমেদ। ১০ ওভার বল করে ৫২ রানের বিনিময়ে ৪ উইকেট নেন তিনি। ওমিদ রেহমানও খারাপ করেননি। ১০ ওভারে মাত্র ৪১ রান দিয়ে তার শিকার ২ উইকেট।