স্পোর্টস ডেস্ক
বাংলাদেশের সামনে ইতিহাসের হাতছানি ছিল। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টেস্ট জয়ের খুব কাছে থেকে ফিরে এলো টাইগাররা। দুই ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে ব্যাটিং ব্যর্থতায় ১৩৭ রানের লক্ষ্য দিয়েও বোলারদের দাপটে দারুণ লড়াই করল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে ৬৯ রানের মধ্যে নিউজিল্যান্ডের ৬ উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ বোলাররা। তবে সপ্তম উইকেট জুটিতে গ্লেন ফিলিপস ও মিচেল স্যান্টনারের ওয়ানডে ঘরানার ব্যাটিং কিউইদের জয় পাইয়ে দেয়। মূলত এই জুটির কাছেই হেরে গেছে বাংলাদেশ। ৪ উইকেটে হেরে সিরিজে ১-১ ব্যবধানে শেষ করল।
টেস্টে এই লক্ষ্যমাত্রা খুবই মামুলি হওয়ার কথা। তবে মিরপুর শের-ই-বাংলার পিচে যেভাবে স্পিন ধরছে তাতে সেটিকেও মনে হয়েছে চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য। সেটা নিউজিল্যান্ডও টের পায় হারে হারে। যেখানে মাত্র ৬৯ রান তুলতেই তারা হারায় ৬ উইকেট।
১৩৭ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে দলীয় ৫ রানেই ডেভন কনওয়েকে হারায় নিউজিল্যান্ড। এই ওপেনারকে এলবিডাব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন শরীফুল ইসলাম। ২৪ রানের মাথায় দলটির নির্ভরযোগ্য ব্যাটার কেন উইলিয়ামসন তাইজুল ইসলামের বলে স্টাম্পড হয়ে প্যাভিলিয়েনের পথ ধরেন। সিরিজে অফফর্ম বজায় রেখে ৩৩ রানে ফেরেন হেনরি নিকোলসও। এবার উইকেট শিকারের মিছিলে যোগ দেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
দলীয় ৪৮ রানে এই মিরাজই ফেরান একপ্রান্ত আগলে পড়ে থাকা টম ল্যাথামকে (২৬)। দলের সঙ্গে আর ৩ রান যোগ হতেই টম ব্লান্ডেলকে ফেরান তাইজুল। এরপর দলীয় ৬৯ রানে রিভিউ নিয়ে মিচেলকে শিকারে পরিণত করেন মিরাজ।
তবে এরপরই আগের ইনিংসে বিধ্বংসী ব্যাটার গ্লেন ফিলিপস আটে নামা মিচেল স্যান্টনারকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। শূন্য রানে বেঁচে যাওয়া ফিলিপস ৪৮ বলে এক ছক্কা ও চারটি চারে করেন ৪০ রান। ৭৭ বলে ৭০ রানের জুটি উপহার দেওয়া স্যান্টনার ৩৯ বলে তিন চার ও এক ছক্কায় করেন ৩৫ রান।
বাংলাদেশ বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট পান মিরাজ। তাইজুল ২টি ও শরিফুল একটি উইকেট দখল করেন।
মিরপুরে চলমান এই টেস্টের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ১৭২ রানের জবাবে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৮০ রানে অলআউট হয় নিউজিল্যান্ড। প্রথম ইনিংসে ৮ রানের লিড পায় কিউইরা। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ ১৪৪ রানে অলআউট হওয়ায় তাদের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৩৭ রানের।
এর আগে চতুর্থ দিনের সকালে ৭১ রানের রানের মাথায় মুমিনুলকে এলবিডাব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন এজাজ প্যাটেল। ৮২ রানের মাথায় ড্যারিয়েল মিচেলকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মুশফিক। দলের সঙ্গে আর ৬ রান যোগ হতেই ফেরেন মাত্রই দলে ডাক পাওয়া শাহাদাত হোসেন দীপু। এরপর ৯৭ রানের মাথায় একই ওভারে মিরাজ ও সোহানকে ফেরান এজাজ। ১১২ রানের মাথায় নাইম ফেরেন স্যান্টনারের বলে।
অন্য প্রান্তে একের পর এক উইকেটের পতন দেখলেও নিজের প্রান্তে উইকেট আগলে পড়ে ছিলেন ওপেনার জাকির হাসান। ১২৮ রানের মাথায় এজাজের বল তেড়েফুঁড়ে খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে বসেন তিনি। তবে এরই মধ্যে নিজের ব্যক্তিগত অর্ধশতক তুলে নেন তিনি। ৮৬ বলে ৬টি চার ও ১ ছক্কায় ৫৯ রানের ইনিংস খেলেন জাকির। বাংলাদেশের লিড ১৩০ ছাড়ায় শেষের দুই ব্যাটার তাইজুল ইসলাম ও শরীফুল ইসলামের কল্যাণে। শেষ উইকেটে ১৬ রান যোগ করেন তারা। তবে এজাজের বলেই শরীফুল স্ট্যাম্পিং হলে ১৪৪ রানে শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস।
বাংলাদেশের ইনিংসকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করার কারিগর কিউই বাঁহাতি স্পিনার এজাজ প্যাটেল। আগের দিনের ১ উইকেট ও আজকের ৫ উইকেট; ইনিংসে মোট ৬ উইকেট তুলে নিলেন তিনি। বাকি ৪ উইকেটের ৩টি মিচেল স্যান্টনারের, একটি টিম সাউদির।
এর আগে টেস্টের প্রথমদিনে কিউই স্পিনারদের তোপে ১৭২ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। প্রথমদিনেই জবাব দিতে নেমে বিপর্যয়ে পড়ে নিউজিল্যান্ড। তাইজুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান মিরাজের তোপে ৫৫ রান তুলতেই ৫ উইকেট হারিয়ে দিন শেষ করে কিউইরা। দ্বিতীয় দিন বৃষ্টির কারণে একটি বলও মাঠে গড়ায়নি।
তৃতীয় দিনও নির্ধারিত সময়ে খেলা শুরু করা যায়নি। দুপুর ১২টায় আগের দিনের ৫ উইকেটে ৫৫ রান নিয়ে এদিন খেলা শুরু করে নিউজিল্যান্ড। এদিন অন্য কোনো ব্যাটার থিতু হতে না পারলেও একপাশে থেকে বাংলাদেশের বোলারদের তুলোধুনো করেন গ্লেন ফিলিপস। তার ৭২ বলে ৯টি চার ও ৪ ছক্কায় ৮৭ রানের ইনিংসেই ১৮০ রান তোলে কিউইরা। জবাব দিতে নেমে ওইদিন ২ উইকেট হারিয়ে ৩৮ রান তুলে দিন শেষ করে বাংলাদেশ।
ম্যান অফ দ্যা সিরিজ হয়েছেন তাইজুল ইসলাম এবং ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ গ্লেন ফিলিপস।এবং সর্বশেষে দুই দলের খেলয়ারেরা নিজেদের মধ্যে ট্রফি ভাগাভাগি করে নেন।